somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

........ একটি ছোট্ট ইচ্ছে ই যথেষ্ট .......

২৭ শে এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.

সবে মাত্র হাইস্কুলে পা দিয়েছে তুহিন , প্রতিদিনের মত সেদিন ও স্কুলে যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট দোকানটি থেকে চুইংগাম কিনতে গিয়ে খেয়াল হলো রাস্তার ওপাশে একটা বেশ বড় জটলা দেখা যাচ্ছে , তুহিনের কৌতুহলী দৃষ্টি মানুষজনের জটলাটির একটু নিকটবর্তী হতেই আতঙ্কে গা শিউরে উঠলো , এ কি দেখছে সে ? মানুষ কেমন করে এমন করতে পারে ? কি বিভৎস .... আশে পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষের মাঝে তেমন কোন ভাবের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না , সবার কাছেই এটা যেন খুব একটা স্বাভাবিক ঘটনা ... যে নরপিশাচ এ কাজটি করেছে তার নাম ও গুঞ্জনের মাঝে বেশ কয়েক বার শুনতে পেল ... বেশ ডাকসাইটে ছাত্রনেতা ... কখনো ক্ষমতায় না থাকলেও কোন অদৃশ্য কারণে তাদেরকে কেউ কিছুই বলতে পারে না ... তাইতো নুরানী চেহারার পিছনের পশুর অদম্য ইচ্ছেতে সায় না দেয়ার কারনেই আজ এসিড দিয়ে ঝলসে মুক্তিকে সে চিরদিনের জন্য মুক্ত করে দিয়েছে, যাতে আর কোন মানুষ তো দুরের কথা , কোন পশুর ও যেন তার দিকে তাকিয়ে এমন ইচ্ছে না হয় .... ঐ মুহুর্তে , মূমূর্ষ ঐ এলাকার বড় আপুটির পাশে দাড়িয়ে তুহিন সেদিন নিজের কাছেই একটি প্রতিজ্ঞা করেছিলো .... নিজের যতটুকুই সামর্থ্য আছে ততটুকু দিয়েই সে এমন নির্যাতন রুখবে ... নিজের অবস্হান থেকে সে প্রতিবাদ করবে ... ঘুরে দাড়াবে এইসব নুরানী চেহারার নরপিশাচ দের বিরুদ্ধে ....


২.

সবেমাত্র এস এস সি দিয়ে বন্ধুরা সবাই যার যার মতো বেড়াতে চলে গিয়েছে , কিন্তু টাইফয়েডের জন্য তুহিনের আর কোথা যাওয়া হলো না , ঘরে বসে, গল্পের বই পড়ে , টিভি দেখে আর ফোনে বন্ধুদের সাথে গল্প করেই দিন কাটিয়ে দেয়া লাগছে ... এমন একদিন বিকেল বেলা হঠাৎ রানা ফোন করে এক নিঃশ্বাসে হড়বড় করে বলতে লাগলো -- দোস্ত দেখ তো কি করি, অন্য এলাকার নামকরা মাস্তান পোলাপাইন আমাদের বাসার সামনে কয়েক দিন থেকেই দাড়িয়ে থাকছে , কিছুদিন আগে থেকে শিউলী ( রানার ছোট বোন) যখন স্কুল থেকে ফেরে তখন ওর পিছে পিছে আসতো কিন্তু এলাকায় ঢুকতো না , এখন তো বাসার সামনে সকাল সন্ধ্যা দাড়িয়ে থাকে , বোনটা আমার ঘরের বাইরে বেরুতে ভয় পাচ্ছে , কি করি বলতো ? ... কিছুক্ষন চিন্তা করে তুহিন বললো -- তোরা বাসায় থাক আমি দেখছি ... দেখি কিছু করা যায় কি না ...আধ ঘন্টা পরের ঘটনা ... এলাকার কয়েকজন মুরুব্বীদের সাথে নিয়ে তুহিন চললো রানার বাড়ীর দিকে .... পথের মধ্যে একজন মুরুব্বীর পরিচিত এ্যডভোকেট বন্ধুকে চেম্বার থেকে বের করে সাথে নিয়ে সবাই মিলে রানার বাড়ীর সামনে পৌছুতেই বখাটেগুলোকে দেখা গেল ... এলাকার মুরুব্বীরা সুন্দরমত ওদেরকে ডেকে পাশের হোটেলে বসিয়ে জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন , ওরা এখানে কেন এসেছে , কি করছে ? ... কোন মতেই তাদের মুখ থেকে কোন কথা বের করতে না পেরে এ্যাডভোকেট সাহেব ১০০ টাকার সাদা স্ট্যাম্প পেপারে ওদের সবকটার নাম ঠিকানা লিখে , ঐ এলাকার মুরুব্বীদের ডেকে তাদের হাতে ছেলেগুলোকে তুলে দিয়ে বললেন -- এদের যে কোন একজনের কারনে যদি আমাদের এলাকার কারো কোন সমস্যা হয় তবে তার জন্য ওরা সহ আপনারা সবাই দায়ী থাকবেন .... পরের ঘটনা ... বখাটে ছেলে গুলোকে আর ঐ এলাকায় না দেখা গেলেও কিছু দিনের মধ্যে রাতের বেলা তুহিনর বাসায় বেশ কয়েকবার বোমা হামলা হয় সেটাও তারা অন্যভাবে সমাধান করে ফেলে বেশ দ্রুতই ... তবে আসল শান্তনা এই যে শিউলীকে আর কখনো ওদের জন্য কাঁদতে হয়নি ...


