১৯২১ সালের ১লা জুলাই। শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা। শত বছরের শোষণ বঞ্চনার পর ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ছিল এ অঞ্চলের মুসলীম জনগোষ্ঠীর নিকট প্রচন্ড দাবদাহের পর এক পশলা বৃষ্টি। কিন্তু হিন্দু নেতৃবৃন্দের প্রবল বিরোধীতায় পূর্ববাংলার মুসলমানদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। ১৯১১ সালে রদ হয় বঙ্গভঙ্গ। তারই ক্ষতিপূরণ হিসেবে মুসলিম নেতৃবৃন্দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখদের ত্যাগ আর শ্রমের ফসল আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও প্রতিষ্ঠার পূর্বেই কিছু উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক নেতৃবৃন্দের প্রবল বিরোধীতার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি, তবুও এর শিক্ষার দ্বার উম্মুক্ত থাকে সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় নেতৃ্ত্বের সংকট পূরন এবং জাতীয় সংকটময় মুহূর্তগুলোতে যথোচিত ভূমিকা রেখে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ এর অর্জন গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় বারবার।
বাংলাদেশ নামক ভৌগলিক সত্ত্বাটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কল্পনা করা যায় না। এই প্রাচ্যের অক্সপোর্ড তৈরী করেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে সমাদৃত অনেক কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। যদিও সময়ের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হারাতে বসেছে তার তিলে তিলে গড়ে উঠা ঐতিহ্য। দুর্নীতির রাজনীতি, লেজুড়বৃত্তি আর নষ্ট ছাত্র রাজনীতির কবলে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে কিছু কিছু শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী আর দেশের প্রতি ভালবাসা-হীন স্বার্থাণ্বেষী মহল। যাদের কারনে ম্লান হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান। দিনে দিনে নিম্নমূখী হচ্ছে শিক্ষার মান, সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সামাজিক ও জাতীয় সমস্যা। আমরা এ অবস্থার উত্তরণ চাই। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃ্ত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতেই উচ্চারিত হোক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীর অঙ্গীকার।
শিরোনামের ব্যাখ্যাঃ ২০০৮ সালের জুন মাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়ং রাইটার্স ফোরামের একটি ত্রৈমাসিক ছোট্ট সাময়িকী’র (ছোট্ট হলেও সার্কুলেশন ছিল ৫০০০ কপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সংখ্যা বের হবে। সম্পাদনা সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। প্রধান উপদেষ্টা যোবায়ের আহমেদ ভুঁইয়া ভাইয়ের বাণীটা ছিল আমার ব্যাগে। তখন ও টাইপ করা হয়নি। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য! আমার ঐ ব্যাগ টাই লাইব্রেরী থেকে হারিয়ে যায়।সবাই তো মহা চিন্তায়। নিশ্চিত যোবায়ের ভাইয়ের শাসানি কপালে…। আমরা চারজন যোবায়ের ভাইয়ের রুমে। চুপচাপ বসে আছি মাথা নিচু করে। তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছেন, কি বলতে আসছো তোমরা-বল। শেষ পর্যন্ত কেউ একজন মিনমিন করে বললাম, আপনার লিখাটা হারিয়ে ফেলেছি। উনি হেসে দিলেন। যাক এবার একটু সাহস পেলাম। চোখ তুললাম। বলল, তোমরা লিখে নাও-আমি স্বাক্ষর করে দিচ্ছি। যেহেতু আমি হারাইছি, তাই শাস্তি স্বরূপ আমাকেই লিখে দিতে হয়েছিল “প্রধান উপদেষ্টার কথা”(সম্পাদকের পক্ষ থেকে শাস্তি)। আজ চার বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন টা সাজানো দেখে মনে হল সেই স্মৃতিটুকু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সাথে আমাদের অনেক আবেগ। অনেক ভালোবাসা। ১৯২১ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্দেশ্যটুকু পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আরো সচেতন হোক এই কামনা করছি।