somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবু তো ফাল্গুন রাতে এ গানের বেদনাতে আঁখি তব ছলছলো....আমার দুঃখভোলা গানগুলিরে ......

২৪ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাঝে মাঝে আমার বুকের গহীনে এক ব্যথার নদী উথলে ওঠে। উথাল পাথাল ঢেউগুলো পাড়ে এসে আছড়ে পড়ে। উত্তাল বেগে ধেয়ে এসে ভেঙ্গে খান খান হয়ে পড়ে বুকের মাঝে বয়ে চলা সেই দুঃখনদীটার তীর ঘেষে। সেই দুঃখের কারণ আমি জানি। আর কেউ জানেনা। এমনকি তুমিও জানোনা কারণ আমি তোমাকে জানতে দেই না আর। তবুও আমার মনের মাঝে ক্ষীন এক সন্দেহ জাগে ঠিক সেই মুহুর্তে হঠাৎ বুঝি তোমারও হৃদয় গভীরের কোনো অজানা তন্ত্রীতে টান পড়ে। তুমিও উতল হয়ে ওঠো।

ঠিক এমন কোনো কারনেই হয়ত রবিঠাকুর লিখেছিলেন- চমকিবে ফাগুনের পবনে, পশিবে আকাশবাণী শ্রবনে, চিত্ত আকুল হবে অনুক্ষন, অকারন! রবিঠাকুর ঠিকই লিখেছিলেন। এই আজন্ম লালিত ভালোবাসার টান উপেক্ষা করা কি আসলেই সহজ! এই নিখাদ ভালোবাসার কথা কেউ না জানুক। অন্তর্যামী জানেন আর জানো তুমি। তাইতো চিত্ত হয় আকুল অনুক্ষন অকারন।

আমরা দূরে সরে গেছি বা প্রকৃতির নির্মম বাস্তবতায় আমাদের বিছিন্ন থাকতে হয়েছেও। এ কথা সত্য বটে তাই বলে ভুলতে কি পেরেছি আমরা? কত মানুষ এলো গেলো, কত ঘটনা দূর্ঘটনা বয়ে গেলো এই নশ্বর জীবনের উপর দিয়ে তবুও বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তোমাকে ভোলা হলো না, ভোলা গেলো না কিছুতেই। ঠিক সেই গানের মত ভুলিতে পারিনা তারে ভোলা যায় না। হয়ত মৃত্যু মুহুর্তেও সকল প্রিয়জনের সাথে বা সবার আগেই মনে পড়বে আমার তোমার মুখটাকেই।

বহু বছর বিছিন্ন থাকার পরে তুমি শোনালে - দেখব কী করে তারে, নীরব অহংকারে, আমার গহন মনে, সে যে গান হয়ে বাজে- কি কষ্ট জানো তুমি! তোমার এ গানের লাইনে লাইনে প্রতি পরতে পরতে বুক ভাঙ্গা কান্না আছড়ে পড়ে আমার সেই বুকের গহীনের দুঃখ নদীর পাড়ে। তুমি তা জানবে না কখনও! হয়তবা জানোও। যে দুঃখনদী বয়ে চলে আমার বুকের গহীনে সেই একই নদীতে নাও বেয়ে চলো তুমিও। সে নাওের মাঝি তো তুমিই। তুমি কখনও কোথাও গান গাও না। তুমি শুধুই গান গাইতে আমার জন্য। আজও তাই গাও। শুধু আমিই তোমার গানের একমাত্র শ্রোতা......আমি জানি তুমি কখন গাও বৃক্ষতলে শুয়ে তোমার দুঃখ ছুয়ে ঘুম আসে না ঘুমও স্বার্থপর!!!আমি পালাই বহুদূরে, ক্লান্ত ভবঘুরে, ফিরব ঘরে কোথায় এমন ঘর! সেই ঘরে ফেরা হলো না আমাদের! তাই হঠাৎ ফিরে দেখি, নিজের মুখোমুখি। শূণ্য ভীষণ শূণ্য মনে হয়। কী আর এমন হবে, কে পেয়েছে কবে, স্বপ্নগুলো স্বপ্ন হয়েই রয়! তবুও এই স্বপ্নগুলো বড় মধুর, বড় সুন্দর!

