somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ মৃত্যু

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোর ছ'টা বাজে । পরিবেশ শুনশান হয়ে আছে । কাক-পক্ষ্মীটিরও আজ খবর নেই । মোরগটাও আজ ডাকছে না । আমি মুখ থুবড়ে পড়ে আছি রাস্তার পাশে । আমাকে দেখার মতো কেউ-ই নেই আজ । রাস্তার পাশ দিয়ে চলে যায় কুকুরটা । আমার আজ আর ভয় করছে না কুকুরটাকে । এদিকে আসলে যে কুকুরটাকে আমি ভয় পেতাম, আজ সেই কুকুরটাই আমার রক্তাক্ত চেহারা দেখে ভয় পাচ্ছে ।
আজ আমার বিয়ে । আমি আসছি নিজের বিয়ের কিছু কেনাকাটা করতে । তাই অনেক খুশি নিয়েই বের হয়েছি বাসা থেকে । আমার হাতে একটা আশির্বাদ পড়ানো । রুদ্রশী পড়িয়েছিলো এই দু'দিন হলো ।
একটু আগেই একটা ট্রাক আমাকে ধাক্কা মেরে চলে গেলো । কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা আমার উপর দিয়েই চলে গেলো । আমার গাড়ের উপর থেকে মাথাটা আলগা হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে । রক্ত গড়গড়িয়ে পড়ছে । আমি একসময় রক্ত অনেক ভয় পেতাম । রক্ত দেখলেই গা শিউরে উঠতো । রক্ত দেখলে ভাবতাম, একটা সুস্থ্য মানুষের শরীর থেকে এভাবে রক্ত বের হলে সে তো আর বাঁচবে না । বিধির কি লীলা, আমি আজ সেই রক্তমাখা হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছি ।
অন্যদিন এই পথ দিয়েই বখাটেরা হেঁটে যায় গাঁয়ের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের নানাভাবে উক্তক্ত্য করে আসে । কিন্তু আজ সেই বখাটেদের কেউ-ই আসছে না ।
আমি পড়ে আছি মসজিদের কিছুটা পাশেই । আমি যে রাস্তায় পড়ে আছি সেই রাস্তা দিয়েই সকল নামাজি মুসল্লি'রা যায় । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, আজ সবাই আসছে কিন্তু কারো চোখে আমি পড়ছি না । কুকুরটা অনেক ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । তবে আমার থেকে অনেকটা দূরে । আমার রক্ত গলগল করে গড়িয়ে পড়ছে । চোখ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে । মনে হচ্ছে গাড় থেকে একটু একটু করে ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার মাথাটা । ভিষণ যন্ত্রণা অনুভব করছি । হয়তো কোনো একসময় কারো ক্ষতি করেছিলাম সেজন্যেই এত কষ্ট পাচ্ছি ।
গাড়ের উপর কেউ যেন দাড়ালো ছুরি দিয়ে কাটছে । রক্ত এতটা গতিতেই পড়ছে যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তা রক্তে মাখামাখি হয়ে গেলো । আমি আমার রক্ত দেখতে ভাবতে পারছি না যে, আমার শরীরে এত রক্ত আসলো কোথা থেকে । নাকি গলা কাটার পর রক্ত বেড়ে গেলো?
আমার চোখ দিয়ে আরো কিছু দেখতে পারছি না । ঝাপসা হয়ে এলো, আর ইচ্ছে করেও চোখ খুলে রাখতে পারছি না ।
মাথাটা পড়ে গেলো, এখন আমার গাড় থেকে মাথাটা বেশি হলে ৪ আঙুল দূরে । আমার দিকে উলটো হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমার চোখসহ মাথাটা । আমি মাথাটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি, "ওর শরীর কোথায়?" আর আমার মাথাটা আমার শরীরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, "ওর শরীর কোথায়?"
