২০১৩ সালের জুলাই মাসে আমি খুলনা শহরে একটি ছোট্ট ডেভেলপার কোম্পানীর (REHAB এর মেম্বার নয় এবং মালিক ও ০১ জন ষ্টাফ নিয়ে মাত্র ০২ সদস্য বিশিষ্ট কোম্পানী) নিকট হতে ২৫ লক্ষ টাকায় ৯৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য চুক্তবিদ্ধ হই। চুক্তি মোতাবেক ডিসেম্বর, ২০১৫ মাসে ফ্ল্যাটটি ডেলিভারী দেবার কথা ছিল। চুক্তির শর্তানুযায়ী আমি ৪০% টাকা অগ্রিম কোম্পানীকে পরিশোধ করেছি। কিন্তু সময়মতো ডেভেলপার প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে পারেনি। চুক্তি মোতাবেক জানুয়ারী,২০১৬ মাস হতে কোম্পানী আমাকে মাসিক টাঃ ১০,০০০/- (দশ হাজার)হারে ক্ষতিপূরন দেবার কথা থাকলেও তা দিচ্ছে না, আবার কাজও দ্রুত সম্পন্ন করছে না। এ পর্যায়ে আমি মাসিক ক্ষতিপূরনের জন্য কোম্পানীকে চিঠি দেই এবং বলি যে মাসিক ক্ষতিপূরন না দিলে এভাবে যত টাকা ক্ষতিপূরন বাবদ জমা হবে সে টাকা ফ্ল্যাট এর অবশিষ্ট মূল্য বাবদ আমার প্রদেয় ৬০% টাকা হতে সমন্বয়/ কেটে রাখা হবে। ((উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের প্রথমদিকে আমি আর্থিক কষ্টে পতিত হলে আমার ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেবার জন্য কেম্পানীকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু কোম্পানী তা বিক্রি করতে পারেনি। ৪/৫ মাস পরে আমার আর্থিক সমস্যা কেটে গেলে আমি পুনরায় চিঠি দিয়ে আমার ফ্ল্যাটটি বিক্রি করতে নিষেধ করি এবং যথাসময়ে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটটি ডেলিভারী নিবো মর্মে কোম্পানীকে জানাই। ))
কিন্তু ডেভেলপার কোম্পানীর মালিক আমার মাসিক ক্ষতিপুরনের চিঠি পাবার পরে ক্ষীপ্ত হয়ে আমার সাথে চরম দূর্ব্যবহার শুরু করেছে। আমাকে ফ্ল্যাটটি অার দেবে না বলেও হুমকি দিচ্ছে, কখনোও বলছে আমার ফ্ল্যাটটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে এবং আমার টাকা আমাকে পরে ফেরত দিয়ে দেবে ! ! ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে "ফ্ল্যাট বিক্রয় চুক্তনামাটি" আমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছিলাম এবং ০৩ বছর পরে আমার লগ্নিকৃত টাকা ক্ষতিপুরন ছাড়া ফেরত (আমার সন্দেহ রয়েছে সে সুন্দরভাবে এককালীন মূল টাকাটিই ফেরত দিবে কি না) দিলেও আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হবো।
আমি অন লাইনে আইন বিষয়ে ঘাটাঘাটি করে জানতে পেরেছি যে, "রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০" নামে বাংলাদেশ সরকার আইন করেছে এবং সে আইনে ক্ষতিগ্রস্হ ক্রেতার সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাবার বিধান রয়েছে যা নিম্নরুপ :
ডেভেলপার কর্তৃক রিয়েল এস্টেট হস্তান্তরে ব্যর্থতা --------
১৫। (১) চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেভেলপার রিয়েল এস্টেট হস্তান্তরে ব্যর্থ হইলে রিয়েল এস্টেট এর মূল্য বাবদ পরিশোধিত সমুদয় অর্থ চুক্তিতে নির্ধারিত পরিমাণ ক্ষতিপূরণসহ ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়(account payee)চেকের মাধ্যমে ফেরৎ প্রদান করিবে ঃ
তবে শর্ত থাকে যে, ক্রেতা ও ডেভেলপার যৌথ সম্মতিতে রিয়েল এস্টেট হস্তান্তরের সময়সীমা সম্পূরক চুক্তির মাধ্যমে বর্ধিত করিলে উপ-ধারা(২) এর বিধান অনুযায়ী ক্রেতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বা হার পক্ষগণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে উল্লেখ না থাকিলে পরিশোধিত সমুদয় অর্থের উপর ১৫% হারে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হইবে এবং ডেভেলপার অনধিক ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) কিস্তিতে ক্ষতিপূরনের অর্থসহ সমুদয় অর্থ পরিশোধ করিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এ বর্ণিত ক্ষতিপূরণের সময় গণনার ক্ষেত্রে সমুদয় অর্থ পরিশোধের তারিখ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ সময় গণনা করিতে হইবে।
ক্রেতা কর্তৃক অর্থ ফেরত গ্রহণের নিয়মাবলী -----------------
১৭। কোন কারণে ক্রেতা লিখিত আবেদনের মাধ্যমে তাঁহার অনুকূলে প্রদত্ত বরাদ্দ বাতিলপূর্বক পরিশোধিত অর্থ ফেরত গ্রহণ করিতে চাহিলে, ডেভেলপার আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ পরিশোধিত অর্থের ১০% অর্থ কর্তনপূর্বক অবশিষ্ট অর্থ ক্রেতাকে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে এককালীন চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করিবে।
নোটিশ ব্যতীরেকে বরাদ্দ বাতিল বা স্থগিত করিবার দন্ড -------------
২২। ধারা ১৪ এর বিধান লংঘন করিয়া কোন ডেভেলপার রিয়েল এস্টেটের বরাদ্দ বাতিল করিলে অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদন্ড অথবা অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবে।
ডেভেলপার কতৃর্ক প্রতারণামূলক অপরাধের দন্ড ------------
২৭। যদি কোন ডেভেলপার কোন ভূমির মালিকের সহিত রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করিয়া বা ক্রেতা বরাবর রিয়েল এস্টেটের বরাদ্দপত্র সম্পাদন করিয়া তদনুযায়ী কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করে বা আংশিক কার্যক্রম গ্রহণ করিয়া বিনা কারণে অবশিষ্ট কাজ অসম্পাদিত অবস্থায় ফেলিয়া রাখে এবং তজ্জন্য ভূমির মালিককে বা, ক্ষেত্রমত, ক্রেতাকে কোনরূপ আর্থিক সুবিধা প্রদান না করে তাহা হইলে উহা এই আইনের অধীন একটি প্রতারণামূলক অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য ডেভেলপার অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড অথবা অনূর্ধ্ব ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবে।
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ, ইত্যাদি ---------------------
৩২। অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন দন্ডনীয় অপরাধসমূহ আপোষযোগ্য(compoundable),জামিনযোগ্য(bailable)এবং অ-আমলযোগ্য(non-cognizable)হইবে।
বিচার ---------------------------------
৩৩।(১) ফৌজদারী কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট কতৃর্ক বিচার্য হইবে।
(২) এই আইনে ভিন্নতর কিছু না থাকিলে, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে ফৌজদারী কার্যবিধির Chapter XXII তে বর্ণিত পদ্ধতি, যতদুর সম্ভব, প্রযোজ্য হইবে।
অর্থদন্ড আরোপের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ ক্ষমতা -----------------
৩৪। ফৌজদারী কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য এই আইনে অনুমোদিত যে কোন দন্ড আরোপ করিতে পারিবে।
আদায়কৃত অর্থ বণ্টন --------------
৩৫।(১) এই অধ্যায়ের অধীন দোষী সাব্যস্ত ও দন্ডিত ডেভেলপারের নিকট হইতে অর্থ দন্ড বাবদ কোন অর্থ আদায় হইলে আদালত আদায়কৃত অর্থের অনূর্ধ্ব ৫০% ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক বা ক্ষেত্রমত, ক্রেতার অনুকূলে এবং অবশিষ্ট অংশ রাষ্ট্রের অনুকূলে প্রদান করার আদেশ দিতে পারিবে।
(২) আদালত উপ-ধারা(১) এর অধীন বণ্টন সম্পর্কিত কোন আদেশ প্রদান না করিলে সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমাকৃত হইবে।
বিরোধ নিষ্পত্তি---------------------
