somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমারে ভালবেসেছি ( ছোট গল্প)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজ জয়ী হাতে মেহেদি পরেছে। আর লাল-সবুজ রঙের রেশমি চুড়ি এবং লাল পাড় সবুজ শাড়ী পড়েছে। কপালে লাল টিপ, সব মিলিয়ে দারুন লাগছে জয়ীকে । কারো জন্য আজ সে অপেক্ষা করছে। এতো সুন্দর করে সেজেছে। জয়ী সুন্দর করে খোঁপা বেঁধেছে। খোঁপায় বেলি ফুলের মালা দিয়েছে। কারন বেলী ফুল জীতুর খুব পছন্দ। অনেক খুঁজে বেলি ফুলের মালা এনেছে। জীতুর সব ভাললাগাই এখন জয়ীর ভালোলাগা।

জয়ী খুব উত্তেজিত হয়ে আছে, কখন জীতুর সাথে দেখা হবে। একনজর দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। আজকের দিনটা জয়ীর কাছে অন্যরকম। জয়ী , জীতু কে মনে মনে কল্পনা করছে। পাঞ্জাবী পড়ে আসছে জীতু হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ । জয়ীকে দেখেই জীতুর চোখের পলক পরছেনা। জয়ী তাই দেখে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেছে।
হটাৎ মায়ের ডাকে জয়ীর হুশ হয়।
-এই জয়ী ! এই কোথায় যাচ্ছিস মা? এতো সেজেছিস যে?
- মা, আমি একটু বের হব। সব বন্ধুরা মিলে ঘুরব। সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসব মা। মিথ্যেটা বলতে জয়ীর অনেক কষ্ট হল।
- আচ্ছা ঠিকাছে। সাবধানে যাস। যা দিন কাল পরেছে।
- ওকে মা। আমি একটু পরই বের হব।

জয়ীর হটাৎ মনে পড়ল শৈশবের কথা। শীতের প্রতিটি সকালে জীতুদের বাড়ীতে শিউলি ফুল কুঁড়াতে যেত। সব বন্ধুরা মিলে ফুল কুড়ানো শেষে মাদ্রাসায় পড়তে যেত। কি মধুর ছিল সেই দিনগুলো। জিতুর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হত। খেলতে গেলেই ওর হাতের মার খেত জয়ী। কি যে রাগ লাগত! আজ ভাবতেই ভাললাগে শৈশবের সেই বন্ধুটিই জয়ীর জীবন সঙ্গি হবে। যাকে জয়ী ভালোবাসে উজার করে।

ঠিক ৪ টায় বের হল জয়ী, ৫টায় আসার কথা জীতুর । ঠিক সময়ে ক্যাফেতে জয়ী অপেক্ষা করতে লাগল। জীতুর আসার দেরি দেখে জয়ী অস্থির হতে লাগল। কখন আসেব জীতু? বার বার ফোন দিতে লাগল জয়ী। কিন্তু জীতু ফোন ধরছেনা। ভীষণ টেনশন করতে লাগল জয়ী। কি হল, কেন ফোন ধরছেনা ইত্যাদি।
জয়ীর মনে পড়ল একটা ঘটনা, ঠিক এখানটাতেই জীতু ওকে প্রপোজ করেছিল। সেদিন জয়ীর বার্থডে ছিল। জয়ীকে ফোন করে জীতু আসতে বলে এখানটাতেই। জয়ী প্রথমে না করেছিল ওকে কিন্তু জীতুর চোখের টলমল জল দেখে জয়ী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। বলে দিয়েছে সেও রাজী। খুব সুন্দর একটা পারফিউম গিফট করেছিল জয়ীকে, আর বলেছিল জীতু ‘বেশি করে এটা ইউজ করবা কারন আমি তোমার অঙ্গজুড়ে থাকতে চাই’।
জয়ীর উত্তর ছিল ‘ইস! কি শখরে বাবা অঙ্গজুড়ে থাকার’! সেদিনের কথা ভাবলেই জয়ীর অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। ভালো লাগে বেশ। এই ছেলেটাকে এতো ভালোবাসে জয়ী। ওকে ছাড়া বাঁচা যে দায়!
জয়ীকে চমকে দিয়ে জয় একগুচ্ছ রজনি গন্ধা নিয়ে আসে। আর সাথে দুটি গোলাপ। জয়ী অভিমান করে মুখ সরিয়ে রাখে।
-সরি লক্ষিটি । রাগ করেনা।
- জয়ীর একদম কান্না পায়। চোখ দুটি জলে ভিজে যায়।
- এই কান ধরে সরি বললাম। হয়েছেত এইবার একটু হাসো জান।
- ফোন ধরনি কেন? আমার বুঝি টেনশন হয়না?
জীতু জয়ীর হাত ধরে বলে সরি, সরি, সরি। হয়েছে? মুচকি হেসে বুঝিয়ে দেয় জয়ী যে তার সব অভিমান শেষ। এই দেখে জীতুর ভীষণ ভাললাগে। কারন এই মেয়েটি তাকে অসম্ভব ভালোবাসে। মেয়েরা যে এতো ভালবাসতে পারে এই মেয়েটিকে না দেখলে জীতুর জানাই হতনা।
জীতুর খুব ইচ্ছে হয় জয়ীর কপালে একটা ছোট্ট চুম্বন এঁকে দিতে। কিন্তু এটা পাবলিক প্লেস তাই আর দিতে পারেনা।
-জয়ী চল রিক্সায় ঘুরি।
-মানে কি? আজ না আমাদের বিয়ে করার কথা?
-আহ! চলইনা।
-এদিকে ওরা সবাই যে চলে আসবে।
-আরে ফোন আছেনা ? ওদেরকে পড়ে আসতে বললেই হবে। ওকে আমি এখনি জানিয়ে দিচ্ছি। তুমি টেনশন করোনা।
-আচ্ছা বাবা! তোমার মতিগতি কিছু বুঝিনা। হুটহাট কিযে সিদ্ধান্ত নাও না? তুমি একটা পাগল!
-হুম পাগল! শুধু তোমার জন্যে। তোমার কোলে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে করছে। আর তোমার ঐ লাল টিপের ওখানে একটা আদর দিতে ইচ্ছে করছে।
- যাহ! দুষ্ট কোথাকার!
-চল চল রিক্সা ঠিক করি।
- ওকে চল।

হটাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। জীতু জয়ীর মাথায় গোলাপ দুটি গুজে দেয়। আর সুযোগ বুঝেই কপালে একটা চুম্বন রেখা এঁকে দেয়। লজ্জায় জয়ী লাল হয়ে যায়। খুব মজা করে ঘুরল ওরা কতক্ষণ।

জয়ী গান শুনাল জীতুকে
‘ আমি তোমারে ভালোবেসেছি, চিরসাথি হয়ে এসেছি
তোমারে ভালবেসেছি, এ লগন পুর্ন যে তোমাতে
শুভ রাত জানেনাতো পোহাতে , তোমারি ব্যথায় কেঁদেছি যে হায়
তোমারই হাসিতে হেসেছি, তোমারে ভালবেসেছি’

জয়ীর এভাবে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ওরা নিরুপায়। জীতুর ভাবির খালাতো বোনের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। জীতু বার বার বলেছে যে ও জয়ীকে ভালোবাসে কিন্তু কিছুতেই ওর পরিবার শোনেনি। তাই এই সিদ্ধান্ত।

সব বন্ধুরা আসল, বিয়ে হল। জয়ী খুব কাঁদল । আর বার বার বলছিল 'মা’ আমাকে ক্ষমা করে দিও। বন্ধুরা ওকে বুঝাল। বিয়ের পর বন্ধুদের বায়না চাইনিজ খাওয়াতে হবে। সবাই মিলে চাইনিজে খেতে যাচ্ছে। জিতু আর জয়ী ওদের বন্ধু রাসেলের বাইক নিয়ে এগুচ্ছে আর ওদের অন্য বন্ধুরাও বাইকে যাচ্ছিল। জীতু খুব স্পীডে যাচ্ছিল। জয়ীর খুব ভয় লাগল। বলল
-আসতে চালাও জীতু।
- ভয় পেয়ো না লক্ষ্মীটি।
-না আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
- কিসের ভয়? আমাকে হারানোর?
- এটা কেমন কথা? তোমাকে হারাতে চাইনা। হারালে দুজন একসাথেই হারাবো। এই বলে জয়ী ওকে শক্ত করে ধরে রাখল।

বন্ধুরা মিলে খুব হৈচৈ করে চাইনিজ খেল ওরা। অনেক দুষ্টামি করল ওদের দুজনকে ঘিরে। ওদের বাসর সাজানো হল এক বন্ধুর বাসায়। ওদের দুজনকে জানানো হলোনা। রাসেল বলল
-এই জিতু চল আমার বাসায়।
-কি বলিস? তোর বাসায় মানে?
-মানে মানে করতে হবেনা। চলতো !

জয়ী-জীতু রাসেলের বাসায় গেল সাথে সব বন্ধুরাও। বাসায় গিয়ে ওরা দুজনই খুব সারপ্রাইজড হল। কেননা বাসর ঘর সাজানো ছিল। বন্ধুরা যে আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছে এটা জীতু জানেই না। এতো ভালোবাসা দেখে জীতুর চোখ ছলছল করে উঠে। ভাষা হারিয়ে ফেলে এমন ভালোবাসা দেখে। এক এক করে ওদের কে একা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুরা বিদায় হয়।

জয়ীর ভয় লাগছিল। মুখটা ভয়ে শুকিয়ে গেল। বাসায় কি বলবে, কিভাবে বলবে? জীতু ওর হাত দুটি ধরে বুঝাল ভয় পেয়োনা জয়ী। আমি আছিতো, এই যে তোমার কত কাছে। তোমার সুখ দুঃখের সাথী আমি। ভেবোনা সব বাধা আমরা পার করে যাবই। জয়ী জীতুর বুকে মাথা রাখল। আর চোখ দুটি দিয়ে জলধারা বয়ে চলল। জয়ীর চোখের এই জলধারা বলে দেয় এটা ভালবাসার জল, আনন্দের জল, বিশ্বাসের জল এটা।





অনেকদিন পর গল্প লিখলাম । গল্পের শেষ অংশটা প্রথমে দুঃখের ছিল। ছোট এক ভাইকে দেখালাম ও বলল আপু শেষে দুঃখটা বাদ দাও। ভালো লাগেনা দুঃখ। ওর কথা শুনে বাদ দিলাম। ও গল্পটা পড়ে আমার কিছু কিছু ভুল ধরিয়ে দিল। গল্পের শেষে তাই মিল দেখালাম।

উৎসর্গঃ ছোট ভাই তুষার মানব কে । যার অনুপ্রেরণায় এই ব্লগে আইডি খোলা। শুধু মাত্র ওর ব্লগে কমেন্ট করার জন্য আইডিটা খুলেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯
৩১টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×