আমি সাদাকোর ছোট্ট বিড়াল ছিলাম। বিকেল বেলা প্রায়-ই সাদাকো সাসাকি আর আমি নদীর তীরে খেলা করতাম। এক দুপুরে আমরা ভাত দিয়ে গোল গোল বল বানিয়ে তা খেয়ে নদীর তীরে এসে ঘাসের উপরে শুয়ে ছিলাম। ছোট্ট ঘাস ফড়িঙ্গের ক্রিট ক্রিট শব্দ শুনে সাদাকো তাদের ধরতে যেতো। ওর ছোট্ট হাত ফসকে সব ফড়িং পালিয়ে যেতো সবসময়। সেই বিকেলে হঠাৎ করে কোথা থেকে যেনো ঘন কালো মেঘ এসে ঢেকে দিয়েছিলো সবকিছু। সাদাকো আর আমি ভীষণ ভয়ে ছুটে গিয়েছিলাম মা-র কাছে। সেই কালো মেঘের সাথে আগুন এলো আর সবকিছু ছাই করে দিলো এক নিমিষে।
দশ বছর পর সেদিনকার সেই কালো মেঘের কথা প্রায় সবাই-ই ভুলে গিয়েছিলো। কিন্তু সাদাকো হঠাত করে অসুস্থ হয়ে পড়লো। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো এবং ও জানতো ওর এই অসুস্থতা সেদিনের সেই কালো মেঘের জন্যই। সাদাকোর মন খারাপ দেখে ওর বড় ভাই ওকে বললো কাগজ দিয়ে বক বানাতে। ও যদি এক হাজার কাগজের বক বানাতে পারে তা হলে ওর একটা ইচ্ছা খুব সহজে পূরণ হবে। ভাইয়ের কথা শুনে সাদাকোর খুশির সীমা ছিলো না। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ও সারাদিন কাগজের বকপাখি বানাতো আর ভাবতো, কতো কী-ই না করার আছে এই চার দেয়ালের বাইরে। বৃষ্টির কাদায় ও লাফাচ্ছে না কত্তোদিন হয়ে গেলো। সাদাকো স্বপ্ন বুনতো আর কাগজের বকপাখি বানাতো।
একটা, দুইটা, তিনটা করে ও পাঁচশোটা বকপাখি বানিয়ে ফেললো। মা সুতো দিয়ে সেগুলো বেঁধে সারি সারি করে দেয়ালে টানিয়ে দিলো। কী ভীষণ সুন্দর ছিলো সাদাকোর সেই বকপাখিগুলো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ওর অসুস্থতা বেড়েই চললো। আমি ওর মাথার কাছে গুটিশুটি করে শুয়ে থাকতাম আর ওকে বলতাম মন খারাপ না করতে। ওর রুগ্ন হাত আর কোনো বকপাখি বানানোর শক্তি পেতো না। বেশ কিছুদিন পর সাদাকো ওর পাঁচশো বকপাখির সাথে অজানা কোথাও উড়ে চলে গেলো।
সাদাকো সাসাকির জন্ম ১৯৪৩ সালে, হিরোসিমাতে। ওর মৃত্যু হয় ১৯৫৫ সালে লিউকিমিয়াতে। হিরোসিমা নাগাসাকির এটোম বোমার হাত থেকে ও বেঁচে গেলেও রেডিয়েশনের জন্যে দশ বছর পরে ওর লিউকিমিয়া ধরা পড়ে। জাপানে ক্রেনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অর্থ আছে। ক্রেণ হচ্ছে দীর্ঘ জীবনের চিহ্ন। সাদাকো ওর ভাইয়ের কাছ থেকে এই মিথ শুনে ক্রেণ বানাতে শুরু করে। পরবর্তিতে ওর সম্মানে হিরোসিমা মেমোরিয়াল পার্কে ক্রেণ হাতে একটা বাচ্চা মেয়ের মূর্তি বানানো হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১৬