somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হুমায়ূন আহমেদ এবং আমি...

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হবে। কত দ্রুত সময় বয়ে যায়। আরেকটা রোজা এসে গেল দেখতে দেখতে। এবারের ঈদ এ সন্ধ্যায় আর হবে না হুমায়ুন আহমেদ এর কোনো নাটক। ভাবতেই অবাক লাগে। কোত্থেকে যেন এতগুলো কষ্ট এসে জমে বুকে।

আমার সাথে তাঁর পরিচয় খুব ছোটবেলায়। যেই বয়সে শুধু ছবির বই দেখতাম ঠিক তখন আমার বাবা একটি বই এনে দিলেন যেটা বড়দের মত বই। শুধু গল্প লেখা! কোনো ছবি নেই। আমি তো পরতেই চাইলাম না। তখন আব্বু বা আম্মু, কে যেন একটা গল্প পরে শুনালো।এরপর এত ভালো লাগলো যে নিজে থেকেই পরা শুরু করলাম। বইটির নাম "তোমাদের জন্য রুপকথা"। এরপর আরেকটু বড় হয়ে বাবার বুক শেলফ এর সব বই নেড়েচেড়ে শুধু হুমায়ুন আহমেদ এর বই খুঁজে খুঁজে বের করতাম আর গোগ্রাসে গিলতাম। কত যে দিন পার করেছি একের পর এক বই পরে তার ঠিক নেই। ক্লাস সেভেন এ থাকতে একটা সময় ছিল যখন আমার রুটিন ছিল স্কুল, খাওয়া, ঘুম আর হুমায়ুন। কত রাত, কত দিন যে পার করেছি তার তৈরী করা জগত এ তার ইয়ত্তা নেই। আহা, কি সুন্দরই না ছিল সেই দিনগুলি।

শুধু কি বই? তার তৈরী নাটক এর কথা না বললেই না। এখনো মনে আছে "আজ রবিবার" এর কথা। এত্তো হাসির নাটক কি আর এই দেশের মানুষ কখনো দেখেছে? মনে পরে নাটকের শেষ পর্বের প্রচারের দিন সারা দেশে বিদ্যুত চলে যায় কোনো কারণে। জাতীয় গ্রীডে কোনো সমস্যা ছিল বা এধরনের কিছু। তাই দর্শকদের বিপুল অনুরোধে আবার দেখানো হয় শেষ পর্বটি। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে হুমায়ুন আহমেদ এর নাটক দেখার মজাই অন্যরকম। বাবা মা, মামা-চাচারা সবাই একমনে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে, সবার মুখই হাসি হাসি। এই বুঝি হাস্যকর কিছু দেখা যাবে টিভির পর্দায়! হুমায়ুন আহমেদ কখনো আমাদের নিরাশ করেননি।
হুমায়ুন এর নাটক মানে যে শুধুই হাসি তা ভাবলেও ভুল হবে।"নীমফুল" অথবা "খাদক", এসব নাটক চোখে পানি এনে দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন এর সমস্ত দর্শকের চোখে। আমি শুধু আমার দেখা ছোটবেলার নাটক এর কথাই বলছি। পরে বড় হয়ে ইন্টারনেট আসার পর তার
তৈরী সব নাটক আমি সংগ্রহ করেছি। হ্যা, সব গুলো নাটক আমি দেখে ফেলেছি! কিংবদন্তি চরিত্র বাকের ভাই এর "কোথাও কেউ নেই" থেকে "এইসব দিনরাত্রি", "নক্ষত্রের রাত" থেকে "উড়ে যায় বকপক্ষী" কিছুই বাদ রাখিনি। এছাড়া ঈদ এ ছোট ছোট এক ঘন্টার নাটক তো আছেই।

আর তার লেখা বই। অসাধারণ সব বই। শুরুতেই বলে রাখি যারা তার সমালোচনা করেন তাদের জন্য, আমি বলছি না হুমায়ুন আহমেদ সর্বকালের সেরা লেখক। কিন্তু, আপনাকে এটা মানতেই হবে ওনার লেখায় জাদু ছিল। আমি জানি উনি হয়ত সুনীল এর "সেই সময়" অথবা "পূর্ব-পশ্চিম" এর মত বিশাল ক্যানভাস এ কোনো উপন্যাস লিখতে পারেননি। কিন্তু, "জোছনা ও জননীর গল্প" তো লিখেছেন। "মধ্যান্হ", "লীলাবতী" লিখেছেন। আমি নিজেও মানি তার এই লেখা গুলো সুনীল এর তুলনায় একটু দুর্বল, কিন্তু তারপরেও তার লেখায় আছে ভিন্ন এক আকর্ষণ। আর হুমায়ুন আহমেদ কে মনে রাখা হবে আজীবন তার ছোট গল্পগুলোর জন্য। বাংলা ভাষায় সমসামিয়ক লেখালেখির জগতে ছোট গল্পের অদ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার তিনি। এত ছোট পরিসরে, এত কম শব্দের সাহায্যে তিনি যেকোন পাঠককে নিয়ে যেতে পারতেন তার নিজের ভুবনে। তিনি যাই বলেন মন্ত্রমুগ্ধের মত হয়ে শুনতে হয়। আসলেই তিনি ছিলেন কথার জাদুকর, একজন সত্যিকারের কথা শিল্পী। অনেক বাংলা ইংরেজি সাহিত্য পড়েছি, সেগুলো পরে পুলকিত হয়েছি। কিন্তু একমাত্র হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা পরে কেদেছি, হেসেছি... হয়েছি শিহরিত। তার বই পড়ে মনে হয় এত দেখি একদম আমার মত সাধারণ মানুষদের গল্প। তার লেখা পড়ে অনুভুতিগুলো কেমন যেন আন্দোলিত হয়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের দুক্ষ কষ্ট নিয়ে যে লেখা গুলো আছে, তা সত্যিই তুলনাহীন। তার তৈরী চরিত্র গুলোর আছে এক রকমের অদ্ভুত আকর্ষনী ক্ষমতা। চরিত্র গুলোর জন্য কেমন যেন বুকের ভেতর হাহা করে।

তিনি শিখিয়েছেন জোছনা দেখা। দারুচিনি দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া। শিখিয়েছেন খালি পায়ে রাস্তায় হেটে বেড়ানো। মাঝে মাঝে এই যান্ত্রিক জীবনে পাগলামি করাটাও যে দরকার তাই ছিল ওনার মেসেজ।

আর কি ক্ষুরধার রসবোধ তার! এত্ত রসাত্তবোধ ওয়ালা মানুষ হয়ত বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি ছিল না। ওনার সেন্স হিউমার এর নমুনা "উন্মাদ" ম্যাগাজিনে লেখা "এলে-বেলে" সিরিজে পাওয়া যাবে। তার সব লেখাতেই হিউমার কম বেশি থাকে, তবে এই লেখা গুলো একদম খাঁটি রম্য রচনা যাকে বলে তাই।

অনেক লিখে ফেললাম। অগোছালো লেখাটার ইতি টানছি। লেখাটার উদ্দেশ্য ছিল তার স্মৃতিচারণ করা। স্মৃতিচারণ পর্ব শেষ। তিনি যেভাবে বলেন সেভাবে বলতে হলে... তার লেখা পড়ে আমার এই জীবনে আমি যতটুকু আনন্দ পেয়েছি, তার পরকালের জীবন যেন এরচেয়ে বহুগুনের আনন্দময় হয় এই প্রার্থনাই রইলো পরম করুনাময় এর প্রতি।

শেষ করার আগে তার উল্লেখযোগ্য যে বইগুলো আমার মতে নতুক পাঠকদের জন্য না পড়লেই না তার একটি তালিকা দিচ্ছি:

১. কৃষ্ণপক্ষ
২. তোমাকে
৩. প্রিয়তমেষু
৪. জনম জনম
৫. জোছনা ও জননীর গল্প
৬. ইরিনা
৭. দরজার ওপাশে
৮. মিসির আলীর অমিমাংসিত রহস্য
৯. জ্বীন কফিল
১০. সৌরভ
১১. ১৯৭১
১২. বহুব্রীহি
১৩. আগুনের পরশমনি
১৪. বাদশাহ নামদার
১৫. নন্দিত নরকে
১৬. হোটেল গ্রেভার ইন

পুনশ্চ: তার ব্যক্তিগত জীবন এর কারণে অনেকে তার লেখা পড়েন না। তবে কেউ দয়া করে ওনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমন করবেন না।
ওনার লেখা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বা অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন :)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×