৩.

রুমী, ঝুমী দুই বোন ... এই এলাকাতেই তাদের জন্ম, বড় ও হয়েছে সবার সামনে ... যারা এক সময় তাদের খেলার সাথী ছিলো তারাই আজ ওদের ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ... বাবা একজন নির্বিবাদী শিক্ষক আর কোন ভাই না থাকায় অজানা আশংকায় কেটে যায় ওদের প্রতিটি দিন ... রুমী টা একটু ডানপিটে টাইপের মেয়ে , অন্যায় সহ্য করার মত মানসিকতা তার নেই ... তাইতো সেদিন এলাকার যে ছেলেটা ওদের কে সবচেয়ে বেশী যন্ত্রনা করে তার গালে ঠাস করে চড়টা বসিয়ে দিয়েছিলো ... কিন্তু ফলাফল ? ... কয়েকমাস পরে তাকে সেই চড়ের সর্বোচ্চ মুল্য দিতে হয়েছিলো ... তখন থেকেই সে চুপচাপ ... নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে একদিন সে তার ধুকে ধুকে বয়ে বেড়ানো জীবনটাকে মুক্তি দিতেই বেছে নিয়েছিলো আত্মহননের পথ ... কিন্তু দুর্ভাগ্য তাকে সেখানেও সফল হতে দেয়নি ... ঘটনার ক্রমবিবর্তনে হালপাতালের বেড এ শুয়ে পরিচয় হয় তুহিনের সাথে ... সে তার পাশের বেড এ শায়িত রোগীটির জন্য রক্ত দিতে এসেছিলো .... ডাক্তারের অনুরোধে স্ট্যান্ডবাই ব্লাড ডোনারটির রক্ত রুমীকে দেয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে সে হয়ে উঠলো এই পরিবারের ই একজন ... অদৃশ্য কারনেই রুমী ঝুমী দের বাড়িতে তুহিনের আনাগোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকার কেউ ই ওদেরকে আর যন্ত্রনা করতো না ... এমন চলতে চলতে একসময় ওরা দুজন ই ফিরে পেল নিজেদের আত্মবিশ্বাস ... পেল সবার মাঝে মাথা উচু করে দাড়ানোর প্রেরনা ...

পরের ঘটনা .... এর পর একদিন রুমীর বিয়ে হলো বেশ ধুমধামের সাথেই , আজ সে একজন সুখী কর্মজীবি গৃহিনী ... বছর দুয়েক পরে ঝুমীর ও বিয়ে হয়ে গেল তার ই পছন্দের একজন ইন্জিনিয়ারের সাথে ... সে ও আজ নিজের পরিবারের সাথে সুখী জীবন যাপন করছে ... আর তুহিন ? ... রূমীর বিয়ের দিন ওর কাধে হাত রেখে আন্টি যখন বলেছিলেন ... আমার যদি একটা ছেলে থাকতো তবে আমার বিশ্বাস সে তুমি যা করেছ তার চেয়ে বেশী কখনোই করতে পারতো না , একজন মায়ের দোয়া তোমার সাথে সারাজীবন থাকবে ... আন্টির হাতের ছোঁয়ায় যেন মূহুর্তেই হারিয়ে গেল ঘাড়ের পিছনের আধা ইণ্চি গভীর লম্বা ক্ষত চিন্হটির ব্যাথা ...



এমন কত শত ঘটনা রয়েছে আমাদের আশে পাশে .... তার ই একটি পড়লাম একুয়ার ব্লগে ... আর কতদিন আমরা মুখ বুজে সহ্য করে যাব ঐ সব নরপশুদের আস্ফালন ? ... কতদিন বুকে চেপে রাখবো আমাদের বোনদের কষ্ট গুলোকে ... আর কত ঝলসে যাওয়া বোনের চিৎকার অথবা সতীত্ব হারানো বোনের কান্না শুনলে আমরা রুখে দাড়ানোর প্রেরণা পাব ? ... আর কত জনের ভয়ার্ত মুখ দেখলে আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে ? ... আছে কি আমাদের মাঝে কেউ ... যে নিজের জন্য নয় বরং মানুষের অধিকারের জন্য , সুখের জন্য , সর্বপরি মনুষত্যের জন্য জীবন ধারন করতে চায় ? .... একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন .... আর কেন পিছিয়ে থাকা ? আর কেন মনে মনে ভাবা -- দেখিনা কি হয় ... আর কেন নিজেকে দুর্বল ভেবে ঐ সব নরপিশাচদের উৎসব দেখা ? আর অপেক্ষা কেন ?.....

আজ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যার যার অবস্হান থেকেই যদি প্রতিরোধ শুরু হয় তবে একদিন এই ছোট ছোট প্রতিরোধই জন্ম দিবে গন সচেতনতার ...


১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×