৩৬।(১) রিয়েল এস্টেট প্রকল্প বাস্তবায়নের যে কোন পর্যায়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ক্রেতা, ডেভেলপার, অথবা ভূমির মালিকের মধ্যে এই আইনের ধারা ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯ এবং ৩০ এ বর্ণিত অপরাধের জন্য বা তাহাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির কোন বিধান লংঘনের জন্য মতবিরোধের সৃষ্টি হইলে পক্ষগণ, প্রথমে নিজেদের মধ্যে আপোষ উহা নিষ্পত্তির চেষ্টা করিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী আপোষের পদক্ষেপ গ্রহণের পর যদি কোন পক্ষের সহযোগিতার জন্য উহা ব্যর্থ হয় তবে অপর পক্ষ বিবাদমান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সালিস আইন, ২০০১ মোতাবেক সালিসী ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়া অপর পক্ষকে নোটিশ প্রদান করিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন নোটিশ প্রাপক উক্ত নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে নোটিশ প্রেরকের সহিত যৌথভাবে সালিসী ট্রাইব্যুনাল গঠন করিবেন।
(৪) সালিস আইন, ২০০১ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পক্ষগণ কর্তৃক গঠিত সালিসী ট্রাইব্যুনালের রোয়েদাদ পক্ষগণ এবং তাহাদের মাধ্যমে বা অধীনে দাবীদার যে কোন ব্যক্তির উপর বাধ্যকর হইবে এবং উহার বিরুদ্ধে কোন আদালতে কোন পক্ষের আপত্তি উত্থাপনের অধিকার থাকিবে না।
(৫) উপ-ধারা (৩) মোতাবেক পক্ষগণ সালিসী ট্রাইব্যুনাল গঠনে ব্যর্থ হইলে যে কোন পক্ষ বিবাদমান বিষয়টি বিচারের জন্য এই আইনের অধীন উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করিতে পারিবেন।
উপরোক্ত আইনে ক্রেতাদের জন্য সুবিচার পাবার বিধান থাকলেও আমি মামলা করবো কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। পরিচিত কিছু মানুষের সাথে পরামর্শ করতে গেলে তারা জানায় যে এই দেশে ডেভেলপারের অপরাধের কোন বিচার নাই। রিহ্যাব এর মেম্বার হয়েও অনেক ডেভেলপার ক্রেতাদেরকে শোষন করে যাচ্ছে দিন দিন এবং রিহ্যাবে নালিশ জানালেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। সেখানে আমার ডেভেলপারতো রিহ্যাবের মেম্বারই না। উপরন্তু দেওয়ানী মামলাগুলি আদালতে ৩/৪ বছর নাকি ঘুরবে এবং প্রচুর টাকা খরচ হবে। তাতে খাজনার চেয়ে নাকি বাজনা বেশি হয়ে যাবে। উকিল পুষতে নাকি পথের ফকির হতে হয় ! ! ! ! মামলা ৩/৪ বছর পরে জিতলেও নাকি টাকা ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিবে, এবং তাদের পিছে ঘুরতে ঘুরতে নাকি জীবন শেষ হয়ে যাবে টাকা উদ্ধার করতে।
আমি এখন কি করবো ????????????
আমি কি কোন প্রতিকার পাবো না এই দেশে ????
ফ্ল্যাট না হোক ০৩ বছর পরে ক্ষতিপূরন বাদেও যদি শুধু আমার ৪০% মূল টাকাটিই ডেভেলপার এককালীন ফেরত দিতো তবু আমি খুশি থাকতাম। আমি একজন সামান্য ছোট্ট চাকুরীজীবি এবং অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমিয়ে একটি ছোট্ট ফ্ল্যাট কিনতে চেয়েছিলাম। জমি কিনে বাড়ি বানানোর ক্ষমতা আমার নেই, তাই ফ্ল্যাট কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন ডেভেলপারদের অনেক হয়রানির কাহিনী শুনে আমার এখন ছেড়ে দে মা কেদে বাচিঁ অবস্থা।
আমি কি মামলা করবো ? সমাধান কি হবে ? আপোষে ডেভেলপার মালিক টাকা দেবে না বলেই তার আচরনে মনে হচ্ছে। মামলা করলে কি আমার লাভ হবে নাকি ভোগান্তি বাড়বে? আমি কি কোনভাবে টাকা উদ্ধার করতে পারবো না? কারো কি কোন সুন্দর উপায় জানা আছে যাতে টাকা ফেরত দেবার জন্য ডেভেলপারকে চেপে ধার যায় ???? আমার রাজনৈতিক কোন ব্যাকিংও নাই !
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৯