আজ ২৭ আগষ্ট প্রথমআলোর তথ্যানুযায়ী আরও ২২ জন সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হলো। এই নিয়ে মোট ১৩৯ জন। ২৫ আগষ্ট আক্রান্তকারীদের সংখ্যা ছিলো ১০৪ জন। অপ্রিয় হলেও সত্য দেশের জনগন সোয়াইন ফ্লুর ব্যাপারে তেমন কিছুই জানেন না। তাই প্রিন্ট আর প্রেস মিডিয়াকে আমি অনুরোধ করবো সরকারের আশায় বসে না থেকে সোয়াইন ফ্লুর প্রচারণা বৃদ্ধির জন্য। আমাদের সরকার কতটা ধীরগতিসম্পন্ন তা ইতোমধ্যেই আমরা বুঝে গেছি। আর মহামারীর আকার ধারনের পর সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কোনো লাভই হবে না। তাই সরকারের আশা ত্যাগ করে প্রিন্ট এবং প্রেস মিডিয়াকে তৎপর হওয়ার অনুরোধ করলাম।
--------------------------------------------------------------------------------
ব্লগারগনের সুবিধার জন্য উইকিপিডিয়া থেকে সরাসরি সোয়াইন ফ্লুর আর্টিকেলটি এখানে তুলে দিলাম. . .
সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জাঃ
সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে মানব মৃত্যুর কারন বলে চিহ্নিত হয়েছে। এটি মূলত শূকরের মাঝেই পাওয়া যেত যা কিনা শূকরকে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত করত। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতই এটি শ্বাসনালীতে সংক্রমন করে থাকে। পূর্বে সোয়াইন ইনফ্লেঞ্জা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত না করলেও ধারনা করা হচ্ছে, ২০০৯ সালের এপ্রিলে উদ্ভব হওয়া ভাইরাসটি মানুষ, শূকর ও পাখির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংমিশ্রনে। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস টাইপ A (H1N1)।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৯ এর জুন মাসে বিশ্বের ৭৪ টি দেশে নতুন H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতির কারনে এই রোগের সাম্প্রতিক অবস্থাকে বিশ্বব্যাপি মহামারি (Pandemic) বলে চিহ্নিত করেছে[১]। বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার মতে সাম্প্রতিক এই সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা মানব ইতিহাসের সবচাইতে আগে হতে এবং বেশি পর্যবেক্ষণ করা মহামারি। [২]
কীভাবে মানুষের দেহে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়ায়ঃ
মানুষ, শূকর ও পাখির সংমিশ্রনে উদ্ভব হওয়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এই রূপটি সম্পর্কে ধারণা করা হয় এটি শূকরের মাধ্যমে মানুষকে আক্রান্ত করেছে। ইতি পূর্বের এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে এটির পার্থক্য হচ্ছে এই যে, সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে সক্ষম। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে যা দেখা যায় নি।
যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মানব শরীরে ঢুকবার স্থান (Portal of entry) শ্বাসনালী, বিধায় সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও শ্বসনের মাধ্যমে ছড়ায়। শ্বাস নালীর উপরের অংশে (Upper respiratory tract) এটি স্থান নেয়। আক্রান্ত মানুষের হাচি, কাশি প্রভৃতির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত নির্জীব বস্তু যেমন রূমাল, দরজার হাতল, প্রভৃতির মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গ স্পষ্ট হওয়ার ১ দিন পূর্ব থেকে আক্রান্ত হওয়ার ৭ দিন বা ততোধিক দিন পর্যন্ত অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে। তবে খাদ্য বা রক্তের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়ায় না।
উপসর্গসমূহঃ
সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গসমূহ অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের মতই। সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের মধ্যে জ্বর হওয়া, মাথা ব্যথা, গলা ও শরীর ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, ক্ষুদামন্দা ও আলস্যবোধ করা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম|
কাদের জন্য বিপদজনকঃ
যে সকম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বিশেষ করে শিশু ও বয়বৃদ্ধদের জন্য সোয়াইন ফ্লু বেশী বিপদজনক। এছাড়া হাঁপানী এবং হৃদরোগ আক্রান্ত মানুষেরও এ ফ্লু সম্পর্কে বিশেষ সাবধান থাকা উচিত। তাছাড়া যারা এমন রোগে ভুগছেন যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় যেমন, এইডস তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।
সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ করা
সোয়াইন ফ্লু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে শরীর সুস্থ রাখার সব রকম চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে নিজের ফ্লু হলে তা যেন অন্যকে আক্রান্ত না করে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক। যে সমস্ত কাজ সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে,
• অসুস্থতার সময় হাচি বা কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করুন।
