ব্রেক আপ হওয়ার একমাস পর মৃন্ময়ী আমাকে কেন কল করলো তা বুঝে উঠতে পারছি না।ফোনের স্ক্রিনে নাম্বারটা ভেসে উঠতেই বুঝতে পারলাম এটা মৃন্ময়ী।কিছু কিছু মানুষের মত কিছু কিছু নাম্বারও মুছে ফেলা যায় না।সারা জীবন স্মৃতির লিস্টে জমা হয়ে পড়ে থাকে।
মৃন্ময়ীর সাথে ব্রেকআপটা আমি করলেও সেই বাধ্য করেছিল আমাকে।প্রতিনিয়ত জোর করতো,বুঝাতো ব্রেক আপ করার জন্য।বলতো আমাদের রিলেশনটা আমাদের বাসায় মেনে নেবে না।তার থেকে আমাদের এখনই ব্রেক আপ করাটা বেটার হয়।
আমি মানতাম না।তাকে বলতাম,আমাদের রিলেশনটা কেন মেনে নেবে না বল?আমাদের দুইজনেরই ফেমিলির অবস্থা ভালো,লেখাপড়াতেও দুইজনই ভালো।আমার মনে হয় না আমাদের ব্যাপারে কেউ আপত্তি করবে।
একদিন অনেক রাগারাগি করলো সে আমার সাথে।ফোন বন্ধ করে দিল।আমি তাকে খুজতে ফেসবুকে ঢুকলাম।কিন্তু না তাকে পেলাম না।কিন্তু আদার বক্সে একটা ছেলের আইডি থেকে মেসেজ এসে আছে।সিন করার ইচ্ছে ছিল না,কিন্তু মেসেজের প্রথমেই মৃন্ময়ীর নাম দেখে খুলে দেখলাম।রিপ্লাই দিতেই ছেলেটাও রিপ্লাই দিল।
“আপনি মৃন্ময়ীকে ভালোবাসেন তাই না?কতদিন থেকে রিলেশন?আপনি কি জানেন আগেও তার সাথে অনেকের রিলেশন ছিল।সে সবার সাথেই চিট করেছে”
“আপনি কিভাবে জানলেন?”
“কারন আমার সাথেও তার রিলেশন ছিল”
“ও আচ্ছা থ্যাংকস”
সাথে সাথে মৃন্ময়ীর নাম্বারে কল দেই।এবার তাকে পাওয়া যায়।কল রিসিভ করেই বলি,ভালোবাসি মৃন্ময়ী।
“এটা বলার জন্যই কল করছ?”
“হ্যা”
“কিন্তু তোমাকে আমার একটা শেষ কথা বলার আছে।আমি সন্দ্বীপকে ভালোবাসি।তাকে নিশ্চয়ই চেন?”
“সামনাসামনি দেখা হয় নি।ফেসবুকে তোমার ওয়ালে মাঝেমধ্যে দেখি।তা কতদিনের রিলেশন?”
“তোমাকে যেদিন থেকে ব্রেক আপ করার কথা বলছি সেদিন থেকে”
“তার মানে দুইমাস।ওকে ভালো থেকো”
“তুমিও”
“আচ্ছা সন্দ্বীপের নাম্বারটা দেবে প্লিজ?”
“নাম্বার দিয়ে কি করবে?”
“সেটা আমার ব্যাপার।তুমি নাম্বার দাও”
“দেওয়া যাবে না”
“তাহলে ফেসবুকে নোক করবো”
“না প্লিজ এই কাজ করো না।আমি সন্দ্বীপকে অনেক ভালোবাসি”
“কেমন ভালোবাসো সেটার একটা পরীক্ষা নেই তাহলে”
মৃণ্ময়ীর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলাম না।কল কেটে দিয়ে আবার ফেসবুকে ঢুকলাম।অনেক খুজে সন্দ্বীপের আইডিটা পেলাম।ইনবক্সটা ওপেন করেই ল্যাপটপের কীবোর্ডে খটখট করে টাইপ করতে থাকলাম......
___
আজকে একমাস হল মৃন্মীয়র সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই।আমি আমার মত আছি,সে তার মত।কেউ কারো একটা বারও খোজও নেয় নি।অথচ আজকে মৃন্ময়ী কল করে আমার খোজ খবর নিচ্ছে।তাই আমিও খোজ নিতে বললাম,সন্দ্বীপের সাথে রিলেশন কেমন চলছে?
“ভালো না।গতকালকে ব্রেক আপ করছি”
“কেন ব্রেক আপ করলা কেন?”
“তোমার সাথে ব্রেক আপের দিন থেকে সন্দীপ আমার সাথে কেমন জানি করত।মনে হত সে আমাকে এড়িয়ে চলছে।ব্যাপারটা খুব সুক্ষ হলেও আমি বুঝতে পারতাম”
“তুমি তাকে বল নি কেন সে এরকম করছে?”
“জানতে চেয়েছি অনেকবার।কিন্তু সে প্রতিবারই বলেছে,এটা তোমার বুঝার ভুল”
“সেরকমই তো হতে পারে?”
“না সেরকম নয়।তোমার সাথে ব্রেক আপ করার দিনের পর থেকেই সে আমার সাথে এরকম করতে শুরু করে।বলবা প্লিজ কি সন্দ্বীপকে তুমি কি এমন বলেছিলে যে সে আমাকে ইগনোর করা শুরু করলো?তুমি কি তোমার আমার রিলেশনের কথা তাকে বলছিলা?”
“না”
“তাহলে বানিয়ে বানিয়ে বলছ আমার সাথে তোমার ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল?”
“না”
“তাহলে বলছ আমার ক্যারেক্টার খারাপ?অনেক জনের সাথে আমার রিলেশন ছিল?”
“না”
“তাহলে কি বলছিলা?”
“আমি আসলে কিছুই বল নি”
“মানে কি?তাহলে সে আমার সাথে এরকম করতো কেন?”
“সে কোন রকমই করতো না।তুমিই সব সময় ভাবতা যে আমি তাকে কিছু বলেছি,আর সেজন্যে সে তোমাকে ইগনোর করছে।আসলে তার উপর তোমার আস্থা,বিশ্বাস কোনটাই ছিল না”
“মনে হয় তাই”
“হুম”
“সেদিন যে ছেলে আইডিটা থেকে আমার সম্পর্কে বাজে কথা বলা হইছিল সেটা আসলে আমার আইডি”
“জানতাম”
“কি করে জানতে?আমার উপর তোমার বিশ্বাস ছিল?”
মৃন্ময়ীর উপর বিশ্বাস ছিল কিনা তা জানার জন্য সে অপেক্ষা করে নি।কলটা কেটে দিয়েছে।আমি অনেক্ষন ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কেন?সে আবার কল করবে?নিশ্চয়ই করবে...এটা মনে হওয়ার কারন কি?