প্রবাসী আয় বা রেমেটেন্সের জন্য বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন কাটালেও ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে গেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটা প্রায় ২৮,৮৬০ কোটি টাকার সমান।
দেশের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ তথ্য জানিয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সিপিডি আয়োজিত বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৪-১৫ ‘অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সিপিডি জানায়, ভারত যে কয়টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পেয়ে থাকে বাংলাদেশ তার মধ্যে পঞ্চম।
অনুষ্ঠানে সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। তার মতে, এই পাচারের পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্যের চেয়েও বেশি। বৈদেশিক বিনিয়োগ বলে এই পাচারের অর্থই আবার দেশে ফিরিয়ে আনছেন অনেকে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে শিল্প ঋণের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তা বেশির ভাগই লোন ট্রাস্ট রিসিপ (এলটিআর) বা বিশ্বাসী ঋণের। আবার খেলাপি ঋণের তথ্যেও সন্দেহের জায়গা রয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, বেনামি ঋণও পুনঃ তফসিল করা হচ্ছে।
মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে আটকে আছে বলে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এ অবস্থায় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ যদি না বাড়ে, তাহলে প্রতিবছর শ্রমবাজারে যে পরিমাণ লোক প্রবেশ করছে, তাদের জন্য সমস্যা হয়ে যাবে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
বিনিয়োগে সমস্যার জন্য প্রচলিত প্রতিবন্ধকতা, সংস্কারের অভাব ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে চিহ্নিত করেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস, জমি ও রাস্তাঘাট লাগবে। একই সঙ্গে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে হবে।’ এ জন্য সরকারকে ‘সমঝোতামূলক রাজনীতির’ পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ও পুঁজিবাজার প্রয়োজন। ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন ও পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা হয়। এই দুই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘চাল রপ্তানি করতে হলে দেশের জন্য ১৫ লাখ টন মজুত রাখতে হবে। এর উপরে মজুত থাকলে রপ্তানি করা যেতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান। পর্যালোচনায় বলা হয়, ব্যক্তি খাতে যে ধরনের বিনিয়োগ হওয়া দরকার, তা হয়নি। বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক খাত থেকে যে প্রবাহ হওয়া দরকার ছিল, তাও হয়নি। অনেক মূলধনী যন্ত্রপাতি দেশে আসছে, যেগুলোতে কোনো শুল্ক নেই। এসব যন্ত্রপাতিকে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত করা হচ্ছে কি না, তাও দেখার ব্যাপার আছে বলে পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
-সিপিডি