somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

—— জ্বীনের আছর ( এপিলেপসি) ——

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এটা একটা সত্য ঘটনা হলেও আমার চোখে দেয়া নয় আমি শুনেছি আম্মুর কাছে , এটা আমার জন্মের আগের ঘটনা আমার এক কাজিনের, তবে ভয়ের কিছু নেই ।
ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশের একটা গ্রামে যখন আমার খালামনির বিয়ে হয় এই গ্রামে তখন এটা একেবারেই অজপারা গাঁ ছিল। ফ্যান্টাসি কিংডম তো অনেক পরে হয়েছে তখন না ছিল কারেন্ট , না ছিল ভালো যোগাযোগ ব্যাবস্থা । এখন অবশ্য সেই গ্রাম আর গ্রাম নেই , বড় বড় অট্টালিকায় কারেন্ট, গ্যাস সবই আছে। খালামনিদেরও শক্ত মাটির ঘরের পরিবর্তে এখন নিউ মডেলের ডুপ্লেক্স বাড়ি।

আমার খালামনির বড় মেয়ে নীলা বয়স , এগারো/ বারো হবে দেখতে বেশ সুন্দরী । কয়েকদিন ধরে ওর জ্বর। বিকাল বেলা নীলা বিছানায় শুয়ে আছে পাশেই খালামনি বসে আছে। হঠাৎ নীলার মাথা বাঁকা হয়ে পিছন দিকে চলে যাচ্ছে ।
- খালামনি , সোনা তুমি এমন করছ কেন ?
- নীলা , মা আমি চোখে কিছু দেখতেছি না । খালামনি তাকিয়ে দেখে নীলার চোখের মনি ভিতরে চলে গিয়েছে মানে চোখদুটো উল্টো হয়ে চোখের মনি ভিতর দিকে চলে গিয়েছে ও নীলার সারা শরীর শক্ত হয়ে গিয়েছে । খালামনি জোরে চিৎকার করছে , এতে তার শাশুরী,ও জায়েরা সবাই আসে , উনারাও নীলার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়, কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না, এই সময়ে পুরুষ মানুষ কেউ ঘরে নেই । তাদের বাড়ির পাশে ছিল এক মহিলা কবিরাজ, খালামনিদের পরিবার এসব বিস্বাস করত না তাই তাদের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল না ।
খালামনির শাশুরী নাতনির অবস্থা দেখে তাল বেতাল হারিয়ে সেই মহিলাকে ঢেকে এনেছে । সেই মহিলা সরিষার তেলে ফু দিয়ে নীলার চোখে লাগিয়েছে চোখ ঠিক হয়েছে।
আবার রাত দশটার দিকে একই অবস্থা, তখন পুরুষ মানুষ ঘরে থাকলেও এত রাতে এই গ্রামে ডাক্তার পাবে কোথায় তো আবারও ঐ মহিলাকে ডেকে আনা হল সে এবারও সরিষার তেলে ফু দিয়ে নীলার চোখে লাগালে ঠিক হয় ।
তখন মহিলা বলেন, জ্বীনে আছর করেছে তাবিজ দেয়া লাগবে, তার জন্য একটা মোরগ আরো কিছু জিনিসের নাম বলে, এগুলো দেয়া লাগবে। আমার খালামনির শাশুরী তাকে বলে, আচ্ছা সকালে সব পাঠিয়ে দিব।মহিলা যাওয়ার পর আমার খালু খুব রেগে যায় আমার খালামনির উপর ও তার মায়ের উপর ।সবাই তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে এখন বিপদের সময় কি করব । রাতে আরো দুইবার এরকম হয়ছে নীলার, কিছুক্ষন পর আবার ঠিকও হয়ে যায় এমনিতেই।

নীলার বাবা সকালে সাভার যেয়ে ডাক্তার নিয়ে আসে। ডাক্তার নীলাকে দেখে সব কিছু শুনে, ডাক্তার ধারনা করে নীলার এপিলেপসি ( মৃগি রোগ) হয়েছে সে কিছু ঔষধ দিয়ে বলে, এগুলো খাওয়াতে থাকেন ঠিক হয়ে যাবে।

নীলার দাদী তাদের পোষা মুরগী থেকেই একটা মোরগ আর অন্যান্য জিনিস মহিলাকে পাঠিয়ে দেয়।( বাসার পুরুষ মানুষকে এটা জানানো হয় না)
মহিলা বিকালে একটা তাবিজ দিয়ে যায় আর জানায় , নীলাকে অনেক বড় জ্বীনে আছর করেছে সে একা এটার সাথে পারবে না , এজন্য তার উস্তাত আছে তাকে লাগবে ( সে পুরুষ ও এই গ্রামেই তার বাসা ) তবে গ্রামের কেউই এই লোককে পছন্দ করে না, ভয়ও পায় সে নাকি তাবিজ টাবিজ করে মানুষের ক্ষতি করে ।
নীলার দাদী কোন কিছু না ভেবেই মহিলাকে বলে দেয় ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো আমার নাতনী ভালো হলেই হল।
নীলা ডাক্তারের ঔষধ খাচ্ছে তাবিচও গলায় ঝোলানো আছে। সে আস্তে আস্তে সুস্থ্য হতে থাকে ও অল্প দিনেই পুরো সুস্থ্য হয়ে যায় ।
একদিন ঐ মহিলা এসে নীলার দাদীকে জানায়, তাবিজের জন্য জ্বীন এখন নীলার কাছে আসতে পারছে না, কিন্ত দুর থেকে নীলার দিকে নজর দিচ্ছে যদি তাবিজ হারিয়ে টারিয়ে যায় তাহলেই আবার নীলার উপর ভর করবে তাই নীলার চিকিৎসা প্রয়োজন ।
নীলার দাদী তার জন্য কি করতে হবে জানতে চায় ।
তখন মহিলা জানায়, জ্বীনে নাকি চার পা চায়( গরু ) সাথে দশ কেজি পোলাও এর চাল আরো মসল্লা টসল্লা অনেক কিছু দিতে হবে তারা সিন্নি নাকি কি করে জ্বীন তাড়াবে।
নীলার দাদী বলে, আমাদের পুরুষ মানুষ এসব বিস্বাস করে না, তখন আমার নাতনীর অবস্থা দেখে আমার মাথা ঠিক ছিল না তাই তোমাকে ডেকে ছিলাম , মুরগী চেয়েছ আমি কাউকে না জানিয়ে এটা দিতে পেরেছি কিন্ত একটা গরু আমি কি ভাবে দিব! পুরুষ মানুষকে না জানিয়ে এটা তো আমি দিতে পারবো না , আর স্বাামী, ছেলে জানলে আমাকেই বাড়ি থেকে বের করে দিবে।এটা আমি দিতে পারবো না, উনাকে জানিয়ে দেয় ।
মহিলা একটু রেগে যেয়ে, তাহলে তোমার নাতনীর কোন ক্ষতি হলে আমাদের আর ডাকতে পারবা না।

নীলার দাদী একটু ভয় পেয়ে যায় কিন্ত একটা গরু তো তার পক্ষে দেয়া সম্ভব না , গরুর পরিবর্তে যদি সে তাদের টাকাও দেয় গোপনে কিন্ত কথাটা তো গোপন থাকবে না তখন তার স্বামী ছেলেরা জানলে তার সমস্যা হবে।
কথাটা সে নীলার মায়ের সাথে ও ছোট ছেলের সাথে শেয়ার করে তারাও বলে এটা কি ভাবে সম্ভব ,আর আমরা তো নীলাকে ডাক্তারও দেখিয়েছি সে ঔষধ খেয়েই নীলা ভালো হয়েছে উনারা বলে।

ওনারা চুপচাপ থাকাতে কিছুদিন পরে ঐ মহিলা এসে আবার জানায় তার উস্তাত বলেছে তার উস্তাদ জ্বীনকে বলে কয়ে রাজী করিয়েছে এখন চার পায়ের পরিবর্তে দুই পা (মোরগ) দিলেই হবে । নীলার দাদী, এটাও নীলার মা ও ছোট ছেলের সাথে শেয়ার করে ও এটা নিয়ে হাসাহাসি করে।তবু এবার তারা সিন্ধান্ত নেয় একটা মোরগ এক কেজি চাল দিবে ।

নীলার চাচা বিকাল বেলা বাড়ির পাশে ছোট চায়ের দোকানে বসে তার বয়সী ছেলে পুলের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল, (উস্তাদের ছেলেও ছিল) তাদের সাথে গল্পের মাঝেই বলে আমার ভাতিজ্বীকে জ্বীনে আছর করেছে এতদিন সেটার চারপা ছিল এখন সেটার দুইপা হয়েছে । সবাই এটা নিয়ে হাসাহাসি করে এটা উস্তাদের ছেলের ইগুতে লাগে সে বাড়ি যেয়ে এটা নিয়ে বাবার সাথে রাগারাগি করে ।
উস্তাদ রাগ হয়ে নীলাদের বাড়িতে জানিয়ে দেয় , এখন আর কিছুই দিতে হবে না , দিলেও সে নিবে না ।
নীলাদের বাড়ি থেকে আর কিছু দেয়া হয়নি ।

নীলা এর পর থেকে আজ পর্যন্ত সুস্থ্যই আছে , কবিরাজের কথা মত কোন জ্বীনও নীলাকে ডিষ্টার্ব করেনি , ডাক্তারের কথামত এপিলেপসির কোন লক্ষনও আর দেখা যায়নি।

অফ টপিক : লেখার উপরে যেমন একটা ফটো দিলে লেখার আকর্ষন বাড়ে নিচেও একটা ফটো না দিলে আমার ভালো লাগে না ।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৩
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×