- তুই তোর আর তোর স্বামীর মাঝে একটা বালিশ রেখে ঘুমাবি।
- আচ্ছা
- তোর গায়ে যেন কোনোভাবেই তার হাত না লাগে
- আচ্ছা
- তুই আরেক দিকে ফিরে শুবি।
- ঠিক আছে।
- ঠিক আছে না?
- হ্যাঁ ঠিক আছে।
- সব ঠিক আছে তো বিয়ে করলি কেনো ঐ বদমাসটাকে? চাপা আক্রোশে ফেটে পড়ে অর্ণব।
- আরে তুই তো তখন ছিলি না। আমি কি করে বিয়ে ঠেকাবো?
- কি করে ঠেকাবি মানে কি? সাধু সাজবি না।
- মানে কি?
- হ্যাঁ একদম সাধু সাজবিনা।
চুপ করে থাকে নীলা।
- তোরে বিয়ে করতে বললো আর তুই নাচতে নাচতে রাজী হয়ে গেলি?
নীলা চুপ থাকে। কারণ সে জানে এসবের হাজারও সদুত্তরে কোনো লাভ নেই অর্নব কোনোকিছুই বুঝবে না, কোনো কিছুই মানবে না। নীলা এও জানে অর্নবের বুকের বয়ে চলা ঝড়। তার নিজের বুকেও কি কম বাজে? কিন্তু কি করবে সে? কি বা করার ছিলো?
- বারোটা বছর। বারোটা বছর কেমনে কাটছে আমার জানি? খবর রাখিস কিছু?
অর্নবের চোখে পানি ছলছল করছে। নীলা মাথা নীচু করে বসে থাকলেও দেখতে পায় ঠিক ঠিক। ওমন বিশালদেহী এত বড় ছেলেটার চোখে জল। কিছুতেই সহ্য করতে পারে না নীলা। ইচ্ছে করছে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। এতদিনের ওর জমানো সব দুঃখগুলোকে শুষে নিয়ে নিতে। পারছে না সে। নীলা আজ অন্যের ঘরনী। ওর ছেলের বয়সও নয় পেরিয়েছে। এই তো কাছেই উল্টোদিকে ফিরে বসে আছে অর্নব। কিন্তু ওকে ছোঁয়া আজ তার নিষেধ। নীলার বুক ফেটে যায়। অনেক কষ্টেও আজ কান্না ঠেকিয়ে রেখেছে সে। ইচ্ছে করছে অর্ণবের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর সারাজীবনের কান্না কেঁদে নিতে। অর্নব হাউমাউ কাঁদতে থাকে। নীলার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। ভয়ও। ভোর হয়ে আসছে। কখন কে জেগে ওঠে। দেখে ফেলে ওদেরকে।
মনে পড়ে আজ থেকে ১২ বছর আগের কথা। সেদিনও ভোর হয়ে আসছিলো। একটু পরেই আজান দেবে। সেদিনও অর্ণব হাউমাউ করে কাঁদছিলো। ঐ তো অদূরে নীচু ট্যাংকটার উপরে বসেছিলো নীলা। অর্ণব ওর পায়ের কাছে বসেছিলো। অর্ণবের মত ওমন অতো বড় একটা ছেলে এমন করে কাঁদতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছিলো না নীলার। দুহাতে জড়িয়েছিলো সে অর্ণবকে সেদিন। সেই দুঃখটা দুঃস্বপ্নের মত বাঁজে নীলার বুকের গভীরে আজও। দুঃস্বপ্নও দেখে সে। সেই সূচীশুভ্র শরতের ঝকঝকে আকাশ আর মিষ্টি খোলা হাওয়ায় এই পৃথিবীর বুকে সকলের অজ্ঞাতে কান্নারত দুটো মানব মানবীর নীরব সাক্ষী হয়ে আছে এই ছাঁদ।
অর্ণবের উপর সমন জারী হয়েছিলো। তাকে এ বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে দূর দেশে। নীলাকে ভুলে যেতে হবে একেবারে। কতইবা বয়স তখন তার ২২। সেই বয়সেও অর্ণব পৃথিবীর সব কিছু ছেড়ে নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু নীলা রাজী হয়নি। কিসের ভয়ে কোন কারণে জানেনা নীলা। শুধু এটাই জানতো অর্ণব হারিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই বড় চাচী মেনে নেবেননা তাদের এই সম্পর্ককে। অর্নবের সাথে কত স্মৃতি। প্রথম প্রেম, প্রথম চুম্বন। ঐ তো ঐ ছাদের সিড়িঘরেই হঠfৎ জাপটে ধরে চুমু খেয়েছিলো অর্ণব। তার কান্ড দেখে তো রীতিমত থ নীলা। এরপর দুইদিন সে আছন্নের মধ্যেই ছিলো। কি হলো বুঝতেই পারছিলোনা যেন। তখন কত হবে নীলা ক্লাস টেন আর অর্নব কলেজ ফার্স্ট ইয়ার।
এরপর দুজনের লুকিয়ে বেড়াতে যাওয়া। একই বাড়িতে থেকেও ফোনে লুকোচুরি। সকলের চোখ ফাকি দিয়ে চুমু খাওয়া। সে এক প্রলয়ঙ্কারী পাগল পাগল ভালোবাসা। অর্ণব টাকা জমিয়ে কত কিছুই কিনে আনত যে। সেসব ভেবেও কান্না পায় নীলার। সব শেষ হয়ে গেলো। দীর্ঘশ্বাস পড়ে নীলার। অর্ণব শান্ত হয়ে বসে আছে। কাছেই কিন্তু ওর দিকে পিঠে ফিরিয়ে। ছোট চেকের শার্টের উপর দিয়ে ওর পিঠে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে নীলার। কিন্তু শ্বাসত নিয়মের বেড়াজালে আটকে যায় ওর আঙ্গুলগুলো। নাহ এটা অন্যায়।
ভোর হয়ে আসছে। হঠfৎ উঠে দাঁড়ায় অর্ণব। নীলার সামনে এসে দাঁড়ায়। এক ঝটকায় টেনে উঠায় ওকে। তারপর সেই প্রথম দিনটির মত গভীর চুম্বনে বুঝি গত এক যুগের ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে যায় ওর ঠোঁটে। নীলা কাঁপতে থাকে। ঘোরগ্রস্থা হরিনীর মত। অর্নব বলে,
-নীলা আমি চলে যাচ্ছি। আর কোনোদিন তোর সামনে আসবো না। তুই তো এটাই চেয়েছিলি তাই না? শুধু মনে রাখিস তোর জন্মই হয়েছিলো আমার জন্যই। তুই আর কখনই কাউকে ভালোবাসতে পারবিনা। সেই অধিকারেই তোকে আজ ....
থামলো একটু অর্ণব। তবুও এই সংসারে এই সমাজে যে স্থান গড়েছিস তুই সেই সমাজ আর সংসারের নিয়ম নীতি আর বেড়াজালে
বিসর্জন দিয়ে গেলাম তোকে। তুই অন্তত ভালো থাক।
অর্ণব চলে গেলো .......
নীলার বলা হলো না নীলা ভালো নেই, ছিলো না কোনোদিন আর থাকবেও না কখনও।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৪:৪১