
উত্তারাঞ্চল: উত্তারাঞ্চলের ছেলে আমি। আমাদের এদিকে খাবারের তেমন কোন আহামরি বৈচিত্র নেই। কিন্তু অন্য অঞ্চলের যারা খায়, তারা মনে রাখে রান্নার স্বাদ। একই মেনু একেক রাধুনীর হাতের রান্না একেক রকম। মশলা হিসেবে, কমন কিছু গরম মশলা যেমন ডারচিনি, সাদা এলাচ, কাল এলাচ, লং, আদা রসুন পেয়াজ... ব্যবহার করে সবাই।
তবে পুরপুরি বা চচ্চরিতে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। অন্য অঞ্চলে আমি অবশ্য এই মেনুটা কমই দেখিছি। এক ঘেয়েমি খাবার উত্তারাঞ্চলের মানুষ তেমন একটা পছন্দ করে না। প্রচুর শাক সবজি তাদের পছন্দ। আসলে কত জাত বেজাতের শাক পাতা, এরা যে খায় তার শেষ নেই।
বাসা বাড়িতে কমন খাবার রেসিপি হল, গরুর ঘন ভুনা, গরুর কসানি, আলু ঘাটি, মাঝারি মাছের সবজির ঝোল, আলুর নানা পদ। রংপুরের মানুষ অবশ্য আদা গাছের মত অন্য একটি মশলা জাতীয় গাছ ব্যবহার করে, সেটা দিলে গরম মশলা দেয়া লাগে না। সাবধান: রংপুর কুড়িগ্রামের মানুষদের দাওয়াত দিলে মনে রাখবেন একজন আসলে একজন না, ২ থেকে ৩জনের খাবার খাবে।
হাঁসের ভুনা মাংস খেতে গেছি ভাবির হোটেলে। আহামরি কিছু না, তার চেয়ে আমার ঘরনী বা মাউই মা হাসের মাংস অসম্ভব ভাল রান্না করে।
দক্ষিনাঞ্চল: চুই ঝাল চুই ঝাল শুনতে শুনতে অস্থির। কয়েক হোটেল এবং আত্মীয়ের বাসায় (বৈবাহিক সূূত্রে) খেলাম। আহামরি কিছু না। তবে নারকেলের বহু আইটেম খাবার বানাতে পারে তারা। তালের গুর বা গোল পাতার গুড় অন্য রকম স্বাদের। আমার দেখা মতে, খুলনা ডিভিশনের মানুষরা সবচেয়ে বেশি প্রকারের পিঠা বানাতে পারে। এত এত বৈচিত্রময়, যে পিঠা মেলাতেও দেখা যায় না। অনেক মাছও খায় তারা। তবে বরিশাল পটুয়াখালির মাছের পদ বেশির ভাগ সময় আমি ট্যাল ট্যালা টাইপের ঝোল পেয়েছি। চিংরিও ভাল রান্না করে। আর যাই হোক উত্তর বঙ্গের মত হয় না। খাবারের স্বাদে সেরা উত্তর বঙ্গের খাবার।
পূর্বাঞ্চল: পূর্বাঞ্চল তো সিলেট ডিভিশনও বুঝায় আবার চিটাগং ডিভিশনও ভাবতে হয়। সিলেটের কথা বলতে পারি। তারা শুটকি আর সিদল পাগল। প্রচুর মাছ খায়। দু:খের বিষয় এরা মাছ বা শুটকি উত্তারাঞ্চলের মত স্বাদের বানাতে পারে না। আমি উত্তরবঙ্গের ছেলে বলে বলছি না। আসলেও তাই। আর একটা ব্যাপার। চায়ের দেশ সিলেট হলেও, ওরা ভাল চা বানাতে পারে না। শাক পাতা খুব কমই খায়। প্রচুর পান খায়। আপনি কোথাও স্বজনে গাছ খুজে পাবেন না, খেজুর বা তাল গাছ খুবই রেয়ার। এ গুলো থেকে যেকোন খাবার, তাদের খাবার মেনুতে অনুপস্থিত। বলা ভাল খুবই কম। তবে আখনি, সাতকরা দিয়ে গরুর গোসত বা বিফ রেসিপি খুব খায়। সত্য বলতে সাতকরা দিয়ে খাবার আইটেম গুলা খুব একটা স্বাদের কিছু না। হিন্দুদের মেনুতে মশলার অনেক বৈচিত্র আছে। তাদের সবজির পদ গুলো চমৎকার হয়। চা শ্রমিকদের বা মনিপুরিদের খাবার সম্বন্ধে তেমন ধারনা নেই।
চিটাগং এর কালো ভুনা খেয়েছি। এক কথায় দারুন। তবে পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের খাবার দাবার ব্যাপারে আমার তেমন একটা ধারনা নেই। তবে আপনারা যারা পড়ছেন, দয়াকরে কমেন্টে জানাবেন।
ঢাকা ডিভিশন বা মধ্যাঞ্চলের কথা আর নাই বলি। এরা কি যে খায় আর না খায়। এদের এখানে সব চলে। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণীর মানুষ ঢাকায় আসে। তাদের ক্রিয়েটিভিটির অভাব নাই। আসলে জীবন যেখানে যেমন। প্রতিযোগিতা মানুষকে বদলে দেয়।

খাবার খেতে খুব যে পছন্দ করি তা না। তবে ভাল হলে, প্রশংসা না করে পারি না। বগুড়ার দই কম বেশি প্রতি মাসেই খাওয়া হয়। মহস্থান গরের কটকটি, কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের রসমালাই, সাতক্ষীরার মিষ্টি, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, বগুড়ার এশিয়ার মিষ্টি, দিনাজপুরের তিলের জিলাপি, পুরান ঢাকার হালিম, বাগমারার গোপালভোগ, রংপুরের হাড়িভাঙ্গা, চাপায়ের হিমসাগর, বরিশালের আমড়া, বগুড়ার আলুঘাটি, সিলেটের হাওরের বোয়াল/রুই/কালি বাউস মাছ, খুলনার ভাগান/ভেটকি মাছ, পদ্মার ইলিশ, শ্রীমঙ্গলের লাড্ডু আনারস, খুলনার সফেদা, চিরিরবন্দরের লিচু, আর অন্যদিকে মা + ঘরনীর হাতের রান্নার ভক্ত আমি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