আমরা একসাথে গেয়েছিলাম- অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে, কই তাহার মত তুমি আমার কথা শুনে হাসো নাতো। অনেক অনুরোধে তুমি এই ডুয়েট রেকর্ড করতে রাজীও হয়েছিলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করা হলো না। আজ এতদিন পর হঠাৎ গানটা শুনে বুকের মাঝে উথাল পাথাল। মনে পড়ে গেলো কত স্মৃতি কত গান!! ঘন্টার পর ঘন্টা আমার মাথার ভেতরে তুমি আর তুমি। আমাদের মাঝে এই জগৎ সংসার সব অদৃশ্য ছিলো। আমরা শুধু দুজন দুজনের কথা ভাবতাম। আর চারিদিক ছিলো আঁধারে ভরা। সেই নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে কারো প্রবেশাধিকার ছিলো না।

এই যে ঈদ আসছে। শপিংমলগুলোতে ঘুরে বেড়াই একা একা। হঠাৎ মনে পড়ে যায় সে সব দিনগুলোর কথা। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে তোমার জন্য কেনা পাঞ্জাবী বা শার্ট। আবার খুব ইচ্ছে করে । পাঞ্জাবীগুলোতে হাত দিয়ে দিয়ে দেখি। যেন আমার আঙ্গুলগুলো ছুঁয়ে যায় এই অদৃশ্য তোমাকেই। আজকাল মেয়েরা অনেক দুঃসাহসী। মিডিয়ার সামনে গলা চড়িয়ে বলছে তারা নাকি বয়ফ্রেন্ডের কাছে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে ঈদ শপিং করতে। ছি ছি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই আমি। ঘেন্না লাগে এমন কথায়। টাকা দিয়ে কি ভালোবাসা কেনা যায়! কি বলে এরা!

অথচ আমাদের দিনগুলোতে ছিলোনা এমন নির্লজ্জতা। আমাদের ভালোবাসায় ছোঁয়া উপহার এই পৃথিবীর কেউ জানেনি। শুধু আমরা জড়িয়ে নিয়েছিলাম পরম ভালোবাসার সকলের অগোচরে। আমরা তো ব্যাকডেটেড। আর এই জেনারেশন জি বড় সাহসী। বড় নিলাজ। খুব জানতে ইচ্ছে করে এই সাহস আর নির্লজ্জতায় কি ভালোবাসা বেশি প্রশান্তির! হয়ত তাই। নয়ত আক্ষেপে কুরে কুরে খাওয়া সকল না পেয়েও আজীবন পেয়ে যাওয়া অপ্রাপ্তির ভালোবাসা বক্ষে ধারণ করে কি হয়! প্লেটোনিক ভালোবাসার সংজ্ঞাতেও তো এটা পড়ে না।


তোমার সাথে ডুয়েট গাওয়া হলো না আমার। হলো না এ গান রেকর্ড করা। তবুও তুমি গেয়েছিলে। আমার জন্য গেয়েছিলে-
অলির কথা শুনে বকুল হাসে
কই তাহার মত তুমি আমার কথা শুনে
হাসো না তো।।
তোমার কথায় আমি যত না হেসেছি এই জীবনে আর বাকী সকলের কথার হাসির জবাবের একাংশও পূরণ হবেনা তাতে। তোমার জন্য আমি কেঁদেছিও ঠিক ততটাই। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। নাক বন্ধ হয়ে নিশ্বাস আটকে গেছে। তবুও কোথা থেকে আসতো এত কান্না জানিনা আমি। আজ আর কাঁদিনা আমি। চোখের পানিতে বুক ভাসে না তবুও মন কেনো কাঁদে? এর উত্তর কে দেবে আমাকে! তুমি গেয়েছিলে-

ধরার ধুলিতে যে ফাগুন আসে
কই তাহার মত তুমি আমার কাছে কভু
আসো না তো।।
হ্যাঁ এ কথা সত্যি! তোমার কাছে আমার আসা হলো না সশরীরে। কিন্তু মন পড়ে রইলো সারাটা জীবন তোমার কাছেই। ঠিক যেন ফের সেই রবিঠাকুরের ভাষাতেই বলতে হয়- তুই ফেলে এসেছিস কারে মোর মন রে আমার, তাই জমন গেলো শান্তি পেলি নারে মোর মন রে আমার।

ইদানিং ব্যস্ততা আমাদেরকে দেয়না অবসর। সেই ২৫ বছর আগের দিনগুলি আজ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। শুধু হৃদয়ে প্রোথিত আছে কান্নাভেজা মুখ, এক অবুঝ ভালোবাসা আর দুঃখে ভাসা চলৎচিত্রের ফিতা...... ছুটির অবসরে ভেসে আসে ফেলে আসা দিনগুলি, ফাগুন দিনে উদাস বেলায় মনে পড়ে যায় কত না পাওয়ার বেদন। সেই অমূল্য বেদন সঙ্গে নিয়ে পথ চলি...... দিন কেটে যায় দিনের নিয়মে, জীবন বয়ে যায় জীবনের পাতায়...... রবিঠাকুরের বাণী ভাসে ফাগুন বাতাসে ......

আমার হেথায় ফাগুন বৃথায় বারে বারে ডাকে যে তায় গো--
ফাগুন ডেকে যায় তার সর্বনাশা ডাকে......
মনে কেমন করে আমার মন কেমন করে
কে জানে কাহার তরে!

অনেক জানার পরেও কাউকেই বলা যায় না এমন কিছু কথা, এমন কিছু নাম যা নিয়ে হারিয়ে যেতে হয় এই প্রেমময় ভালোবাসর পৃথিবী থেকে......
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×