এতদিন নিজের মুখ আয়নায় দেখেছি, আর আজ নিজের মাথাটা দিয়ে নিজের পুরো শরীর দেখছি । আসলেই ব্যাপারটা কেমন জানি!!
চোখ বন্ধ হয়ে গেলো, সাথে আমি হারালাম আমার আত্মীয়স্বজনদের, হারালাম আমার রুদ্রশী'কে । আজ ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু বিধির কি নির্মম পরিহাস । আমাদের এক হতে দিলেন না । গায়ে হলুদ মাখার বদলে রক্ত দিয়ে মাখামাখি হলাম ।
আমি এখন আমার দেহ থেকে বাহিরে আছি । আছি অপেক্ষায় আমার লাশ নেওয়ার লোকদের । কিন্তু কেউ-ই আসছে না । আমার বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে । আমি কী তাইলে পৃথিবীতে এতটাই মূল্যহীন ছিলাম? জন্ম নেওয়া তাহলে আমার জন্য ভুল ছিল? আত্মা হয়ে এই কথাগুলো ভাবছি ।
ভাবছি আর ভাবছি । হঠাৎ মনে হলো বাসার কথা । মনে হলো আমার মা বাবা আর রুদ্রশীর কথা । সবাই গম্ভীরভাবে ভাবছেন, "আমি এখনো আসছি না কেন?"
আমার পথ চেয়ে সবাই বসে আছেন । একে একে সবাই আসলো আমার লাশের পাশে । এসে লাশটা নিয়ে গেলেন । রুদ্রশী আমার দূর্ঘটনার কথা জানার পর চুপ হয়ে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো দেয়ালের এক পাশে । কোনো কথা নেই ওর মুখে ।
আমি এখন ভাসছি । একটু আগেই গাড়ে হাত দিলাম, ওমা আমার মাথা দেখি ঠিকই আমার গাড়ের উপর আছে, কিন্তু আমিই শুধু পৃথিবীতে নেই । ছোটোবেলা ভাবতাম, "যদি আমি পাখির মতো উড়তে পারতাম, তাহলে কতোই না ভালো হতো । এখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে সেখানে উড়তাম পাখা মেলে আর ঘুরতাম মন খুলে ।"
কিন্তু আজ পাখি হয়ে না ঘুরলেও অতৃপ্ত আত্মা হয়ে ঘুরতেছি ।
আমি রুদ্রশী কে কথা দিয়েছিলাম, "ওর পাশে সারাজীবন থাকবো ছায়া হয়ে ।" কিন্তু সেই কথাটা যে এভাবে সত্যি হবে তা আগে ভাবিনি । এখন আমি আমার কথাটা রাখছি । ওর সাথে ছায়া হয়েই আছি কিন্তু ওকে বুঝতে দিচ্ছি না । ও সেদিনের পর থেকে এখনো কিছু খায়নি । চোখ মুখ কালো হয়ে গেছে । ওকে দেখে মনে হচ্ছে, জীবিত থেকেও মৃত হয়ে আছে । শুধু ওর চোখের পাতাটা নড়ছে এটা দেখেই দেখা যাচ্ছে ও বেঁচে আছে ।
আমি প্রত্যেকদিনের মতো আজও ওর পাশে থাকার জন্য ওর কাছে যেতেই ওকে পেলাম না সেখানে, যেখানে এতদিন বসে ছিলো । কানে শুনতে পেলাম বাড়ির উঠোনে সবাই বসে কাঁদছে, আর সাদা কাপড়ের নিচে শুয়ে আছে রুদ্রশী । এই ঘন্টাখানেক আগেই সে গলায় দড়ি দিয়েছে । একটু পরেই বুঝতে পারলাম আমার গাড়ে কারো হাতের স্পর্শ । পিছন ফিরতে আমাকে আর অবাক হতে হলো না, আমার সেই বাবুটাই, "রুদ্রশী"..
-
রাজু দাশ রুদ্র
১৩/০৭/২০১৮ খ্রি.
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×