কিশোরের বিয়ে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১
২০৪৯ সাল। ব্রহ্মপুত্রের পাড় ঘেষে তৈরী বাসায় কিশোর একাই থাকে। আজ কিশোরের ৬৫ তম জন্মদিন। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর চোখ মেলেই দেখে প্রিয়া এক গুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে সোফায় বসে ঘুমিয়ে আছে। প্রিয়ারও বয়স হয়েছে, সে এখন ৬১ বছরের যুবতী। প্রিয়া যেমন তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়নি, কিশোরও তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাল না। তাদের দুজনের জন্য আজ হবে একটি বিশেষ দিন। কিছুটা ভয়, কিছুটা আশংকা, কাজ করছে কিশোরের মনে। তার বিশ্বাস আল্লাহর ইচ্ছায় সব কিছু সবশেষে ভালভাবে হবে।
মানুষের আজন্ম আফসোস ... ইসস অতীতে যদি ফিরে যাওয়া যেত, তাহলে সব ভুল শুধরে আবার নতুন করে জীবনটা সঠিকভাবে সাজাতে পারতাম। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় টাইম মেশিনের মাধ্যমে অতীতে ফিরে যাওয়া এখন সম্ভব। কিশোর আর প্রিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা অতীতে ফিরে যাবে। তাদের কারোই বর্তমানের প্রতি কোন দায়িত্ব বা কোন মনের টান নেই।
টাইম মেশিনে উঠে বসেছে কিশোর-প্রিয়া । টাইম মেশিন চলতে শুরু করল। প্রচণ্ড শব্দ, আলোর ঝলকানি আর ভয়াবহ দুলুনি। দুইজনেই দোয়া ইউনুস পড়তে লাগল। টাইম মেশিন ছুটছে অতীতের দিকে!!! তারা ফিরে গেলো ৫২ বছর আগের জীবনে!!!
২
ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সাল। জামালপুর শহর। ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। অলস সময়। গল্পের বই পড়ে, টিভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে কলেজ পুকুরে বসে আড্ডা দিয়ে কাটছে সময়। কয়েকদিন আগে একটি মেয়েকে কিশোরের ভাল লেগেছিল, আজ তার বাসার টেলিফোন নাম্বারটা পেয়েছে। টেলিফোন হাতে নিয়ে কিশোর ডায়াল করল ****
প্রিয়াঃ হ্যালো ...
কিশোরঃ হ্যালো...কেমন আছ?
প্রিয়া: ভাল। আপনি কে?
কিশোর: আমাকে চিনতে পারলা না!!!
প্রিয়া: আপনি কে? আপনি কে মামুন নাকি মেহেদী ???
কিশোর: খুব কাছাকাছি চলে গেছো, আমি ... আমি হলাম মানুষ। হাহাহা ...
প্রিয়া: ফাজলামি করবেন না। বলেন আপনি কে? কেন ফোন করছেন? নয়তো ফোন রেখে দেব।
কিশোর: আমি মানুষ। তুমি আমার সাথে প্রেম করবা ?
প্রিয়া: আমার তো প্রেম করার বয়স হয় নাই। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি।
কিশোর: প্রবলেম নাই। প্রেম করার বয়স হলে প্রেম করবা কিনা? তোমাকে আমার খুব ভাললাগে।
প্রিয়াঃ (একটু লজ্জা পেয়ে) জানি না ... এখন রাখছি ... আমার ফাইনাল পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নাই ... পড়তে বসতে হবে।।
......... এভাবে কিছুদিন কথা... তারপর প্রকৃতির ইচ্ছায় কোন যোগাযোগ নাই .........
প্রায় চার বছর পর। আগষ্ট, ২০০১ সাল। টাংগাইল শহর। হঠাৎ করে প্রিয়ার কথা মনে পড়ল। প্রিয়ার বাসার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় কিশোর ডায়াল করল *****
কিশোরঃ হ্যালো।
প্রিয়া: ও মাই গড!!! আপনি এতদিন পর ফোন করছেন।
কিশোর: তুমি এখনো আমার কণ্ঠস্বর মনে রাখছ?
প্রিয়া: প্লীজ আপনার নাম্বারটা দিন। এবার আর আপনি হারিয়ে যাবেন না ...প্লীজ ...। আমি কতদিন যে আপনার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম ...... কতদিন ...।।
কিশোর: এবার আর আমি হারাবো না। আমি সব সময় তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব ...।।
......... এভাবে কিছুদিন কথা... কিন্তু প্রকৃতির ইচ্ছা ছিল ভিন্ন...... তারপর প্রকৃতির ইচ্ছায় কোন যোগাযোগ নাই .........
প্রায় চার বছর পর। ফেব্রুয়ারি , ২০০৫ সাল। ঢাকা শহর। প্রিয়ার খুব কাছের বান্ধবীর সাথে কিশোরের এক ভাল বন্ধুর সম্পর্ক হয়েছে। কিশোরের বন্ধু প্রিয়ার সাথে কিশোরের এই টেলিফোনি সম্পর্কের ব্যাপারটা জানত।
অলস দুপুর।মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। কিশোর কল রিসিভ করলো।
প্রিয়া: হ্যালো, কিশোর ... কেমন আছ ??
কিশোর: ভাল আছি, প্রিয়া। তুমি কেমন আছ?
প্রিয়া: সরি, আমি প্রিয়া না । আমাকে চিনতে পারছো না ।
কিশোরঃ তুমি প্রিয়া। নাটক করার দরকার নেই । আমার বন্ধু তোমার বান্ধবীকে আমার নাম্বার দিয়েছে, সেখান থেকে তুমি নাম্বারটা পেয়েছ। তাই না?
প্রিয়াঃ (একটু বিচলিত হয়ে) এটা আমার নাম্বার না । আমি এখন চিটাগাং আছি । আমি ঢাকায় এসে আমার নাম্বার থেকে আপনাকে ফোন দিব।
কিশোর হাসছে ......তার সাথে প্রকৃতিও হাসছে ......... ।
৩
আগষ্ট, ২০০৭ সাল। ঢাকা । গতরাত থেকে কোন একটি অজানা কারনে প্রিয়া কিশোরকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। কিশোর তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে ফ্যামিলিকে পাশ কাটিয়ে বিয়ে করাটা ঠিক হবে না । ধানমন্ডির একটি ফাস্ট ফুডের শপে বসে আছে কিশোর। প্রিয়া তার মুখোমুখি বসে বলল, “তুমি আজ আমাকে বিয়ে করবা কি না , সরাসরি বল ? ইয়েস অর নো?”
হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। তারা দুই জন এক দৈব বাণী শুনল “এখান থেকেই তোমাদের জীবন এক নতুন দিকে বাঁক নিবে। তোমরা খুব ভেবে সিদ্ধান্ত নিবে। আল্লাহ তোমাদের সহায় হোক।” ইলেকট্রিসিটি চলে এল।)
কিশোর প্রিয়ার হাত ধরে বলল, চলো, আজকেই বিয়ে করব।
কাজী অফিস। ওরা অপেক্ষা করছে সাক্ষী আসার জন্য। এম পি থ্রি প্লেয়ারে গান শুনছে দুজনঃ
“এজীবন ফুরিয়ে যেদিন, পাবো এক নতুন জীবন
সেদিনও হবে একাকার দুজনার এই দুটি মন... ......
......... সঙ্গী ...... আমরা অমর সঙ্গী ......”
কিশোর
১৫/০৮/২০১৩ ইং
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন