somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যান অব স্টিল

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বান্ধবীর চেয়ে তার বান্ধবী যখন আরো বেশী সুন্দরী হয় এর চেয়ে বিড়ম্বনা আর নেই । বেশ কিছুদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর এক বান্ধবীর ফোন । এইবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । আমি ঢাকায় আর সে বাংলাদেশের অন্য এক প্রান্তে হওয়ায় ফেস2ফেস দেখা হয়নি কখনো । বেশকিছু দিন পর হঠাৎ তার ফোন । আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম ।

হ্যালো, রাহাত ।
-আরে মিতু । কেমন আছো?
এই তো ভাল । তুমি কেমন?
-হুমম । ভুলেই তো গেছিলে ।
তাহলে কল দিল কে? শোন, আমার বান্ধবীরা ঢাকায় গেছে ভার্সিটি ভর্তি কোচিং করতে ।
-ও তাই? তুমি আসোনি?
না, আসলে তো দেখাই করতাম । আমার আসা হচ্ছে না । ওরা তিনজন গিয়েছে ওখানে ।
-কোন তিনজন বল তো?
:-ওইযে ফাবিহা । আর আরেকটা মিতুর কথা বলেছিলাম না? ও । অন্যজনও আমার ক্লাসমেট । তোমাকে যদিও ওর কথা বলা হয়নি ।
-ওইযে সুন্দরী দুইটা?
:-এই শয়তান । শোন, ওরা তো ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলো তেমন চিনেনা । তুমি ওদের হেল্প করলে ভাল হয় । তোমার বাসা কতদূর ফার্মগেট থেকে?
-এইতো খুব কাছেই । ব্যাপার না, দূরে থাকলেও চলে আসবো । তোমার বান্ধবী মানে তো আমারও...
:-এইইই । বন্ধুত্বের চেয়ে বেশী কিছু করতে যেওনা…..
অনেকটা শাসানোর ভঙ্গিতেই বললো মিতু । এদিকে ফোনে তার দুই বান্ধবীর কথা শুনে মনে মনে কত যে কল্পনার ছবি এঁকে ফেলেছি তার ইয়ত্তা নেই ।
হঠাৎ এমন সুযোগ মিলে যাবে ভাবিনি । সুন্দরী ঢাকায় এসেছে, চেনেনা... মাঝে মধ্যে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব বর্তেছে আমার উপর । মানুষের মনে ঢুকে যেতে এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর কী হতে পারে ।
দুইদিন বাদেই ফোন এল...

:-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম (?)
:-রাহাত বলছেন?
-জি জি । (আমিতো তখনই জিজ্ঞেস করে ফেলি, কে ফাবিহা না মিতু...।
কিন্তু ওয়েট রাখাটাও জরুরী, তাই ঠোট পর্যন্ত নিয়েই 'গিয়ার' পেছন দিকে ঘুরিয়ে কথাটা আবার ভেতরে নিয়ে আসলাম!)
:-…আমি ফাবিহা । মিতুর ফ্রেন্ড । চিনতে পেরেছেন?
-ও হ্যা । মিতুর সাথে কথা হয়েছে আমার ।
:-ও আচ্ছা । আগামীকাল একবার আসতে পারবেন?
-অবশ্যই । আপনি চাইলে আজও আসতে পারি । আমি ফ্রি আছি আজকে... (ক্লাস ছিল যদিও!)
:-না না । আজ আমাদের ক্লাস আছে । আজ থাক । কালই যাই ।
-আচ্ছা । ‘ফ্রি লি বলে ফেলবেন । সঙ্কোচ করবেন না কিন্তু।’ এই লাইনটুকু বলা হয়নি । ইচ্ছে ছিল ।
ওপাশ থেকে ফোনের লাইন কাটার শব্দ ভেসে এলো । ফোন কেটে দিলেও যে মানুষের মনে এতো আনন্দ হতে পারে আমাকে না দেখলে কেউ বুঝবেই না ।
পরদিন সকাল সকাল রেডি হয়ে বসে আছি । কখন ফোন আসে...।
ফোন এলো, সকাল গড়িয়ে দুপুর হওয়ার পর ।
:-হ্যালো ।
-হ্যা ...কী যেন । দুঃখিত, ফাবিহা... হ্যা ফাবিহা বলেন ।
-আপনি কী ফার্মগেট এসেছেন?
:-আরে না । আপনিতো আমাকে আগে বলেন নি । বললে হয়তো সময় করে আগেই পৌঁছতে পারতাম । সমস্যা নেই, রেডি হয়ে আসতে বড়জোর পঁচিশ মিনিট লাগবে । (আমি রেডি হয়েই বসে ছিলাম, এইটা বলা অনর্থক।)
আপনারা কোথায়?
:-আমরা রেডি । আপনি তাড়াতাড়ি আসুন । ওভার ব্রীজটার ওখানে একটা গার্ডেন আছে না? আমরা ওখানে অপেক্ষা করছি ।

‘আচ্ছা আমি আসছি’ বলেই ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে পড়লাম । তবে আমার কথা সে শুনেছে নাকি তার আগেই লাইন কেটে দিয়েছে, খেয়াল করিনি ।

পঁচিশ মিনিট বলে বিশ মিনিটের মধ্যেই আমি হাজির ।
গার্ডেনে ঢুকেই দুইটা মেয়ের উপর চোখ আটকে গেল । চোখ সরানোই দায় । অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোলে নিলাম । মনকে বুঝালাম আমি তো কারো সাথে দেখা করার জন্য যাচ্ছি । ফাবিহার নাম্বারটা ডায়াল করেই ফোন সেটটি কানে ঠেকালাম ।
কী আশ্চর্য! সেই দুই মেয়ের একজনই ফোনটা রিসিভ করলো । মনে আকাশে তখন আনন্দের বৃষ্টি হচ্ছে । আবারো নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটার চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করলাম, আপনিই...
“আপনি রাহাত?” আমাকে শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলো সে ।
‘ঠিক ধরেছেন । আমিই রাহাত । আপনার আন্দাজ আছে বলতে হবে । হা হা ।’

‘আচ্ছা আমরা আজ আমরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যাবো ।’
‘...ওই রাস্তায় অনেক ভিড় বুঝলেন । ওখানে গেলে ফিরতে রাত হয়ে যাবে ।’ (চাচ্ছিলাম এমন কোথাও নিয়ে যেতে । যেখানে গেলে রোমান্টিক একটা ফিলিংস আসবে।)
‘চলেন স্মৃতিসৌধ দেখতে যাবো ।’
‘না না । তাহলে রাতেও ফিরতে পারবো না !’

‘তাহলে?’ ফাবিহা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
‘চলেন স্টার সিনেপ্লেক্সে Mission Impossible : Ghost Protocol চলতেছে । ভাল লাগতে পারে আপনার ।’
বলার পর মিনিট পেরোনোর আগেই মেয়ে বাতিল করে দিল । তার নাকি ওসব ইংরেজী ছবি দেখতে ভাললাগে না ।

অবশেষে ধানমন্ডি লেকে যাবো ঠিক হলো । গেলাম । নৌকায় চরলাম । মাঝে মধ্যে কপোত-কপোতীদের দিকে ইঙ্গিত করে কিছু বুঝাতে চাইলাম । কিন্তু মেয়ে দুইটার এদিকে নজর নেই । তারা একে অন্যকে পানি ছিটাচ্ছে, মজা করছে । আমি মনে মনে ভাবছি, ময়না পাখিরে আমারেও একটু ভিজাও না ।

সেদিনের পর আরো একবার ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম । সেবার গিয়েছিলাম বসুন্ধরা সিটিতে । শপিং করতে ।

এরপর প্রায় সপ্তাহ খানেক বিরতি । এদিকে আমি প্রায় হতাশ । অগ্রগতি কিছু হয়নি । ওপাশ থেকে টানা সাত-আট দিন কোন সাড়া নেই ।
মনকে সান্তনা দিলাম । যার কিছু নেই তার সান্তনা আছে । তবে সে কি ভাবছে?
আজই হয়তো ফোন দিয়ে মনের কথা জানিয়ে দিলে বলবে, “চলো, আজ আমরা সংসদ ভবনের ওইদিকটায় যাই ।”

কিছুদিন পর হঠাৎ এক সকালে ফোন বাজার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । মোবাইলের ডিসপ্লেতে চোখ পড়তেই একলাফে উঠে বসলাম । সাড়ে নয়টা বাজে সেই জন্য না । ফাবিহার কল!

হ্যালো ।
-হ্যা, ফাবিহা ।
রাহাত, কেমন আছেন?
-আমার আর থাকা ।
কেন কী হয়েছে?
-বাদ দেন সেসব । আপনি কেমন আছেন? (কী হয়েছে সেটা কিভাবে বলি । তুমিইতো প্রতিনিয়ত হতাশ করে চলেছো।)

হুমম । আমিও ভালো । আজকে ফ্রি আছেন?
-উমমম... হ্যা আছি । কোথাও যাবেন নাকি?

:-হ্যা, আজকে আমার বয়ফ্রেন্ড ঢাকায় আসতেছে । ওকে বলেছি আপনার কথা । ও আপনাকে ইনভাইট করেছে । স্টার সিনেপ্লেক্সে নাকি সুপারম্যান সিরিজের Man Of Steel চলছে । আমরা সবাই একসাথে দেখবো । আপনি অবশ্যই আসবেন কিন্তু ।
:-- ০_০ >_< ০_০ ০_০ >_< ০_০… (মনের কেউ বুকের ভেতর হাতুড়ী দিয়ে বাড়ি মেরেছে)

পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ।
আরে ‘ম্যান অব স্টিল’ দেখে মজা আছে নাকি? :(
আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া যেতোনা? এরপর দুজন মিলে আশিকি টু দেখতাম ।

এরপর জগজিৎ সিং-এর ‘বেশী কিছু আশা করা ভুল’ গানটা গাইতে গাইতে বালিশের নিচে মুখ লুকালাম...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×