somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদমান ক্যাসপার - এক ছোট্ট ভূতের নাম

৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় দেখতাম ক্যাসপার ভূতের কার্টুন। এই ফুটফুটে ৪ বছরের বাচ্চাটার নাম "সাদমান ক্যাসপার"। ট্র্যাকার তোফাজ্জল হোসেন অপু'র ছেলে। গত কয়েকদিন ধরে ছেলেটার সম্পর্কে জা জানি তা মোটামুটি এরকম -
ট্র্যাকার বাবাকে দেখে দেখে তার ইচ্ছে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো। ছোট বাচ্চাদের কত রকম বায়না থাকে, আর এই ছেলের বায়না পাহাড়ে বেড়ানো! তাই বাবা তাকে আদর করে নাম দিয়েছেন ‘ভূত’। ‘ভূতের’ নাম সাদমান ক্যাসপার। ভাত খাওয়া, খেলা শেষে নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখা, টয়লেট শেষে নিজে নিজেই পানি ঢেলে দেয়া- এরকম নিজের কাজ নিজেই করত সে। কিন্তু ক্যাসপার একদিন দেখল তার মলের সাথে ঝরঝর করে রক্ত যাচ্ছে। বোঝেনি, কী সর্বনাশটা চলছে নিজের ভেতর। ব্যথা পায়, কাঁদে, কাউকে বলেনা। চার বছরের বাচ্চা, কীভাবে বোঝাবে? একদিন মায়ের সন্দেহ হল। ছেলে টয়লেটে কাঁদছে, জোর করে ভেতরে গেলেন। এবং রক্তের পরিমান দেখে স্তব্ধবাক হয়ে পড়লেন... চট্টগ্রামেই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পর সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হল, ধীরে ধীরে রক্ত জমে ফুলে উঠতে থাকা পেট দেখে ডাক্তাররাও কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো পেট অপারেশন করে জমা রক্তগুলো বের করে ফেলতে হবে। তাই করা হলো। পুরো পেট ওয়াশ করে ডাক্তাররা একটা নতুন সমস্যা আবিস্কার করলেন,সেখানে কোনো একটিভ ব্লিডিং সেল খুঁজে পাওয়া গেল না, অর্থাৎ কীভাবে রক্ত বের হচ্ছে এমন কোন আলামত পাওয়া গেল না। কিন্তু রক্ত এসে জমা হচ্ছে! চট্টগ্রামের ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দেওয়ায় কাঁচা সেলাই করা অবস্থাতেই ক্যাসপারকে নিয়ে আসা হল ঢাকায়। সিম্পটম শুনে এবং রিপোর্ট দেখে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানালেন এটা খুব রেয়ার অসুখ- 'Meckel's Diverticulum' , এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মাত্র ২০ জন এমন রোগী পাওয়া গেছে। তবে আশার কথা হলো এই রোগ (যদি তাই হয়ে থাকে) নিরাময় করা সম্ভব, এবং বাংলাদেশেই সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সময়। ক্যাসপারের অপারেশন করাতে হবে, অপারেশনে যাবার আগে বাবার কাছে আইসক্রীম খেতে চেয়ছে, যারাই তাকে দেখতে গেছে সবার কাছে চকলেট খেতে চেয়েছে, হাসপাতালে রোগীদের জন্য নিয়ে আসা খাবার দেখে হাউমাউ করে কেঁদে বারবার বলেছে -
"আমাকে একটু ভাত দাও মা, আমি কতদিন ভাত খাই না, ডাল দিয়ে হলেও একটু ভাত দাও আমাকে মা"।
তার বাবা ছুটে বের হয়ে গিয়েছিলেন পাশ থেকে, যে ছেলের এতটুকু ক্ষুধা তিনি কখনো লাগতে দেননি, সেই প্রাণের কলিজা এখন ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। কিন্তু তার তো মুখে কোন খাবার খাওয়া নিষেধ। কিভাবে তিনি ছেলের এই ছটফট মুখ দেখবেন? এরপর ক্যাসপারের একটা ভালো এবং সফল অপারেশন হয়েছে, এবং ব্লিডিং হওয়ার মূল সমস্যা খুঁজে সেটাকে ফেলে দেয়া হয়েছে। অপারেশনের পরে এই আদুরে ছোট্ট ভূত কথা বলেছে, নিজের নাম বলেছে, বাবার - মায়ের নাম বলেছে। বাবা-মা, ডাক্তাররা অন্যান্য শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই বেশ খুশি কিন্তু পরম আদরে বড় হওয়া ছেলেটা ধুম করে অসুস্থ হয়ে গেল পরদিন দুপুর থেকেই। সমস্যা হলো তার ফুসফুসে, সে শ্বাস নিতে পারছে না। কোন একটা ঝামেলার কারণে তার ফুসফুসে ইনজুরি হয়ে গেছে। ডাক্তার এবং নার্সরা যথাসাধ্য করল, সাধ্যের বাইরে গিয়েও যা করা দরকার সেটাই করার চেষ্টা করল। ফলাফল হলনা কোন। প্রতি মুহূর্তে অবনতি হতে লাগলো তার শারীরিক অবস্থার। তার বিপি (ব্লাড প্রেশার) পাওয়া যাচ্ছিলো না, ইউরিন বন্ধ হয়ে গেলো। ফলাফল হলো মারাত্মক। ইউরিন না হবার কারণে তার প্রভাব পড়তে শুরু করলো কিডনিতে। বিপি না বাড়ার ফলে ইফেক্ট পড়লো শরীরের সব জায়গায়। দ্রুত ওকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া হলো, পুরো রাত চললো লাইফ সাপোর্টে। পরে ডাক্তাররা বিভিন্ন কনসালটেন্টদের পরামর্শে ক্যাসপারকে কিছু নতুন ঔষধ দেয়ার ফলে ধীরে ধীরে তার বিপি বাড়তে লাগলো, ইউরিনও কিছু হতে থাকলো, কিডনীর ঝামেলাও সে ওভারকাম করে ফেললো। জানা গেল ওর ব্লাড প্রেসার কিছুটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ইউরিন আউটপুট। হৃদস্পন্দন কমেছে। শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম। তাছাড়া আর সব প্যারামিটার এর উন্নতি হয়েছে।
১৬/১৭ ঘন্টা আগে এতটুকুই জানতাম। ওকে নিয়ে আমি কোন পোষ্ট দেইনি কিন্তু ওর রেগুলার আপডেট আমি রেখেছি, সামহাউ বাচ্চাটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে, এ কারণেই আপডেট রাখা। বুকে একটা আশা ক্যাসপার দ্রুপ ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহ একটা মিরাকল ঘটিয়ে দিবে ...
কিন্তু এই মুহূর্তে আমি জানি, ক্যাসপার আর নেই, সে চলে গেছে ...চলে গেছে সে সবাইকে ছেড়ে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন... চার বছরের ফুটফুটে বাচ্চাটা আর কোনদিন ফিরে আসবেনা, আর কোনদিন মা বলে ডাকবেনা, বাবার কাছে পাহাড়ে যাওয়ার আবদার করবেনা ... কোনদিন না ............

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×