somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউচি খেলার বর

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এক]

শতাব্দীর চিলেকোঠায় তোমায় দেখেছি যেদিন; বিষম খেলাম ভারি! ব্যথায় না বিস্ময়ে, তা নিরূপণ করতে পারি নি! এ কি সেই বীথি! আমার বীথিকাই আজকের বৃক্ষ? হ্যাঁ, বট-বৃক্ষই বটে; আছে তার অগুণতি ঝুরি, মূল আর কান্ড-শাখা-প্রশাখার জটাজুটে আচ্ছন্ন অতিকায় বৃক্ষকুঞ্জ! তেলতেলে মসৃণ বেতস পাতার পরিপাটি শোভিত সেই বীথি! এক দঙ্গল নায়-নাতকুরের মাঝে আলুথালু বেশে গরবিনী দাদী-নানী রূপ;
ঘেমে নেয়ে সারা। ঘর-দোর সামলাতে ক্লান্ত – তবু আমায় বিশ্বাস করতেই হচ্ছে!

এ্‌ই কি তোমার মেয়ে? দেখতে ঠিক তোমারই মতো! শুধু রঙটুকু ছাড়া মা-মেয়ের প্রভেদ বুঝতে পারি নি।
আমার যে বয়েস হয়েছে তা আমলেই নেই! বাম কনুই’র নীচে দেখছি - ধান ক্ষেতের(পানির স্তর ঠিক রাখতে)কাদার বাঁধের মতই উঁচু কাটা দাগ; জ্বলজ্বল করে যেন আমায় ব্যঙ্গ করছে! আর ওতেই মা-মেয়ের মধ্যকার প্রভেদটিরও মিমাংশা হ’ল! কমলা দিঘির টলমলে চোখে একটু হাসলে শুধু - তা কি তাচ্ছিল্য না স্বস্তি তাও বুঝি নি! এতকাল বোধটাই ছিল ক্ষীণ, এখন বুঝি দৃষ্টিও!

[দুই]

দেখতে পাচ্ছি; বাগান পুকুরের পূব পাড়ে, বৈচী ফলের থোকা হাতে তুমি! জানতাম; ও দিয়ে মালা বানিয়ে আমাকেই দিবে তবু তোমার সাথে আড়াআড়ি না করলে যে সুখ হয়না তাই, ফলগুলো ছিনিয়ে নিতে তোমায় পিছু ধাওয়া করলাম! তোমার ভয় ছিল; ধরা পড়লে ফলগুলো না আমি নষ্ট করে দিই! প্রাণপণে আমায় এড়িয়ে যেতে যেই না চক্কর খেলে – অমনি নিপতিত হলে পুকুরের খাদে!

বাম কনুই’র নীচে ভাঙা কাঁচের গভীর ক্ষত, অনেক রক্তক্ষরণ হ'ল! রক্ত থামাতে আমার বৃথা কুশেশ –
ঠোঁট চেপে ধরলাম ক্ষতস্থানে! নোনা রক্তের স্বাদমুখে জীবনের প্রথম চুম্বন! আনন্দ না বেদনায় - তুমি নীল হলে, পুলকিত আমি! নোনারক্ত মুখে তোমার মিষ্টিঘ্রাণ আর ঘাড়ে নিঃসৃত শ্বাসের উষ্ণ শিহরণ আমায় এক ভিন্ন মাদকতার পরশ দি’ল! আর তা ই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ উপাসনা!

কচি দূর্বাঘাস চিবিয়ে রক্ত বন্ধের বৃথা প্রয়াস। যত না রক্তপাত বন্ধ করা তারও বেশী লোলুপ তৃষ্ণা! শেষমেষ ডাক্তার কাকা এসে উদ্ধার করলেন! বাড়িতে সবার অস্থির প্রশ্নমালা সেদিন তুমি নির্বিকার ভাবেই এড়িয়ে গেলে - কাউকেই বললে না আমার অপরাধের কথা! তা কি করুণায় না ভালবাসায় – সেদিন যেমন বুঝি নি, আজো বুঝতে পারি না বীথি!

[তিন]

তোমার খেলার হাঁড়িকুঁড়ি আর পুতুল নিয়ে ছিল আমার বাঁদরামো য’ত! ওসব ভেঙে পানিতে ফেলে লুকিয়ে
কত ভাবেই না তোমায় নাজেহাল করেছি! সব কষ্ট আর অত্যাচার ভুলে দিব্বি তুমি মা-চাচীকে লুকিয়ে আমার জন্য কত কী এনে দিতে! রাগ করে একবার তোমার পিঠে লেখার শ্লেট ভেঙে ফেললাম; চাচীকে অমন মিথ্যেটা বললে কি করে বীথি; তোমার হাত থেকে পড়েই ওটা ভেঙে গেছে?

কখনো ব্যথায়, কখনো জিদ করে কান্না-কাটি করেছ, কখন যে সব ভুলে পিছন থেকে এসে আমার চোখ চেপে ধরবে তা কি আমি কল্পনা করতে পারি? নীরব ভাষায় জানতে চাইতে; ‘কে তুমি’! ঠিকই বুঝতাম, ইন্দ্রিয়-গভীরে লুকিয়ে থাকা তোমার চিরচেনা ঘ্রাণ আর রেশমি চুড়িই আমায় বলে দি’ত; ওটা বীথি! তবু মিথ্যে না চেনার ভান করতাম যেন অনেকক্ষণ চোখ ধরে থা’ক। তোমার ঘ্রাণ আর তুলতুলে হাত দু’টো আমায় যেন মাতাল করে রাখত তাই তো - তোমার পিছনে আরো বেশী লেগে থাকতাম, খুনসুটি করতাম!

[চার]

জ্বালাতাম বেশি, কান্না করতে তুমি, কপট রাগ দেখাতেন দাদী! তারপরই, তাম্বুল-চির্চিত মুখে তার সুখ-স্বপ্নের কথা বলা; ‘বীথির মা, দু’টিকে দে’খ; যেন মানিকজোড় – লাগতেও নেই দেরি, ভাব হতেও লাগেনা সময়! যা’ই ব’ল; দু’টিতে মানাবে ভাল’! চাচি মুখটিপে হাসতেন! তুমিতো নওই আমিও; সেসব কথার অর্থ বুঝতাম না বড়!

যৌথ পরিবার ছিল, ঘরে সৎমা, সংসারে নেই তেমন পাত্তা কিছু আমার!কর্মব্যস্ত বাবা খোঁজ রাখেন সে সময় কোথা তার? দাদী আগলে রাখতেন আমায়, মনে হয় তুমিও! সৎমা’র ছেলে হল, দাদীটাও টুপ করে মরে গে’ল, এবার ছেলের জন্য নতুন মা’র ভাবনা বেড়েছে ভারি। আমার উপর অত্যাচারের মাত্রা তাই গে’ল বেড়ে। পালিয়ে এলাম নানীর কাছে। হায়রে কপাল; দু’বছর না ঘুরতেই নানীও নি’ল বিদায়। সৎমা’র অত্যাচার তবু মানা যায়, মামীদের অবজ্ঞা - সহ্যের অতীত, একবস্ত্রে হলাম বিদেয়; চা-মুদির দোকান ঘুরে অবশেষে ঠাঁই পেলাম চৌধুরী চাচার ঢাকার বাসায়।

[পাঁচ]

শুনছি এ কি বীথি - রাঙা’বু যে বলে, তোমার বিয়ের কথা এলে, কান্না চেপে বুকে, হন্যে হয়ে তুমি নাকি আমায় খুঁজেছিলে! আহা, জানল না কেউ আমার খবর, ছিল মনে কী ব্যথা ঝড় আমি তখন ঢাকার শহর - চৌধুরীদের ঘরজামাই, খুকুমনির হাতের পুতুল, চাকরী করি দিন কাটাই।

ঘরজামাই ছিলাম ঠিকই হইনিকো স্বামী, শাহাজাদির খামখেয়ালী - হলাম পরকীয়ার বলি, প্রতিদ্বন্দ্বী সরাতে শেষে টেনেছি জেলের ঘানি। বছর পঁচিশ ফাটক শেষে বাইরে এসে দেখি – পৃথিবীটা বদলে গেছে মুক্ত ধরা ঘর হয়েছে, নেই তো কেউ আর বেঁচে। নেই মনে সুখ ব্যর্থ জীবন, ভালবাসা স্নেহের বাঁধন সব গিয়েছে ধু’য়ে গ্লানির বোঝা জীবন কাঁধে হেথা হোথা কতক বছর ঘুরে দৈবযোগে অবশেষে, এই পেলাম আজ তোমার ঘরের খবর।

মনে পড়ে ছেলেবেলায়, বউচি খেলায় কাটত কত বেলা। বউ সাজতে লজ্জা পেতে, চিমটি কাটতে আমার হাতে
এমনি কত ছলা-কলা। ছিল কত মিথ্যা ভাষণ, রাগ অভিমান, কপট শাসন... শুনেছি এখন ভা’লই আছ;
আনঘরেতে বউ সেজেছো, হাসি-খেলার স্বপ্ন ভুলে বেঁধেছ আপন ঘর। স্বামী-সন্তান সব হয়েছে, ভুলেছ আমার স্বর। মনে আছে আজও আমার, হয়তো তুমি ভুলেই গেছো; একদা ছিলাম - আমি তোমার বউচি খেলার বর।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×