পাশের যাত্রী হড়হড় করে বকেই যাচ্ছে। সাথের মানুষটার যে সেদিকে কিছুমাত্র খেয়াল নেই, তা বুঝার ক্ষমতা লোকটার আছে বলে মনে হয় না। হাফিজ সাহেবের স্ত্রী আজ সকালে অফিসে এসে জানিয়ে গেলেন, হাফিজ সাহেব গতকাল রাতে মারা গেছেন, উনার ইনস্যুরেন্সের টাকাটার যেন ব্যবস্থা করা হয়। মহিলার এরূপ আচরণে বেশ অবাক হলাম। কত সহজে বদলে যায় মানুষ, আর তার ভালবাসা। এইতো বছর দুয়েক আগে চাকুরির শুরুর দিকেই ভালবেসে বিয়ে করলেন। প্রথমেতো বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু এ কটাকা বেতনের চাকুরি দিয়ে সংসার হয়ত চালান যায় কোন রকমে, তবে তা একেবারেই বুড়ো কচ্ছপের গতিতে। আর তাই সংসারেও দিনে দিনে অশান্তি বেড়েই চলছিল। চাপা স্বভাবের তো, কাউকে কিছু বুঝতে দেননি। আমার সাথে সখ্যতা ছিল বলেই কিছুটা জানতাম আরকি। শেষমেষ, কি এক অচিন রোগে অল্প কদিনেই শেষ করে দিয়ে গেল।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আজ তো আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আহা! বেচারি হয়ত মন খারাপ করে বসে আছে। সকালে বলল, যেন একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরি। কেন, জিজ্ঞেস করায়, একটু মন খারাপ করে বলেছিল, থাক। আমিও, অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে ভেবে দ্রুত পা ফেলে চলে এসেছিলাম। এখন মনে পড়ে যাওয়ায় বেশ খারাপ লাগছে। বাস থেকে নেমে, হাঁটতে শুরু করলাম। উদ্দেশ্য, ওর জন্য একটা উপহার কিনব, কিন্তু কি নেব, সেটা এখনও ঠিক করতে পারিনি। একটা কিছু মনে পড়ায়, আমার হিসাবটা সহজ হয়ে এল, একই সঙ্গে মনটাও খারাপ হয়ে গেল। মানিব্যাগটা খুলে দেখলাম, তাতে দুটো পঞ্চাশ, একটা দশ, আর সাথে কয়েকটা ছেঁড়া দুটাকার নোট রয়েছে। কেন যে মাসের শেষ দিনেই বাবা বিয়ে ঠিক করেছিলেন, কে জানে!
উল্টো পথ ধরে শাহবাগে চলে এলাম। আলোর জন্যে চারটে টকটকে লাল গোলাপ আর একগাছি নীল কাঁচের চুড়ি কিনে বাসায় রওনা দিলাম। চুড়ি ওর খুব পছন্দ, আর ওগুলো পেলে, বাচ্চা মেয়েদের মত খিলখিল করে হেসে উঠবে, সে আমি জানি। ও তো ওরকমই............