---চা খাবেন?
—কে আপনি?
—একটা পাগল।
—মানে?
—যে ফোন করে হ্যালো না বলে সরাসরি চা খেতে বলে সে তো পাগলই তাই না?
—হুম তো মি.পাগল পাগলা গারদে ফোন না দিয়ে আমাকে ফোন দিলেন কেন?
—কি বলছেন? পাগলের জন্য পুরো পৃথিবী একটা পাগলা গারদ।
—হিঃ হিঃ জানতাম না তো।
—হুম এখন জেনে রাখুন যদি কখনো পাগলের ডাক্তার হন তখন কাজে লাগবে।
—তা ভাল বলেছেন।এবার বলেন আপনি কে? দাঁড়ান দাঁড়ান আপনি কি সেই বিখ্যাত গায়ক আবীর আহমেদ।যার সাথে আমার আজ কলেজ ফাংশনে দেখা হয়েছে?
—ইয়ে মানে হ্যা।
—আরেহ কি সৌভাগ্য আমার।
জোস্না খুব ভাল গান গায়।ভার্সিটির সব ধরনের সংস্কৃত অনুষ্ঠানে ডাক পরে তার।সেইদিন ও একটা অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সময় পরিচয় হয় তার আবীর আহমেদ এর সাথে।তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।জোস্না ওনার অনেক বড় ফ্যান।তাই যেচে গিয়ে কথা বলে সে ওনার সাথে।মোবাইল নাম্বার ও দেয়।আবীর আহমেদ জোস্না কে অতটা পাত্তা না দিলেও জোস্নার মনে ক্ষীন আশা ছিল আবীর আহমেদ অবশ্যই তাকে ফোন দিবে।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি দিবে তা ভাবেনি জোস্ন্যা।
এভাবে প্রতিদিনি আবীরের সাথে কথা হয় জোস্নার।গানের কথা, দুইজনের স্বপ্নের কথা, আশার কথা নানারকম কথা।আস্তে আস্তে ভালবেসে ফেলে জোস্না আবীর কে।তাই একদিন থাকতে না পেরে বলেই ফেলে সে ভালবাসার কথাটা।আবীর কথাটা শুনে কিছুক্ষন চুপ থাকে তারপর ভাবার সময় দরকার বলে ফোন কেটে দেয়।পরেরদিন একটা ম্যাসেজ আসে জোস্নার মোবাইলে।ম্যাসেজ টা এমন, "জোস্না ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি ভালবেসে ফেলবে আমায়।স্যরি আমায় নয় তুমি ভালবেসেছ আবীর আহমেদ কে আমি আবীর নই আমি নাহিদ।তোমার গানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত।সেইদিন প্রোগ্রামে যখন আবীর আহমেদ কে মোবাইল নাম্বার দিলে তখন আমি দেখলাম তুমি তার সামনে থেকে চলে যাওয়ার পর তিনি তোমার নাম্বারটি হাত থেকে ফেলে দিলেন।তখন খুব যত্ন করে আমি নাম্বারটা তুলে নেই।বিশ্বাস করো আমি তোমার সাথে প্রতারনা করতে চাইনি কিন্তু যখন তুমি নিজেই আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি আবীর আহমেদ কিনা তখন তোমার কন্ঠে যে খুশির আভাস শুনতে পেয়েছিলাম তা নস্ট করে দিতে পারিনি।আমাকে তুমি মাফ করো।"
ম্যাসেজ টা পড়ে কিছুক্ষন থম মেরে পড়ে থাকল জোস্না।সাথে সাথে নাহিদ কে ফোন দিল সে কিন্তু ফোন টা সুইচ অফ।তার ভিতরটা ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, নাহিদ আমি আবীরকে নয় তোমাকেই ভালবেসে ফেলেছি।কিন্তু বলতে পারলনা জোস্না।
১ মাস পর ফোনটা অন করলো নাহিদ।জোস্নার কন্ঠস্বর খুব শুনতে ইচ্ছা করছে।ফোন দিল সে জোস্নাকে।অনেকক্ষন রিং হওয়ার পর ফোন ধরলেন জোস্নার মা।
—হ্যালো কে?
—আমি জোস্নার বন্ধু।জোস্না কি আছে?
—আমি জোস্নার মা।জোস্না তো ১৫ দিন হলো হসপিটালে।কি জানি হয়েছে আমার মেয়েটার।কিছু খায় না ঘুমায় না।না পেরে আমরা তাকে হাসপাতাল ভর্তি করেছি।
আর কিছু শুনল না নাহিদ।ঠিকানা জেনে ছুট দিল হাসপাতাল সন্মুক্ষে।জোস্নার কেবিন খুজে বের করে তার পাশে এসে বসল সে।হাত চেপে ধরল জোস্নার।চোখ মেলে চাইলো জোস্না।মুখে তার তৃপ্তি।চোখে ভালবাসার বৃষ্টি।
নৌকার পাটাতনে বসে আছে জোস্না আর নাহিদ।আকাশের জোস্না দেখতে দেখতে গল্প করছে তারা-
—আজকের জোস্নাটা খুব সুন্দর তাই না নাহিদ?
—হ্যা খুব সুন্দর ঠিক আমার বউ টার মতন।
—যাও আমি এত সুন্দর নাকি।আমি তো পেত্নী এই জন্যই তো আমাকে ভালবাসি বলো না তুমি।
জোস্নার ছেলেমানুষী অভিমান দেখে তাকে কাছে টেনে নেয় নাহিদ।চিবুক টা উঁচু করে ধরে বলে, বউ আমি তোমাকে এই আকাশ সমান ভালবাসি।এই আকাশটার যেমন কোন সীমা নেই ঠিক সেইরকম তোমার জন্য আমার এই বুকের মাঝে ভালবাসার কোন সীমা নেই।অনেক বেশী ভালবাসি তোমায়।তুমিও একটু ভালবাসি বলো না বউ।”জোস্নার চোখের কোন ভিজে উঠল।এত ভালবাসে তাকে নাহিদ জানত না সে।একটা রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে উঠল জোস্না- "আমারো পরানো যাহা চায়।তুমি তাই তুমি তাই গো।আমারো পরানো যাহা চায়।"
নাহিদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার বউ জোস্নার দিকে।বাতাসে জোস্নার চুল উড়ছে।চাঁদের আলো পড়ছে তার মুখে সহসা নাহিদ আকাশের জোস্নার দিকে তাকালো তারপর মনে মনে বলল, না আমার জোস্নার সৌন্দর্যের কাছে আকাশের জোস্না আসলে কিছুই নয়।হাতটা ধরল সে তার বউয়ের।হারাতে দিবে না সে তার জোস্নাটাকে।
ভালবাসার মানুষটিকে আসলে কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা যায় না।প্রতেকটা মানুষের কাছে তার ভালবাসার মানুষটি অতুলনীয়।সবার থেকে সুন্দর সবার থেকে ভাল।
(সন্ধ্যার নীলারোণ্য)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪২