ফিলিস্তিনে গত ৩ বছরে মারা গেছে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫১ হাজার। বাংলাদেশে ১৯৭১এ মাত্র ৯মাসে মারা গেছে ৩ লক্ষ, যদিও শেখ মুজিব বলেছিল, ৩০ লক্ষ।
কোথায় ৫১ হাজার কোথায় ৩০ লক্ষ বা ৩ লক্ষ? কোন কোন হজুর তো নিয়মিত যুমআর নামায বা অন্য নামাজেও মুনাজাত করেন ইমাম হাসান কে সামনের শুক্রবারেই যেন প্রকাশ করে দেন। আল্লাহর আরশ কাপানোর মত ওয়াজে ঝড় তুলে ফেলে... আহা কি মহামায়া... কুমিরের কান্না।
চীনের উঁই ঘর মুসলমানদের আপনার চোখে পড়ে না? ইউক্রেনের মুসলমানদের চোখে পড়ে না? ইরাকে শিয়ারা হানাফি মাহজাবের মানুষদের উপর নির্যাতন করে, সেটা চোখে পড়ে না?
হিটলার যে, প্রায় ৮ কোটি ইহুদি মেরে ফেলল সেটা দেখেন না? চেঙ্গিস খান যে ৪কোটি মানুষ হত্যা করল, যা সে সময় দুনিয়ার ১১% জনগন ছিল, সেটা মনে ভাসে না?
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৮০০কোটি মানুষ, যার ভেতর কমপক্ষে ২০০ কোটি মুসলিম ধর্মাম্বলী, সে তুলনায় ফিলিস্তিনির ৫১ হাজার মুসলিম মারা পড়া খুবই নগন্য সংখ্যা। সেটা নিয়ে আল্লাহর দরবার ঝংকার তোলার কিছু নেই। আল্লাহ পাক সব কিছু দেখেন, সব তার নিয়ন্ত্রনাধীন। কাজেই মাইক পেয়ে শব্দ দূষণ ঘটানোর দরকার নেই।
তবে হ্যা, আপনি মানবতার কথা বলতে পারেন, যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলতে পারেন, অস্ত্র ব্যবসায়ী আমেরিকার পন্য বর্জনের আওভান জানাতে পারেন, ইসরাইলের পন্য কেনা বন্ধ করতে পারেন... কেয়ামত কেয়ামত করে লাফান কেন? ইমাম মাহদি কাল প্রকাশ্যে আসুক এমন হুজুগে কথা বলেন কেন?
আপনি যখন ইমাম বা বক্তা, আপনার একটা গুরু দ্বায়ী্ত্ব আছে। আপনার দিক নির্দেশনা গন জাগরন ঘটাতে পারে বা গন সংঘাতও ঘটাতে পারে। ধর্ম নিয়ে আপনি জ্ঞানী মানে এই না যে, নিজের মন গড়া কথা বলবেন, সেটা আবার ইউটিউবে ছাড়বেন।
এই যে আপনি গুগল ম্যাপ ব্যবহার এটা কাদের? আপনি যে, ইন্টারনেট সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করেন তাদের বেশির ভাগের উৎপত্তি কোথায় জানেন? বেশির ভাগ এন্টিভাইরাস বা ভাইরাস কারা ছাড়ে জানেন? দুনিয়ার কোন ব্যবসায় প্রত্যাক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইয়াহুদি রা নাই? আপনি যে হজে যান, সেখানকার বেশির ভাগ হোটেল রেস্টুরেন্টে ইয়াহুদির শেয়ার।
ওরা খাটে, মেধাকে কাজে লাগায়। মুসলমান হিসেবে আপনি কি করেন? দ্বীন শিক্ষা দেন, ইমামতির চাকরি নেন, ক্ষমতাশীলদের জন্যে বিশেষ মোনাজাত ধরেন, তাবিজ বিক্রি করেন, দায়সারা নামাজ পড়ান...
বিজ্ঞান চর্চা করেন? মানবতার জন্যে কাজ করেন? অতীতে ইসলামিক স্বকলাররা যে ভাবে ব্যবসা করত, সেভাবে ব্যবসা করেন? কাউকে সে শিক্ষা দেন? আপনারা বেশির ভাগই কোন উৎপাদন মুখী না। কেউ কেউ বাপ দাদার নাম ভেঙ্গে খান, কেউ লেবাস ধরে খান, কেউ মাজারে মাজারে পূজা দিয়ে খান... মুসলমানদের ইতিহাস কি এরকম ছিল? জঙ্গী তকমা কি মুসলমানদের মানায়?
সমাজের কিছু মুসলিম ব্যক্তির কারনে শত শত বছরে ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। মূল্যমান কমে গেছে। আজাইরা কথা বর্তা বলে মুসলমান সমাজকে আর নীচে ঠেলা ঠিক না। এখন তো মিডিয়াতে বসে নিজেরা নিজেরা ঠোকাঠুকি করতেছেন। একে অপরকে কাফের ঘোষনা দিচ্ছেন।
আপনার দ্বায়ীত্ব মানুষকে সহজ সরল ইসলামিক পথে চলার সঠিক নির্দেশনা দেয়া। সমাজ, দেশ, বিশ্বের শান্তি বজায়ে অংশ নেয়া। পরিবেশকে শান্ত ও সুন্দর রাখা। কেউ বলছেন ২০২৭ সালে কিয়ামত, কেউ বলছেন ২০২৬ সালের মধ্যে ইমাম মাহদি বের হবেন। কেউ একজন বলছেন, নাসা ফেরেশতাদের কথা রেকর্ড করছে। নাসা কি কোথাও সে কথা বলেছে? কেউ আবার বলছেন, অতীতের বা বর্তমানের কোন মা দাদী নানীদের নামাজ হয়নি যারা শাড়ি পেটিকোট পরে নামাজে দাড়িয়েছে, তারা নিশ্চিত জাহান্নামী, শূন্য হাতে আল্লাহ পাকের সামনে দাড়াবে হাসরের ময়দানে...কথা শুনে মনে হয়, নামাজ কবুলের মালিক সেই বক্তা , আল্লাহর দরকার নাই।
আপনারা কি বোঝেন না, সবাই তো আহম্মক না, হাস্যকর কথা বার্তা বলে নিজের এবং ইসলামের সম্মান নষ্ট করছেন। মানুষ এখন নেট থেকে কোরানের বাংলা ইংলিশ অর্থ পড়ে এবং বোঝে। পাশাপাশি হাদিসের পিডিএফ কপি দেখে নেয়। ব্যাখা দেখে নেয়। কতদিন এভাবে চালাবেন? সবলরা দূর্বলের উপর খবরদারি করবেই। মুসলমানরা যতদিন মেধায় মননে জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নত না হবে, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মুজবুত না হবে, হিন্দু ইয়াহূদী খ্রীস্টানরাই ততদিন মুসলমানদের ঘাড়ে চেপে বসে থাকবেই। হয়ত বলবেন, মুসলমানদের জন্যে দুনিয়ার জীবন নয়, আখেরাতেই জীবনই আসল...
হয়ত বলবেন, আমি রেডি, ইমাম হাসান আজই নামুক বা আজ রাতেই কেয়ামত হোক। আমি জান্নাতি হব, হুর নিয়ে তাবুতে আঙ্গুর খাব...আমি হাফেজ, আমি হেলিক্প্টার নিয়ে ওয়াজ নসিহত করে দ্বীন প্রচার করেছি, বিশ্ব ইসতেমায় গেছি, হ্জ্জ করেছি... জান্নাত নিশ্চিত। আমরা তো ভাই আপনার মত সৌভাগ্যবান না।
ফিলিস্তিন নিয়ে যত না চিন্তা, আমার মেয়েটা স্কুল থেকে ঠিকঠাক ফিরবে তো বা বোনটাকে সচ্চরিত্র ছেলের হাতে তুলে দিতে পারব তো? এসব আমার ঘুম হারাম করে... যাকাত দিলে মনে হয়, ঠিক লোককে দিলাম তো বা ঠিক জায়গায় দিলাম তো? ভিক্ষা দিলে মনে হয়, এ কি সত্যিকারের ফকির নাকি গাড়ি বাড়ি আলা? ভাইকে ইটালিতে পাঠাবো, সে ঠিকঠাক পৌছাবে তো নাকি মাঝ রাস্তায় মারা পড়বে?
আমরা সাধারন মানুষ। আমাদের হয়ে আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসুন। আল্লাহর রহমত পুষ্ট হতে পথ দেখান... আগে ঘর সামাল দেন, তারপর বনের মোষ তাড়ান।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



