
আসলে আমি ফ্রিডম পছন্দ করি। আদেশে নয়, অনুরোধে মন গলে আমার। শহুরে হট্টগলের চেয়ে প্রকৃতি ভাল লাগে। দল বেঁধে ট্যুর দেবার চেয়ে একাকি ট্যুর দিতে ভাল লাগে। বনের কুকুররা দলবদ্ধভাবে শিকার করে, বাঘ কিন্তু একাকি শিকার করে। আমি কুত্তাও না বাঘও না, আমি দায়িত্ব আর মনের দাম দেই বেশি। ভ্যাজাল এড়াতে একা একাই বেরিয়ে পড়ি। সাথে স্ত্রী থাকে। দু চার টা ব্যাগ, কিছু পেপারস আর অল্পকিছু ক্যাশ পকেটে থাকে।
সত্যি বলতে হেলমেট ছাড়া আর কোন সেফটি গিয়ারস পরি না যদিও সবই আছে প্রফেশনাল রাইডারদের মত। ওসব পড়লে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি না। মনকে ভাসিয়ে দেবার জন্যে বের হই। তাই একটা প্যাকেট বা প্যাকেজ বানাই না নিজেকে।
দিনে গিয়ে দিনে ফেরা গেলে কোন কিছুই সাথে থাকে না। অন্যথায় কাপড় চোপড়ের ব্যাগ থাকে, অফিস কন্টিনিউ করার জন্যে ল্যাপটপ থাকে, বর্ষার দিন হলে রেইনকোট, ফোন আর ক্যামেরা তো থাকেই।
যদি নতুন স্পট হয়, আগের রাতে হয়ত দু একটা ইউটিউবের ভিডিও দেখে নিলাম। সেই জেলায় পরিচিত কেউ আছে কি না যার নাম্বার আমার কাছে আছে, চেক করে নেই। বিপদে পড়লে যাতে হেল্প নিতে পারি। তবে আগেভাগে কাউকে জানাইনা। জানালেই দাওয়াত দিয়ে বসবে তাই।
সবসময় প্লান থাকে সন্ধ্যার আগেই স্পটে পৌছে যাবার, যেহেতু মেয়ে লোক থাকে। তবে নিজের ওপর এতটাও প্রেশার দেই না বা রাস করে বাইক চালাই না, যাতে আবার দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
আমার টার্গেট থাকে সেফলি যাওয়া এবং ফেরা। কম সময়ে পৌঁছানো নয়। হাইওয়েতে ৭০ টু ৯০ কিমি/ঘন্টা স্পিড থাকে। তবে অবস্থা বুঝে চালানোই বেশি হয়। দেখাগেলো, কেউ সাইড চাচ্ছে , তখন সাইড দিলাম। কখনও ওভারটেক করতে হচ্ছে তো ১৩০ কিমি স্পিডে ওঠালাম। যাই করি না কেন, অন্য ড্রাইভারদের জানিয়ে বা বুঝিয়ে করি। আমি মনে করি, জেনে বুঝে কোন বাস বা ট্রাক ড্রাইভার আমাকে এক্সিডেন্ট করাবেনা।
এমনও হয়েছে, আমি ওভারটেকের জন্যে সিগন্যাল দিয়েছি, সামনে হয়ত কোন গাড়ি আছে যা আমি দেখতে পাচ্ছিনা এঙ্গেলের জন্যে, ঐ ড্রাইভার ক্রস সিগন্যাল দেয় ওভারটেক না করার জন্যে। আবার রোড ক্লিয়ার হলে, নিজেরাই সাইড দেয়। এটা একটা কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এই সমঝোতা মানার মানসিকতা না থাকলে হাইওয়েতে বাইক রাইড করা উচিত না।

যদি চালাতে চালাতে ধৈর্য্যহীন মনে হয়, দ্রুত একটা বিরতি নেই। অনেকে আছে যারা ধৈর্য্যহীন হয়ে পড়লে রাশ চালায়, উড়াধুড়া চালায়। আমি তখন একটু রিলাক্স করি, ফোন কল করি। একটু ফেসবুক ঘাটাঘাটি করি, বা গুগল ম্যাপ দেখে কতটা সময় লাগবে সেটা দেখে নেই। কাছাকাছি চা বা খাবার দোকান থাকলে কলা ডাব বা চা খেয়ে নেই। লোকাল লোক চিড়িয়াখানার বান্দর দেখার মত তাকালে ডেকে গল্প জুড়ে দেই। যেখানে সুন্দর স্পট চোখে পড়ে থেমে দু একটা ছবি তুলে ফেলি... এই হল আমার রাইডের ধরন।
ট্যুরে বের হলে, নামকরা কোন হোটেল রেস্ট্যুরেন্ট আমার লিস্টে থাকে না। আমি খুঁজতে থাকি, যেগুলোতো ভীর বেশি, মানুষ খাচ্ছে বেশি বা ট্রাক ড্রাইভাররা গাড়ি থামিয়ে খাচ্ছে। আমি দেখেছি, ঐ সব জায়গায় টাটকা এবং সুস্বাদু ভাল খাবার পাওয়া যায়। আমার কখনও পেট খারাপ করেনি। এমনও হয়েছে যে, ওভারডোজ খেয়ে ফেলেছি স্বাদের কারনে, তখন আধা ঘন্টার কাছে ১ ঘন্টা ব্রেক দিতে হচ্ছে।
চলতে চলতে হাট বাজার দেখলে বাইক থামিয়ে দেখি, কি ধরনের পন্য, শস্য বা ফলমূল বিক্রি হচ্ছে।
গুগল ম্যাপ আমাকে অনেক ধোকা দিয়েছে বিভিন্ন সময়। কখনও দেখেছি সর্টকাট রোড সাজেস্ট করছে, গিয়ে দেখি মানুষের বাড়িতে গিয়ে রোড শেষ হয়েছে। অথবা খোলা মাঠে গিয়ে শেষ হয়েছে। কখনও দেখেছি, একই নামের দুটা আলাদা জায়গা দেখাচ্ছে। যেমন, গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া নামের দুটা আলাদা আলাদা জায়গা রয়েছে ২৬ কিমি ব্যবধানে।
তাই যেটা করি, গুগল দেখি সেই সাথে লোকাল লোকদের কাছে শুনে ডবল ভ্যারিফায়ের পর সেই রোড দিয়ে আগাই...এগুলোতে মজা আছে, একটু ভয় আছে, অজানা কে জানার একটা আনন্দ আছে। পিলিওন সিটে মেয়ে লোক থাকাতে কেউ কেউ রহস্যের হাসি দেয়। তখন মনে হয়, শালার শালা হয়ত ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে। আমি একবার টাঙ্গাইলে ৬ ঘন্টা প্যাচপ্যুচ খেয়ে শেষে গন্তব্যের প্রকৃত রোড খুঁজে পেয়েছি। তবে টাঙ্গাইলে বিশালত্ব দেখতে পেয়েছিলাম। ভালই... খারাপ না।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, বেড়াতে গেছি এটা বুঝতে পেরে লোকাল লোকেরা কখনও খারাপ আচরন করেনি বা দুষ্টমি করেনি। যতটুকু পারা যায় সকলেই সহযোগিতা করেছে। তবে রাস্তায় পুলিশের কয়েকটা ঘটনা আছে, পরবর্তী ব্লগে তুলে ধরব ইনশাল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




