somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অন্যরকম ভালোবাসার গল্প।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


—এক ছিল রাজা।তার ছিল....
—না আম্মু প্রতিদিন একি গল্প শুনতে ভাল লাগে না।
—তাহলে আমার লক্ষী মেয়েটা আজ কি গল্প শুনতে চায়?
—উমম অন্য কোন গল্প।তোমার আর বাবার গল্প।বাবা আর তোমার কিভাবে দেখা হয়েছিল সেই গল্প বলো না?
—ওরে বাবা আমার ছোট্ট মেয়েটা দেখি অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।শোন মামনি আজ তো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে আরেক দিন বলব গল্পটা কেমন।এখন তুমি ঘুমাও গুড নাইট।
এই কথা বলে ৭ বছরের মেয়ে পর্ণার কপালে একটা চুমু খেল বীনা।তারপর লাইট অফ করে বারান্দায় এসে বসল সে।তার স্বামী স্বপন এখনো বাড়ি আসেনি।আকাশের দিকে তাকিয়ে অতীত জীবনের কথা ভাবতে লাগল বীনা।ভাবতে লাগল স্বপনের কথা।তার সাথে তার প্রেমের কথা।সহজ ছিল না তাদের প্রেম আর পথচলা।

খুবই রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে ছিল বীনা।তারা থাকত গ্রামের বাড়িতে।বীনার এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর সপরিবারে ঢাকায় চলে আসে তারা।পুরান ঢাকার এক ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করে।সেইখানেই সে দেখতে পায় স্বপনকে।তাদের এলাকায় থাকে স্বপন।প্রায় বীনা ভার্সিটি গেলে তার দিকে তাকিয়ে থাকত সে।বীনা প্রথম প্রথম খুব ভয় পেত।ভাবত ছেলেটা একদিন হয়ত পথ আগলে দাঁড়াবে।আজে বাজে প্রস্তাব দিবে।কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু করেনি স্বপন।কিন্তু স্বপন এমন কিছু না করলেও এলাকার কিছু বখাটে ছেলে খুব খারাপভাবে একদিন টিজ করল বীনাকে।কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে আসল সে।কিন্তু এই ছেলেগুলাই পরেরদিন এসে বীনার কাছে আগের দিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইল।খুব অবাক হয়ে গেল বীনা।সে তার বাসায় ৫ তলায় থাকা মিতালি নামের মেয়েটিকে সব খুলে বলল, সব শুনে মেয়েটি বলল, "এইটা নিশ্চয় স্বপন ভাইয়ের কাজ।স্বপন ভাই আমাদের এলাকার সবার থেকে সিনিয়র।পাড়ার অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সব কিছুর আয়োজক সে।এই এলাকার সব খারাপ ছেলে ভয় পায় স্বপন ভাইকে।" মিতালির মুখে এইসব শুনে স্বপন কে ভাল লাগতে শুরু করল বীনার।তাকে বখাটের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি লিখল সে।তারপর মিতালির হাতে দিল সে চিঠিটা স্বপন কে দেওয়ার জন্যে।১ দিন পরেই মিতালির হাতে স্বপন একটা চিঠি দিল বীনাকে।রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে বীনা কখনো মোবাইল ফোন পায়নি।তাদের কথা হত চিঠিতেই।তাদের ভালবাসার প্রকাশ ছিল কবিতা দিয়ে।তারা হয়ত ভালবাসা দিবসে ফুচকা খেতে যেত পারত না বা রমনা পার্ক এ বসে দুইজন দুইজনের হাতে হাত রাখতে পারত না কিন্তু তাদের দেখা হত চোখে চোখে।এই চোখ দুটো দিয়েই তারা করত আশা।বুনত একসাথে ঘর বাধার স্বপ্ন।প্রচন্ড ভালবাসত তারা দুইজন দুইজনকে।কিন্তু তাদের এই ভালবাসার মাঝখানে বাধা হয়ে দাড়ালো পরিবার।বীনার বাবা সব কিছু টের পেয়ে বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করল বীনার।বিয়ে দিতে চাইলো জোর করে।কিন্তু স্বপন এর ভালবাসার জোরে বীনা রুখে দাড়ালো তার বাবার বিরুদ্ধে।বাবার আনা বিয়ের প্রস্তাব একটার পর একটা প্রত্যাখান করতে লাগল সে।শেষমেষ না পেরে বীনার বাবা স্বপন কে মেনে নেওয়ার ঘোষনা দিলেন কিন্তু শর্ত দিলেন ১ বছরের মধ্যে স্বপন কে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে আর ততদিন বীনার সাথে তার কোন রকম যোগাযোগ করা চলবে না।বীনা আর স্বপন দুইজনি মেনে নিল এই শর্ত।শুরু হল দুইজনের প্রতিক্ষার প্রহর।প্রতিদিন রাতে স্বপন কে মনে করে বীনা ফেলত চোখের জল আর স্বপন বীনার ভালবাসার কথা মনে করে খুজে বেড়াতে লাগল ভাল চাকুরি।

শেষমেষ ভালবাসার পরীক্ষা শেষ হল তাদের।বিয়ে হয়ে গেল স্বপন আর বীনার।পূর্নতা পেল তাদের ভালবাসা।

কলিংবেল এর শব্দে বাস্তবে ফিরে এল বীনা।দরজা খুলেই দেখতে পেল স্বপনকে।আর বীনার হাসিমাখা মুখটা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেল স্বপনের।খাওয়ার সময় পরম ভালবাসায় আগে বীনার মুখে খাবার তুলে দিল স্বপন।মনে মনে বলল,আহারে সারাদিন কত কাজ করে তার বউটা।তারা হয়ত রেস্টুরেন্টে বসে ক্যান্ডিলাইট ডিনার করতে পারে না।কিন্তু সারাদিন পরিশ্রম করার পরে তারা যখন ভালবাসা দিয়ে দুইজনকে এভাবে খাইয়ে দেয় তখন তা দামী রেস্টুরেন্টের খাওয়ার সুখের থেকেও অনেক বেশী সুখের মনে হয়।খাওয়ার পরে পাটি বিছিয়ে বারান্দায় বসে বীনা আর স্বপন।গল্প করতে থাকে দুইজন। সংসারের গল্প।তাদের প্রাত্যহিক জীবনের গল্প।রাত শেষ হয়ে যায় তাদের গল্প শেষ হয়না।একসময় ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে বীনার।স্বামীর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সে।আর স্বপন চাঁদের আলোয় দেখতে থাকে তার ঘুমন্ত বউয়ের মুখটি।কপালে চুমু দিয়ে নিজেও হারিয়ে যায় ঘুমের দেশে।
আকাশের তারাগুলো উপর থেকে দেখতে থাকে স্নিগ্ধ পবিত্র এই দুই নর নারীকে।যারা মুখে ভালবাসি না বললেও হ্রিদয় দিয়ে বুঝিয়ে দেয় যে তারা দুইজন দুইজনকে কতখানি ভালবাসে।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×