যখন ছোট ছিলাম মোটামুটি ভালই ছিলাম, কোন চিন্তা ছিলনা কি করতে হবে, বাহ কোন
চাপও ছিলনা, তাই খুব আরামের সাথে ঘুরে বেড়াইতাম আর মোটামুটী একটু পড়ালেখা করতাম, তাতেই সেকেন্ড থার্ড হইয়া যাইতাম, যদিও কখনও ফার্স্ট হইতে পারিনাই জীবনে, আসল কথা হল কখনও মন থেকে চেষ্টা করে নাই। দেখতে দেখতে স্কুল শেষ হয়ে গেল, কলেজেও শেষ হয়ে গেল। স্কুলে, কলেজে সর্বোচ্চ রেজাল্টই করলাম , এরপর পরে কি করব তা ঠিক করার পালা। বাড়ি থেকে অনেক চাপ ছিল ডাক্তারি পড়ার, যদিও নিজের ঝোক ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার, আব্বাজানের কথা না মেনে ঢাকা শহরে চলে আসলাম, ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করার জন্য, কিন্তু প্রথমেই গোলটা লাগল। ঢাকাতে কোন আত্মীয় স্বজন নাই যেহেতু তাই কই থাকবো, শেষে কলেজের এক বন্ধকে ধরে ফুটপাতের এক চার দোকানীর বাড়িতে সাবলেট থাকা শুরু করলাম। কিছুদিনেই গিঞ্জি পরিবেশ হাঁপিয়ে ঊঠলাম, পড়ালেখা সব গোল্লায় গেল, আব্বার সাথে প্রতিদিন ফোনে বলতাম যে খুব ভাল পড়ালেখা করছি কিন্তু আসলে কিছুই করছিনা, কেমনজানি নেমকহারামী করা শুরু করলাম বাবা মার সাথে।থাকতাম মহাখালীর আশেপাশে, তাই সারাদিন মহাখালীর ফ্লাইওভার অথবা মহাখালী ডিওএইচএসএ হেঁটে বেড়ীয়ে কাটিয়ে দিতাম, এমন অবস্থা হল এইচএসসি পরীক্ষার সময় যা পারতাম তাও পারিনা। হঠাৎ করে আব্বাজান একদিন কোচিং সেন্টারে হাজির, আর আব্বা কোচিং এর যেখানে বসেছিলেন তার চোখের সামনেই আমার খাতা রাখা ছিল, আব্বা দেখে বেশি রাগা রাগি করলেননা, একটু কাঁদো কাঁদো স্বরে বুঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু না আমি বুঝলাম না, যে লাঊ সেই কদু রয়ে গেলাম। এরপর শুরু হলো পরীক্ষা দেওয়ার পালা, মেডিকল হলোনা, ঢাকা ভার্সিটী ওয়েটীং, বুয়েট হলোনা,দুইটে ঊয়েট এ ওয়েটিং, অবশ্য ফাজলামি করে বকবক ভার্সিটী বয়োলজি স্কুলে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, ওইদিন আবার বুয়েটে রেজাল্ট হলো, সকাল পরীক্ষা দিতে গিয়ে শুনলাম, তাই তাড়াতাড়ি বুয়েটে রেজাল্ট দেখার জন্য তাড়াহুড়া করে সব এমসিকিঊ দাগিয়ে বের হয়ে আসলাম,পরে দেখলাম এই বকবক ভার্সিটিতে আমি সবচেয়ে ভাল পজিশনে, প্রথমের দিকের একটা সাবজেক্ট পেয়ে যেতাম, আর যেহেতু আমার কম্পিঊটারের পরে জেনিটক্স নিয়ে পড়ার খুব শখ ছিলো, তাই একেবার মানসিকভাবে প্রস্তুত বকবক ভার্সিটীতে ভর্তি হব ।ভাগ্যিস আগের পড়ালেখার জোরে এতদূর গিয়েছিলাম, কোচিং পিরিয়ডে কোন পড়ালেখা না করার পরেও । কিন্তু ঊপরওয়ালা একটু অন্যরকম লেখাই লিখেছিলেন, তাই হঠাৎ করে হরতালের কারণে বকবক ভার্সিটির ভর্তির দিন পিছিয়ে গেল আর একটা ঊয়েটে ওয়েটিং লিস্ট থেকে ডাক পেলাম,প্রথমে সিভিলে ভর্তি হয়ে ঐদিন রাতেই মাইগ্রেশন হয়ে সিএসইতে চলে আসলাম, আমিতো মহাখুশি, আমাকে আর পায় কে। বাড়িতে গিয়ে অনেক বড় বড় কথা ঝাড়লাম, ডাক্তারি ছয় বছর পড়া আর ইঞ্জিনিয়ারিং চার বছর পরে মেলা টাকা কামাই করব। আর যেহেতু কম্পিঊটারের প্রতি নেশা জন্মেছিল বিভিন্ন ম্যাগাজিন ট্যাগাজিন পরে যদিও ভার্সিটিতে আসার আগে কখনও কম্পিঊটারে হাত দেইনাই, ভাবছিলাম সারাদিন কম্পিঊটার যন্ত্রটা নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকব আর অনেক কিছু বানাব। যাই হোক ঊপরওয়ালা আরও একটু অন্যরকম চিন্তা করে রেখেছিলেন, প্রথম যেদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করতে আসলাম তার দুইদিন পরে বিশাল এক রোগ বাধল শরীরে ।ঢাকার শেষের দিকে অনেক রাফ চলাফেরা অবশ্য এর কারণ। গেলাম বাড়ি, প্রায় আড়াই মাসের বেশি থাকলাম অসুস্থ। তারপর সুস্থ হয়ে ভার্সিটীতে এসে দেখি কিচ্ছু পারিনা , আর অনেক স্যারদের সাথে দেখা করলাম, সবাই বলল ইঞ্জিনিয়ারিং কেঊ পিছিয়ে পড়লে তার আর আগায় নেওয়ার কোন বুদ্ধি নাই আর সব স্যারই ভয় দেখাতে লাগল তুমিতো ফেল করে যাবা,যাই হোক আমার এডভাইজার স্যার অবশ্য আমাকে সেমিষ্টার ঊইড্রো করতে বলছিলেন, কিন্তু ঊইড্রো করলে আরও বেশিদিন থাকতে হবে আর পরবর্তীবছর বাসা থেকেও যেহেতু মেডিকেলে একটা পরীক্ষা দেওয়ার চাপ ছিলো তাই উইড্রো করলাম না সেমিষ্টার, পরীক্ষা দিলাম যা পারি এবং প্রায় সবকটিতে ডি নিয়ে পাশ করলাম, যদিও পাশ করলাম সব সাবজেক্টে কিন্তু জিপিএ একেবারে লোয়েস্ট, একটা লেবেল লেগে গেল শরীরে খারাপ স্টুডেন্ট। এভাবে একে একে চারটা বছর চলে গেল, মোটামুটি টেনেটুনে সময়মত পাশ করে বের হয়ে চলে যাচ্ছি, যদিও ভার্সিটী ছাড়তে খুব খারাপ লাগছে, তার চেয়ে বেশি আক্ষেপ হচ্ছে নিজের খারাপ রেজাল্টের কারণে, গত কাল রাতেই বাপের কাছে বিশাল একটা ঝাড়ি খাইলাম আমি নাকি বড় বড় স্বপ্ন দেখি আর তার কোনোটাই বাস্তবায়িত করতে পারিনা, মনে হয় আমি তাই, কি যেন, আপাতত এটুকুই আর লিখতে এখন ভাল লাগছেনা,বাকিটা পরের পর্বে লিখবো।