• ফোমাইট (Fomite) বা নির্জীব বস্তু যেমন দরজার নব, কম্পিউটারের কী বোর্ড, মাউস প্রভৃতি নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার রাখুন।
• কফ ও শ্লেষ পরিস্কার করার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করা এবং ব্যবহারের পরে নিরাপদ স্থানে ফেলুন।
• সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিস্কার রাখা বিশেষ কফ ও শেষ পরিস্কার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করুন।
• রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন।
• আক্রান্ত হলে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করুন।
• আক্রান্ত হলে স্কুল, কলেজ অথবা কর্মস্থলে না গিয়ে বাড়ীতে, অন্যদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকুন, যাতে অন্যরা আক্রান্ত না হয়।
[সনাক্তকরনের উপায় (Diagnosis):
সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য প্রথমেই সন্দেহভাজন ব্যক্তির লালা, নাসিকা রসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহিত নমুনা ভাইরার ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া (VTM)-এ সংরক্ষণ করে নমুনা পরীক্ষণ গবেষণাগারে (Diagnosis lab) নিয়ে আসা হয়। পরবর্তিতে নমুনা হতে নিউক্লিক অ্যাসিড এক্সট্রাক্সন (Nucleic Acid Extraction) করা হয়। তারপর রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পিসিআরের মাধ্যমে নমুনাতে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। বর্তমানে অত্যাধুনিক রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পিসিআর (Real Time RT PCR) এর মাধ্যমে খুব দ্রুত ভাইরাসের উপস্থিতি ও সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।[৪]
পরের অংশটুকু এই লিংক থেকে নেয়া হয়েছে। এটাও ব্লগারগনের সুবিধার জন্য করা হলোঃ
চিকিৎসা ও টিকাঃ
চিকিৎসা আছে, তবে এরচেয়ে প্রতিরোধ বেশী গুরুত্বপূর্ন। বর্তমানে অসিলটামিভির (ট্যামিফ্লু) নামক ওষুধ কার্যকরী ও বিশ্বব্যাপী ব্যবহƒত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ ড্রাগ পাওয়া যায়, তবে কিছুটা দামী। সকালে ও রাতে ১টি ওষুধ ৫-৭ দিন খেতে হয়। রোগ না হওয়ার জন্য প্রতিদিন ১টি করে ট্যাবলেট ৬ সপ্তাহ খেতে হয়। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ট্যামিফ্লু ও রেলেনজা নামের দু’টি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করতে হবে। মানুষের জন্য সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস প্রতিরোধে এখনো কোন টিকা আবিষ্কার হয়নি। তবে অদূর ভবিষ্যতে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে H1N1 কে ঠেকানোর জন্যে।
প্রতিরোধ ও করণীয়ঃ
মুক্ত বিশ্বের এই যুগে সোয়াইন ভাইরাস দমন করা খুবই কঠিন। দেশের প্রবেশ পথগুলো যথা স্থল ও বিমান বন্দরে প্রবেশকারীদের স্ক্রিনিং ব্যবস্থাটা আরো জোরদার করতে হবে। এই ধরনের উপসর্গের রোগী পেলেই তাদেরকে আলাদা (Isolation) করে রেখে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করতে হবে। কারন এই আলাদা করে রাখার ব্যবস্থাটায় সবচেয়ে বেশী জরুরী। কেননা আমাদের দেশে এই ভাইরাসের সবচেয়ে বড় বন্ধু হলো অল্প স্থানে অধিক সংখ্যক লোক বাস করার পরিবেশ। একবার এই রোগ গ্রামে-গঞ্জে বা শহরে ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারীর আকার ধারন করবে। কোনভাবেই তা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবেনা। তাই এধরনের সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই আপনার কাছাকাছি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা সিভিল সার্জন অফিসে খবর দিন। আমাদের দেশের স্বাভাবিক নিয়মানুসারে প্রারম্ভিকভাবে বেশ তোড়জোড় দেখা গেলেও বর্তমানে স্বাস্থ্য-সেবার সাথে যুক্ত প্রশাসনিক মাধ্যমগুলোতে কিছুটা স্তিমিতভাব পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে, যদিও সরকার যথেষ্ট সচেতন আছেন এব্যাপারে। সামান্য ঢিলেঢালা ভাব আর একটু অসচেতনতায় যথেষ্ট এ মহামারীর বিস্তার ঘটাতে দেশব্যাপী। বর্তমানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষিত প্যানডেমিক এলার্ট ৬ পর্যায়ে আছে আন্তর্জাতিকভাবে। তাই প্রতিরোধে যা করবেন-
১) হাঁচি-কাশি লাগলে নাক-মুখে হাত না দিয়ে টিস্যু পেপার বা রুমাল চাপা দিন, যাতে তা না ছড়ায়। পরে
তা ফেলে দিন বা ধুয়ে ফেলুন। হাত চাপা দিলে কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিন। যত্রতত্র থু থু ফেলার অভ্যাস নিজে
পরিবর্তন করুন, অন্যকেও পরিত্যাগ করতে বলুন।
২) যাদের এধরনের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
৩) সন্দেহজনক করমর্দন এড়িয়ে চলুন। এরকম ঘটে গেলে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৪) এধরনের কেউ দরজার হাতল বা অন্যকিছু ধরলে তা কড়া ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করুন।
৫) এধরনের কারো কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা থাকলে নাক-মুখ ঢাকার মুখোশ ব্যবহার করুন।
----------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:৩৮