somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষ সেজে ৪৩ বছর

২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কথায় আছে, শক্ত দড়ি ছেড়ে তাড়াতড়ি। এই কথার উদ্ভব কোথা থেকে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটগুলোতে এই কথার কার্যকারিতা আমরা দেখতে পাই হরহামেশাই। যেমন ধরা যাক মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের কথাই। ওই অঞ্চলগুলোতে নারীদের এখনও মধ্যযুগীয় কায়দায় দেখা হয়। প্রাচ্যের সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়ে গেলেও মধ্যপ্রাচ্যে এখনও নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয় নিজের পছন্দ অনুযায়ী পুরুষ নির্বাচন করার জন্য। অথচ সেই মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার একাংশেই প্রতিবাদ করছে নারীরা। আফগানিস্তানে কোরান পোড়ানোর অভিযোগে এক নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে সমাজের পুরুষেরা। সেই নারীর মৃতদেহটিকে কোনো পুরুষ গোরস্থানে নিয়ে না যাওয়ায় সমাজের নারীরাই সেই দায়িত্বটি পালন করে। আফগানিস্তানের সমাজ বাস্তবতায় এটা এক বিশাল বিপৱব নিঃসন্দেহে।

তেমনি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মিশরের এক বিধবা নারী প্রায় অর্ধ শত বছর কাটিয়ে দিয়েছেন পুরুষের বেশে। নিজের একমাত্র মেয়েকে মানুষ করার জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছিলেন সিসা আবু দায়ুহ নামের ওই নারী। সম্প্রতি সাহসী এই নারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনও তিনি পুরুষের পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই আর ফেলে আসা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান না ৬৫ বছরের এই নারী। যদিও তার মেয়ে বড় হয়ে গেছে। নেই আর কোনো পিছুটান।

৪৩ বছর আগে যখন বিধবা হন আবু দায়ুহ তখন তিনি ২২ বছরের তরুণী। স্বামীর মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন সিসা। তখন যে তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, কাজ করে অনাগত সন্তানের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিজেই পালন করবেন। একে তো গোড়া পরিবারের মেয়ে। তারওপর স্বামী নেই। মিশরের মত রক্ষণশীল সমাজে তাকে কাজ দেবে কে। তখন তিনি পুরুষের ছদ্মবেশ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। যদিও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই তাকে ফের বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সে দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সিসা বলেন, ‘ভাইয়েরা চাইতেন আমি আবার বিয়ে করি। তারা আমার জন্য নতুন নতুন পাত্র আনতেন।’

কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন লুক্সোর শহরের বাসিন্দা আবু দায়ুহ। একদিন মাথার চুল কেটে ফেললেন। গায়ে চরালেন পুরুষের পোশাক। ছুটলেন কাজের সন্ধানে।

অনেক চেষ্টার পর সিসার কাজ মিলল ইট ভাটায়। পুরুষের সঙ্গে পুরুষ সেজে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। কোনোরকম যৌন হয়রানির হুমকি ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করতে লাগলেন সিসা। নতুন এই পরিচয়ে নিজেকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করলেন তিনি। তাইতো বাকি জীবন পুরুষ হয়েই কাটাতে চান এই নারী।

তবে কাজটা তার জন্য অতটা সহজ ছিল না। তার এ সিদ্ধান্তে আঘাত পেয়েছিলেন তার ভাইয়েরা। তখন যুবতী আবু দায়ুসের গায়ে শক্তি ছিল দানবের মতন। একাই ১০ জন পুরুষের সমান কাজ করতে পারতেন। কিন্তু বয়স বাড়লে শক্তি কমতে থাকে। পরে জুতা পালিশের কাজ শুরু করলেন তিনি। এসবই করেছিলেন নিজের একমাত্র মেয়েটির জন্য।
আবু দায়ুহ‘র ভাষায়, ‘একজন নারীর পক্ষে তার নারীত্বকে অস্বীকার করাটা যে কতটা কঠিন তা আমি জানি। কিন্তু মেয়ের জন্য আমি যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিলাম। অর্থ উপার্জনের এটাই ছিল একমাত্র পথ। নইলে এই সমাজে আমার মত একটা মেয়েকে কে কাজ দিত বলুন? আমি তো লেখাপড়া জানতাম না। আমার পরিবার তো আমাকে স্কুলে পাঠায়নি। কায়িক পরিশ্রম ছাড়া আর কিছু করার ছিল না আমার। নইলে একটা মেয়েকে কি কেউ ইটভাটায় কাজ দেয়, বলুন?’

প্রথমদিকে তিনি ভেবেছিলেন, মেয়েকে মানুষ করার পর যখন ওর বিয়ে দেবেন, তখন স্বরূপে ফিরে আসবেন। কিন্তু আবু দায়ুহ‘র ভাগ্যটাই খারাপ। বিয়ের পরপরই অসুখে পরলেন মেয়ে জামাই। অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর কাজ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ততদিনে ঝাড়া হাত পা হয়ে খানিকটা নির্ভার হয়ে পড়েছিলেন আবু দাউহ। চায়ের দোকানে পুরুষের বেশে বসে পুরুষদের সঙ্গে আড্ডা মারা, চা পান খাওয়া আর স্ফূর্তি আড্ডা করা। এসবেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়েজামাই অসুস্থ হওয়ার পর আবার সংসারের হাল ধরলেন দায়ুহ।

তবে তিনি নিজে কখনো লিঙ্গ গোপন করেননি। কেউ জিজ্ঞেস করলে সত্যিটাই বলতেন। এ কারণে লুক্সোরের অনেক মানুষ তার সত্যিকারের পরিচয়টা জানতেন। অনেকে তো আসল নামেই ডাকতেন তাকে। আসলে অপরিচিত লোকজনের অতিরিক্ত কৌতুহল লুকানোর জন্যই তিনি লিঙ্গ গোপনের এই কৌশল নিয়েছিলেন।

সন্তানের জন্য এতবড় আত্মত্যাগের জন্য সম্প্রতি স্বীকৃতি পেয়েছেন আবু দায়ুহ। লুক্সোরের স্থানীয় সরকার তাকে শহরে নিবেদিত প্রাণ মা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এছাড়া গত সপ্তাহে মিশিরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির কাছ থেকেও পেয়েছেন পুরষ্কার। সব নারীর কপালে সিসার মতো সম্মান জোটে না। কিন্তু আজ থেকে আবু দায়ুহ সিসা পৃথিবীর তাবৎ নিপীড়িত নারীদের জন্য পাথেয় হয়ে রইলেন।
তথ্য সূত্র: http://www.now-bd.com/2015/03/25/387552.htm

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×