শুরুতেই বলে রাখি। মোটেও এটা যেনোতেনো বানানো গল্প না। দুর্বল চিত্তের মানুষদের না পড়াটাই বোধ হয় শ্রেয়। পারদিন থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে আসিফের বাসা থেকে খুব দেরী করে আমি বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলাম। রাত অনেক তখন। পাঁচটার চেয়ে কম তো হবে না অবশ্যই। শীতের রাত বলে ভোর পাঁচটাতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাসের আশায় দাঁড়িয়ে আছি অনেক্ষণ ধরে। শীত পড়েছে প্রচুর। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি বলেই হয়তো শীতটা ভালো মতোন জেঁকে বসেছে শরীরে। বাসও যে খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে সেরকম মনে হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে গায়ের চাদর শরীরে শক্ত করে চাপিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছি। মাঝে মাঝে কিছু ট্রাক দ্রুত বেগে পাশ কাটাচ্ছে। গ্রাম মতোন এলাকা। রাস্তার পাশে প্রকান্ড ডোবা। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হলো, অদূরে রাস্তা ধরে ডোবার পাশে একটা মানুষ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আদৌ সেটা মানুষ কিনা সেই বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলাম। হাত পা অনেকাংশে বিকৃত। গায়ের রং কৃষ্ঞবর্ণ। মুন্ডুটা ঘাড়ে কোনো মতো লেগে থাকলেও শরীরের তুলনায় তা অস্বাভাবিক রকমের বড়। ভূত প্রেত এসবে আমার কোনো কালেই বিশ্বাস ছিলো না। যারা এসবে বিশ্বাস করে তাদেরকে কিছুটা হলেও আমার পশ্চাৎ চিন্তাধারার যুক্তিহীন মানুষ বলে মনে হয়। হঠাৎ করেই আমার মনে হলো, প্রকৃতি তার অদ্ভুত সৃষ্টির প্রতি এরকম নিন্ম দৃষ্টির কারণেই বোধ হয় আজ আমাকে ভয়ংকর কিছু একটার সম্মুখীন করাতে যাচ্ছে। অশরীরি কিছু একটা যেটার ভয় মনে আজীবন গেঁথে থাকবে ঠিকই কিন্তু দারূণ যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে বন্ধু মহলে পরিচিতি থাকায় এ নিয়ে আমি কোনোদিনও একটা কিছু বলতে পরবো না কারো কাছে। এলোমেলো চিন্তা আর একটা পাশবিক চাপা ভয় নিয়ে আমি ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছিলাম বিকৃতদেহী ওই কৃৎসীত প্রাণিটার দিকে। হঠাৎ মনে হলো মুন্ডুটার মাঝখানে কিছু একটা চিকচিক করছে। অনেকটা উদ্দীপ্ত চোখের মতোন। যদিও সেটার স্থান মানুষের মুখমন্ডলের গাঠনিক সাদৃশ্যতা অনুযায়ী চোখের কোটরে নয়। চাদর থেকে হাত নামিয়ে সিগারেট ধরালাম। এক চিলতে আগুনেও যদি কিছু একটা হয়! পা গুলো কেমন আড়ষ্ঠ হয়ে আছে। অজানা ভয়ের সম্মুখে য্যানো তারা বিন্দুমাত্র এগুতে চাইছে না। আমি দৃঢ় করলাম মনকে। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে সেই বিকৃতদেহীর সামনে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। সত্যিকার অর্থেই কুৎসীত একটা প্রাণী। ভুল দেখিনি আমি। সত্যিই জ্বল জ্বলে চোখে দূর থেকে এটা তাকিয়ে দেখছিলো আমাকে। ভয়ের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তাকে জয় করটাই আমি শিখে এসেছি বলে সোজা এগিয়ে গেলাম সেই প্রাণীর দিকে। শরীরের সব শক্তি দিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঝাপিয়ে পড়লাম। হার্টবিট তখন আমার ভয়ঙ্কর বেগে দৌড়াচ্ছে। চারদিকে কেমন বিটকেলে শ্যাওড়াটে গন্ধ। পিচ্ছিল কিছু একটায় জড়ানো ওই প্রাণির দেহের ওপর থেকে আমি উঠে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে ভোর হয়ে এসেছে। আজানের শব্দে কিছুটা আস্বস্থ হয়ে আমি শেষ দিগন্তের হালকা কমলা আলোয় দেখি সামনে একটা মাঝারী সাইজের মজে থাকা মরা কলাগাছ ঘুসি খেয়ে এ্যাবড়ো থ্যাবড়ো হয়ে পড়ে আছে।
ছোটোগল্প।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩০