এক পাশে ছায়া শীতল মায়াবী মেঠোপথ , আরেক পাশে কল কল রবে বয়ে চলা ছোট নদী, নদীর পার ঘেঁসে শুভ্র চাদর বিছিয়ে আছে কাশফুলের ঝোপ, ভোরে নানা জাতের পাখির কলকাকলিতে গ্রামবাসীর ঘুম ভাংগে। গ্রামের নাম রূপ নগর।
গ্রামের লোকগুলো সহজ ,সরল তাদের চাওয়া পাওয়া খুবই অল্প , তারা নিজেদের সুখ - দু:খ গুলো ভাগাভাগি করে পরস্পরসহযোগীতায় তারা ভালই আছে , আর তাদের মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে আছে চৌধুরী সাহেব।
ঢাকার অদুরে এই গ্রামেই বর্তমানে শিল্পপতি আহাদ চৌধুরী বাস করেন। এটা তার পৈত্রিক গ্রাম, এই গ্রামেই তার জন্ম বেড়ে ওঠা হলেও এস এসসি পাশ করার পরই ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ছোট একটা ব্যাবসা শুরু করেন গার্মেন্টসের ফেলে দেয়া টুকরো কাপড়ের । তার মেধা ও পরিশ্রমের কারনে সেই ছোট ব্যাবসা আজকে মহীরুহে দাঁড়িয়েছে সমাজে তাকে প্রতিষ্টত করেছে বিশিষ্ট শিল্পপতি হিসেবে। আজ তার নিজেরই ছোট,বড় কয়েকটা গার্মেন্টস, আরো আছে রিয়েল ইষ্টেট ব্যাবসা ও রুলিংমিল।
গ্রামের প্রতি তার আন্তরিকতার কমতি ছিল না কখনো । গ্রামের মানুষকে, টাকা পয়সা , চাকরী আরো বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন সব সময় ।
তবু চৌধুরী সাহেবের মনে হল গ্রামের মানুষের জন্য তার আরো কিছু করা দরকার বয়সের সাথে সাথে টাকা পয়সা তো অনেক হল আর কত! এ চিন্তা থেকেই তিনি গ্রামেই তৈরী করেন চৌধুরী ভিলা।
আজ থেকে পনের বছর আগে নিজের ব্যাবসা বড় দুই ছেলেকে বুঝিয়ে দিয়ে ষাট বছর বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে স্থায়ী ভাবে গ্রামে ফিরে আসেন। অবশ্য চৌধুরী ভিলাকে কোন ভাবেই গ্রাম বলা ঠিক হবে না বরং চৌধুরীভিলাকে রূপ নগর গ্রামের রাজধানী বলা যায়। অত্যাধুনিক ডিজাইনের ডুপ্লেক্স বাসা, বাসার ভিতরে দরজার লক থেকে টয়লেটের কমোট, বাথটাব সবই বিদেশী। উপর তালায় নিজেদের রুম ছাড়া পাঁচ ছেলে মেয়ের পাঁচ টা রুম যার যার পছন্দ মত আসবাসপত্র দিয়ে সাজানো আছে, নীচ তলাতে বড় লিভিংরুম,কাম ডাইনিং ও কিচেন, সামনে অনেক জায়গা নিয়ে ফুল, ফলের বাগান। সব মিলিয়ে গ্রামীন পরিবেশে অপূর্ব সুন্দর বাড়ি।
বাগানের বাহিরে চার রুমের এক তলা দালান । আর এটাই হল বর্তমানে চৌধুরী সাহেবের কাছারি ঘর। সেখানে সন্ধ্যা বেলায় গ্রামের নিরক্ষর লোকদের লিখা পড়া শিখানোর পাশাপাশি উন্নত ও আধুনিক কৃষি ব্যাবস্থা ,গবাদীপশু পালন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর জন্য উনি গ্রামেরই এসব বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন । মাসে একবার গ্রামের মানুষের ফ্রি চিকিত্সা ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন। ছোট ছেলে ও ছেলের বউ দুজনেই ডাক্তার , তাঁরাই প্রতি মাসে একবার এসে রুগী দেখেন।
এছারা উনি মাসে একবার গ্রাম বাসীদের সুখ- দুঃখের খবর নেন। পারিবারিক সমস্যা, সমাজিক সমস্যা সব বিষয়ে কথা হয় উনি বিভিন্ন পরামর্শ বা প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
গ্রামবাসীরা চৌধুরী সাহেব কে পাশে পেয়ে খুব খুশী । তারা চৌধুরী সাহেবকে যেমন ভালোবাসে তেমনি সন্মান করে । নিজের ছেলে,মেয়ে, নাতি , নাতনিরাা সাথে না থাকলেও চৌধুরীসাহেব গ্রাম বাসীদের মধ্যমনি হয়ে বেশ ভালো আছে। ছেলে মেয়েরা বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বছরে দুই ঈদে আসে তখন বাড়িটা বেশ সরগরম থাকে তা ছাড়া চৌধুরী ভিলা নীরব ই থাকে।
চৌধুরীর ৩ ছেলে ২ মেয়ে। সবাইকে উনি নিজের মত অভিজাত ফ্যামেলীতেই বিয়ে শাদী দিয়েছেন একমাত্র ব্যাতিক্রম ছোট মেয়ে আছবা ( এই আছবাই হল আমার গল্পের মূল চরিত্র )
আছবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স শেষ করার পরই চৌধুরী সাহেব মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন তার গ্রামের এক হত দরিদ্র বিধবা মায়ের একমাত্র ছেলে সাহেদ এর এর সাথে । সাহেদ অত্যান্ত মেধাবী, ভদ্র , ও সৎ গায়ের রং কালো হলেও লন্বা , স্মার্ট । যে চৌধুরী সাহেবের সাহায্যে বুয়েট থেকে আইডি ইন্জিয়ার কোর্স শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য সুইডেন আসেন পরে এরিকসনে জব পেয়ে এখানেই থেকে যায় ।
আছবা এই প্রস্তাবে কিছু না বল্লেও ভাই বোনেরা সবাই অমত করে কিন্ত চৌধুরী সাহেব বলেন , আমি জানি আমার মেয়ের জন্য আমার মত অভিজাত ফ্যামেলীর শিক্ষিত ছেলেই পাব কিন্ত আমার ছোট মেয়েটা সবার অতিরিক্ত আদরে একটু রাগী আর পাগলাটে ধরনের হয়েছে ওর কোন কথায় কখনো না বলা যায় না, সাহেদের আমার মত অভিজাত ফ্যামেলী নেই, সে উচ্চ শিক্ষিত বিদেশে ভালো জব করে তাছাড়া সে আমার হাতে তৈরী ছেলে সে নম্র,ভদ্র শান্ত ছেলে তার কাছে আছবা সুখে থাকবে আমার বিস্বাস। এই বিস্বাসটা আমি অন্য কারো উপর পাচ্ছি না। আছবার যদি অমত না থাকে তাহলে আছবার বিয়ে এখানেই হবে চৌধুরী সাহেবের এই কথায় ছেলে মেয়েরা আর কোন কথা বলে না, অবশেষে অনেক ধুম ধামের সাথেই আছবা সাহেদের বিয়ে হয় তাও আজ থেকে ১৩ বছর আগে ।
বিয়ের প্রায় এক বছর পরই আছবা সুইডেন চলে আসে।
হঠাৎ করে অসময়ে চৌধুরী ভিলায় আনন্দ আর উৎসবের সারা পাওয়া যায়। একজন থেকে একজন করে এই আনন্দের কিছুটা সুবাস সারা গ্রামেই ছড়িয়ে যায়। গ্রামের সবার মুখেই একই আলোচনা ১২ বছর পর চৌধুরী সাহেবের ছোট মেয়ে আসছে বিদেশ থেকে। সবার ভিতরই বিভিন্ন রকমের কৌতুহল হচ্ছে।
অবশেষে শুভদিনে আছবা ও তার স্বামী ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে সেখান থেকে ভাই-বোনদের সাথে সোজা রূপনগর ।
গ্রামের বৌ,ঝি পোলাপাইনরা কান খাড়া করেই ছিল, তাদের গাড়ির শব্দ শুনেই গ্রামের ছেলে মেয়ে বুড়োরা এসে গাড়ির পাশে দাড়ায় আছবা গাড়ি থেকে নেমে হাই হিলে ঠক ঠক শব্দ তুলে সামনে আগাতে থাকে মায়ের দিকে। হঠাৎ কিছু দেখে আছবার বুকের ভিতর ধ্বক করে উঠে পাদুটো থমকে যায়,সে নিজের অজান্তেই দিক পরিবর্তন করে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় ——চলবে ।
( এটি সম্পূর্ন কাল্পনিক একটা গল্প )
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৫