somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি জঙ্গুলে গল্প

০১ লা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক দেশে এক ছোট্ট রাজকন্যা ছিলো। রাজকন্যা সারাদিন বসে বসে গল্প বানাতো আর একা একা নিজের সাথে কথা বলতো। ভীষণ দূরের বরফে ঢাকা ছোট্ট এক জঙ্গলে রাজকন্যার কোনো বন্ধু ছিলো না। সবাই রাজকন্যাকে ভালোবাসতো কিন্তু কেউ রাজকন্যার বন্ধু হতো না। তার কারণ রাজকন্যা এক অভিমানের বেড়া দিয়ে নিজেকে ঘিরে রেখে জীবন কাটাতো। সেই অভিমানী রাজকন্যার নাম কিন্তিটকুস্। আদর করে সবাই ওকে কিন্তি বলে ডাকতো।
কিন্তি জানতো সে কোনোদিন তার রাজপু্ত্রকে পাবে না। ভীষণ উঁচু প্রাসাদে তো উঠবার কোনো সিঁড়ি নেই। কিন্তির লম্বা চুল-ও নেই যে রেপানজেলের মতো প্রাসাদের জানালা দিয়ে ওর লম্বা ঘণ চুল মেলে দিবে। সেটা নিয়ে কিন্তির খুব একটা ভাবনাও ছিলো না। সে প্রায়ই ছবি আঁকতো আর না-না ধরণের জল্পনা কল্পনা করে দিন কাটাতো। মাঝে মাঝে ভীষণ রেগে গেলে প্রাসাদের দেয়ালের এক কোণে চোখ ছোটো ছোটো করে কিছু সময়ের জন্যে তাকিয়ে থাকতো। তাতে করে ওর রাগ কিছুটা হলেও কমতো।
রাজকন্যা কিন্তির মাঝে মাঝে ঈলুর সাথে খুব লম্বা সময়ের জন্যে গল্প হতো। ঈলু হচ্ছে ওর রুমমেট এবং জঙ্গলের একমাত্র ঈগল পাখি। গাছপালা কমে গিয়েছিলো বলে ঈলু বন থেকে নুড়ি জোগাড় করে নিজে থাকার জন্যে এই প্রাসাদটা বানিয়েছিলো। সব বানিয়েছিলো কিন্তু সিঁড়ি বানাতে ভুলে গিয়েছিলো বলেই কিন্তি কখনো প্রাসাদ থেকে বের হতে পারে না। ঈলুর সিঁড়ি বানানোর কথা একবারো মাথায় আসে নি। ও সিঁড়ি দিয়ে কী করবে। কিন্তু কিন্তির অবস্থা দেখে ওর প্রায়ই খারাপ লাগতো।
ঈলু খুব ফেমিনিস্ট ছিলো। মেয়েদেরকে নিয়ে স্টেরিওটিপিক্যাল কথাবার্তা ওর একদমই সহ্য হতো না। এটা নিয়ে জঙ্গলের অন্য পশুপাখির সাথে ওর প্রায়ই অনেক ঝগড়া হতো। ওর এই স্বভাবের জন্যে অন্য জঙ্গলের কোনো ছেলে ঈগলও ওকে বিয়ে করতে চাইতো না। সেটা নিয়ে ঈলুর অনেক দুঃখ ছিলো কিন্তু ঈলু কখনো কিন্তিকে এসব বলতো না। ঈলুর শুধু মনে হতো কেউ কখনো ওকে ওর মতো করে ভালোবাসবে না।
কিন্তুি যখন অনেক ছোটো ছিলো, তখন ওর মা ওকে একা রেখে খুব দূরে চলে গিয়েছিলো। ঈলু ওকে খুঁজে পায় রাস্তার পাশের এক ছোট্ট গলিতে। ঈলুর সেদিন খুব ক্ষিধা পেয়েছিলো আর খাবার হিসেবেই কিন্তিকে ও ওর প্রাসাদে নিয়ে আসে। কিন্তু ওর ছোট্ট মুখ দেখে ঈলু আর ওকে খেতে পারে নি। এ কথা সে কিন্তিকে কখনো জানায় নি। ঈলু কিন্তিকে বলেছে প্রাসাদের আশেপাশে ঘুরোঘুরি করা কবুতরগুলোর মতো ওর ও নুড়ি আর গম খেতে অনেক ভালোলাগে।
ঈলু ফেমিনিস্ট ছিলো না আগে কখনো। কিন্তু যখন থেকে জঙ্গলের পুরুষ পশুপাখি অধিকার আদায় নিয়ে অনেক উঠে পড়ে লাগলো, তখন থেকে নারী জাতি নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা-বার্তা ঈলুর অসহ্য লাগতে শুরু করলো। এই যেমন একবার এক ছেলে মৌমাছি রেগে গিয়ে তার রাণীকে ছেড়ে চলে আসলো। বলতে শুরু করলো যে রাণী না-কি বেড়ে গিয়েছে অনেক। সে রাণী বলেই নাকি মৌচাকে তার এতো দাপট্। এসব শুনে ঈলুর মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো খুব। আরে বাবা, রাণী মৌমাছি বলেই যে তার এতো অহংকার তা-তো না, সে হাজার হাজার ডিম নিজের মধ্যে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তার একটু আধটু এক্সট্রা আদর আর সম্মান আশা করাটাই তো স্বাভাবিক। ঈলুর ইচ্ছে করছিলো কপ্ করে ছোট্ট মৌমাছিটাকে গিলে ফেলতে। ছেলে মৌমাছির কী আর অভাব আছে! কিন্তু রাণীর পছন্দের মৌমাছি বলে ঈলু ওকে দয়া করে ছেড়ে দিলো।
কিন্তিটকুস্ আর ঈলুর দিন যাচ্ছিলো বেশ। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে শিকারীর গুলি খেয়ে ঈলুর মৃত্যু হলো। মানুষ নামের কিছু প্রাণী কিন্তিটকুসকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে শহরে নিয়ে আসলো। কিন্তি এখন স্কুলে যায় আর বাসার কম্পিউটারে বসে বসে গল্প লেখে। ওর প্রায়-ই মনে হয়, মনুষের চেয়ে ঈলু অনেক ভালো ছিলো। ঈলুর ভাবনা ছিলো, গল্প ছিলো, কিন্তু মানুষ নামের প্রাণীগুলো একদম গল্পহীন।



সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×