somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের জেন্ডার সংবেদনশীলতা যাচাই- দুই

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের জেন্ডার সংবেদনশীলতা যাচাই- এক)
Click This Link

নাটকে নারীর উপস্থাপন:

“Bring theatre to the not people to the theatre.”
- Kabwe Kasoma

নারীভীতু:
লোকে লোকরণ্য, মঞ্চে প্রথম দিনেই বুকের ভেতর ধুক ধুক করে উঠেছিল বিনোদিনীর যা বর্ণনাতীত। (বিনোদিনী নাটকে)

মেরাজের মা মেরাজকে ভয় পায়। মেরাজ এসে যদি কোন তুলকালাম কাণ্ড করে বসে, সেই ভয়ে তটস্থ সে। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

নারী ভোগ্যপণ্য:
বিনোদিনী নাটকে ক্ষেত্রমনিকে এক সাহেব উলঙ্গ করে ভোগ করতে চায়।

মাধবীকেও আসলে তিন রাজ্যের রাজারা ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। কেননা মাধবী যে সন্তানের জন্ম দিবে সে পরবর্তীতে চক্রবর্তী রাজা হবে। আর অশ্বমেধ ঘোড়ার বিনিময়ে মাধবী রানীমহলে এক বছর অতিবাহিত করে। (মাধবী নাটকে)

ভুতিকে ভোগ করতে চায় ভিখু। তাইতো ভুতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)
নারী কোমল ও ব্যথাতুর:
শুভাকাঙ্খির আহবানে বিনোদ কাঁদে এবং পুরুষের মৃত্যুতে শোকে বিহবল হয়ে পড়ে। (বিনোদিনী নাটকে)

মাধবী তার ফেলে আসা তিন বাচ্চার বেদনায় শোকাহত। সন্তানদের ছেড়ে আসতে কষ্টে বুক ভেঙ্গে আসে তার। (মাধবী নাটকে)

নারী নির্লোভ:
মাধবী শুধু ভালবাসার খাতিরে গালবকে তার গুরুদক্ষিণা দিতে সাহায্য করে। আর এর জন্য কোন রাজার রানীমহলেই সে এক বছরের বেশি থাকতে চায় না। (মাধবী নাটকে)

বিনোদিনী নাটকে বিনোদকে ১০ হাজার টাকা সাদলে সে ফিরিয়ে দেয়।
নারী পুরুষের ওপর নির্ভরশীল: গিরীশবাবু মাহশয় বিনোদকে গড়ে তোলে (বিনোদিনী নাটকে) এ নাটকে বিনোদিনী পুরুষের নিকট আশ্রয় নেয়।

বিয়ে আর স্বামীর ঘরই নারীর লক্ষ্য:
বিনোদিনী নাটকে বিনোদ তার আশ্রয়দাতাকে বিয়ে করে সংসার পাততে চায়।

মাধবীকে তিনজন রাজার ঘর করতে হয়েছে পিতার দানের কারণে। (মাধবী নাটকে)

পাঁচিও তার স্বামী পেহ্লাদের ঘর করে শত অত্যাচার সহ্য করেও। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

নারীর রূপ আর চেহারাই আসল:
বিনোদিনী নিজেকে ছোট মনে করে, তার মুখে কি আছে রূপ লাবণ্য। (বিনোদিনী নাটকে)
মাধবীর দুটি গুণ ছিল। সৌন্দর্য ও কৌমার্য ফিরে পাওয়ার গুণ। আবার এই মাধবীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে না আনার কারণে তাকে গ্রহণ করতে চায় না গালব। (মাধবী নাটকে)


নারী প্রেমময়ী:
বিনোদিনী নাটকে বিনোদ ও তার আশ্রয়দাতাকে ভালবাসে।

মাধবীও এক সময় ভালবেসে ফেলে গালবকে। আর এই ভালবাসার মানুষের জন্যই সে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে। (মাধবী নাটকে)

নারীর মেনে নেয়া:
মেরাজের মা আলোবিবি তার মেজ ছেলে সেরাজের স্ত্রী সেলিনাকে বলে সংসারে থাকতে গেলে একটু আধটু মানিয়ে চলতে হয়। যেন মানিয়ে চলা শুধু নারীরই কাজ। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

মাহিনা বাকি পড়লেও বিনোদিনীকে অমৃতলাল বসু বাবু চুপ থাকতে বললে সে মেনে নেয়। (বিনোদিনী নাটকে)

মাধবীকে তার বাবা খ্যাতির লালসায় যখন গালবের হাতে তুলে দেয় আর মাধবী তা মুখ বুজে সহ্য করে ও মেনে নেয়। (মাধবী নাটকে)

নারী পেশাজীবী:
বিনোদিনী নাটকে বিনোদ থিয়েটারে অভিনয় করে অর্থোপার্জনকরে এবং এ নাটকে গঙ্গা বাঈজী গান শুনিয়ে পুরুষের মনোরঞ্জন করে অর্থোপার্জন করে।

নারীর আনন্দ:
থিয়েটারঅলা বিনোদের ইচ্ছা মেনে নিলে সে আনন্দিত হয়। (বিনোদিনী নাটকে)

নারীর লজ্জা:
বিনোদিনী নিজের প্রতি লজ্জা পায়। (বিনোদিনী নাটকে)

নারীর সহমর্মিতা:
বিনোদিনী নাটকে বিনোদ জনগণের জন্য একটু সুখ নিয়ে যেতে চায়।

নারীর কলঙ্ক:
বিনোদিনী নাটকে বিনোদ থিয়েটার ভালবাসে।

নারী অসহায়:
খঞ্জ ভিখারি বসিরের দ্বারা পাঁচির সম্ভ্রমহানী ঘটে। আবার এই বসিরকেই এক রাতে যখন খুন করে ভিখু তখন ভিখুর গাত ঘরেই অজানার পথে পা বাড়ায় পাঁচি। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

ক্ষেত্রমনি পোয়াতি, সে সাহেবকে বাবা বলে রক্ষা পেতে চায়। (বিনোদিনী নাটকে)

নারী প্রশংসিত:
মঞ্চে অভিনয়ের পর দর্শক প্রচুর হাততালি দেয় বিনোদিনীকে। (বিনোদিনী নাটকে)

নারী অবজ্ঞার শিকার:
চুল, দাত, নখ, হাত এসব দেখে মাধবী আসল না নকল তা পরখ করে নেয় অযোধ্যার রাজা হর্যশ্ব। (মাধবী নাটকে)

বিনোদ অসুস্থ হয়ে এক মাসের ছুটি চাইলে মাত্র ১৫ দিনের ছুটি দেয়া হয়। (বিনোদিনী নাটকে)

মেরাজ তার স্ত্রীকে কখনো ঘরের বাইরে বের হতে দেয় না। আবার ভাইয়ের স্ত্রীর প্রতিও অবজ্ঞা আর ধর্মের দোহাই দেখিয়ে নিজেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

নারী অনুগত:
বিনোদিনী থিয়েটার ছেড়ে যেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত পারে না বাকী অর্থ দেয়া হবে না বলে। (বিনোদিনী নাটকে)
মেরাজের কথা মতই তার মা, স্ত্রী এমনকি ছোট ভাইয়ের বউকেও চলতে হবে। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

মাধবীও যেন তার বাবার অনুগত। বাবার কথা মতোই গালবের হাত ধরে সে দুর্গম পথে পা বাড়ায়। (মাধবী নাটকে)

নারীর হাহাকার:
আত্মীয় নাই, স্বজন নাই, বন্ধু নাই বলে বিনোদ হাহাকার করে। (বিনোদিনী নাটকে)

নিজের প্রতি ঘৃণা:
“আমাদের মতো পতিতা, ভাগ্যহীনা, বার নারী, কাঙ্গালিনীরা হীন,” এমনই খেদোক্তি নিজের প্রতি বিনোদিনীর। (বিনোদিনী নাটকে)

নাটকে পুরুষের উপস্থাপন:

পুরুষ সাহসী ও শক্তিশালী:
কোমরে তরবারী নিয়ে বিনোদিনীর ঘরে এক যুবক ঢুকে চিৎকার করে বলে, এত ঘুম কেন? (বিনোদিনী নাটকে)

বাড়িতে ভুতিকে একা পেয়ে ভিখু তার কামনার আগুন নেভাতে ভুতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পেহ্লাদ এসে পড়ায় রক্ষা পায় ভুতি। কিন্তু মাতাল পেহ্লাদ ভিখুকে শায়েস্তা না করে প্রথমে ভুতির উপর চড়াও হয়। এলোপাথারি কিল, ঘুষি, চড় মারতে থাকে ভুতিকে। মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে ভুতি। (প্রাগেতিহাসিক)

পুরুষ প্রভাবশালী:
পাঁচির উপার্জিত টাকা পয়সা কেড়ে নয়ো, নেশা করে বাড়ি ফিরে বউকে মারা, অশ্রাব্য ভাষায় ভুতি, পাঁচিকে গালাগালের মধ্য দিয়ে এই নাটকে পুরুষরা নারীদের উপর সর্বাত্মক কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে আর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পুরুষদের দ্বারা নারীরা হয়েছে নিষ্পেশিত। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

সাহেবরা থিয়েটারকে স্থান ত্যাগ করতে বলে। (বিনোদিনী নাটকে)

কাশেম আলী জমিতে হাল দেওয়ার সময় তার বউ তারে সাহায্য করছিল। আচমকা সেখানে সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে হাজির হন গেদা ফকির। কথা নাই, বার্তা নাই কাশের আলীর বউয়ের পেটের কাপড় তুলে পেটে আলকাতরা ঘষে দেয় এই গেদা ফকির। (মেরাজ ফকিরের মা)

ঋষি বিশ্বামিত্র এবং রাজা যযাতি দুজনেই প্রভাবশালী তাদের নিজেদের অবস্থানে। (মাধবী নাটকে)

পুরুষ প্রতারক:
বিনোদিনী নাটকে বিনোদ যার আশ্রয়ে ছিল তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং তিনি বিনোদের শরীর ভঙ্গ করে অন্যত্র বিয়ে করেন।

মাধবীকে ভালবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে গালব তাকে ব্যবহার করে তার কার্য হাসিল করে। মাধবী তার সৌন্দর্য ফিরিয়ে না আনায় গালব আর মাধবীকে গ্রহণ করতে চায় না। (মাধবী নাটকে)

পুরুষ প্রেমিক:
অসুস্থ বিনোদকে তার ভালবাসার মানুষ সুস্থ করে তোলে। (বিনোদিনী নাটকে)

পুরুষ ঠকায়:
বিনোদিনী নাটকে প্রতাপবাবু বিনোদের মাহিনা ঠিকমত দেয় না। (বিনোদিনী নাটকে)

মাধবী নাটকেও গালব শেষ পর্যন্ত মাধবীকে ঠকায়। মাধবীর রূপ সৌন্দর্য না থাকায় সে আর মাধবীকে গ্রহণ করতে চায় না। (মাধবী নাটকে)

পুরুষ কাতর:
বিনোদ অর্থ গ্রহণ না করলে যুবক কাতরতার সহিত দুই হাতে মুখ বেঁকে বসে ছিলেন। (বিনোদিনী নাটকে)

আটশত অশ্বমেধ ঘোড়া সংগ্রহে গালব কাতর হয়ে রাজা যযাতির কাছে ভিক্ষা চায়। (মাধবী নাটকে)

পুরুষ মেনে নেয়:
বিনোদিনী থিয়েটার ঘর করে দিতে বললে গুরু বাবু মেনে নেয়। (বিনোদিনী নাটকে)

পুরুষ ছলকারী:
বিনোদিনী যেন থিয়েটার করতে না পারে সেজন্য তাকে দুই মাস ঘরে বসিয়ে রাখা হয়। (বিনোদিনী নাটকে)
পুরুষ লোভী:
পুরুষ নারীর প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করলে কোনরূপ বাস্তবতা, নৈতিকতা গ্রাহ্য করে না। যে কোন উপায়ে তাকে হাসিল করতে চায়। এবং এটা দোষের কিছু নয়। এ সম্পর্কে কুরাণে আছে-

“তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের শস্যক্ষেত্র; তাই তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারো।” (সূরা-বাকারা:২২৩)

প্রাগৈতিহাসিক নাটকে ভিখুর একটি কথা থেকে বিষয়টি বোঝা যায়। ভিখু বলেছিল- তার ইচ্ছে হয় পৃথিবীর সকল পুরুষকে হত্যাকরে, সব খাদ্য ও নারীদের একা দখল করতে।

পাঁচির সারাদিনের উপার্জিত টাকায় ভাগ বসাতে চায় বসির। পাঁচি রাজি না হলে বসির তার সমস্ত টাকা কেড়ে নেয়। অসহায় পাঁচি কাদঁতে থাকে। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

মাধবীকে নিয়ে গালব যখন অযোধ্যার রাজার কাছে যায় তখন রাজ দরবারে মাধবীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়। জ্যোতিষী পরীক্ষা করে বলে যে এই নারীই চক্রবর্তী রাজার জন্ম দিতে পারবে। আমাদের দেশেও বিয়ের সময় নারীর দাঁত, চুল, হাটার ধরন ইত্যাদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়। (মাধবী নাটকে)

পুরুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী:
কাশেম আলী তার জমিনের কাজে বউয়ের সাহায্য নিলে গেদা ফকির এসে ফতোয়া দেয় যে, জেনানা থাকবে অন্দরে, কেবল অন্দরে। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

মাধবীর বাবাই সিদ্ধান্ত নেয় তার মেয়েকে খ্যাতির জন্য উৎসর্গ করতে। সবাই তখন রাজা যযাতির আরো সুনাম করবে। বলবে দানশীল রাজা যযাতি। (মাধবী নাটকে)

পুরুষ যৌনলিপ্সু:
বিন্নু-ফুলির প্রেমপূর্ণ বিয়ে, সংসার, প্রেমালাপ দেখে ভিখু চরমভাবে পীড়িত হয়েছিল। কেননা তার মধ্যে অবদমিত ছিল তীব্র যৌন আকর্ষণ। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

বিনোদিনী নাটকে আশ্রয়দাতা বিনোদকে ভোগ করে। (বিনোদিনী নাটকে)

পুরুষ পেশাজীবী:
বিনোদিনী নাটকে গিরীশ বাবু, অর্ধেন্দু বাবু, দাসু বাবু, গুরু বাবু, প্রতাপ বাবু, দীনবন্ধু বাবু এরা সবাই থিয়েটারের সাথে জড়িত। এছাড়াও এ নাটকে ম্যাজিস্ট্রেট ও সাহেবরাও পুরুষ। (বিনোদিনী নাটকে)

মেরাজ ফকিরের মা নাটকেও পুরুষরাই হচ্ছে পেশাজীবী আর নারীরা তাদের অধস্তন। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

পুরুষ রাগী:
সেরাজের স্ত্রী সেলিনাকে দেখে রাগ হয়ে বাড়ি ছেড়ে খানকায়ে গিয়ে উঠে মেরাজ ফকির। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

বিনোদিনী নাটকে যুবক রাগ হয়ে তরবারী দিয়ে বিনোদিনীর মসনদে আঘাত করে। (বিনোদিনী নাটকে)

নাটকের সংলাপ:
“...নারী জাতিকে বিশ্বাস নাই।....আরে নারী জাতিই যদি ডাণ্ডা ঘোরাবে তাহলে আমরা মরদেরা করব কি? রান্দা ঘরে গিয়া ভাত রানব? বছরের এই মাথায় ঐ মাথায় গাভীন হব?”
-মেরাজ ফকির শিষ্য তোবারকের উদ্দেশ্যে। (মেরাজ ফকিরের মা)

“...যত দোষ সব হইল ভুতিগো, স্বামীর গায়ে হাত তুলন হইল মহাপাপ, তা না হইলে.....পাপ, পাপ কি শুধু নারীর বেলায়? সংসার-সমাজ-ধম্য সব কি তাইলে নারীগো নির্যাতনের লাইগা সৃষ্টি করেছে ঐ পুরুষরা? তাই যদি হয় তাইলে ধ্বংস হইয়া যাইবো এ সমাজ, এ সংসার –এ আমি কয়া দিলাম।”
-ভুতির প্রতিবাদ। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

“আমাদের গন্তব্য পথ দূষণীয়, ভাল পথ দিয়ে চলতে গেলে মন্দ এসে বাধা দেয়; আত্মরক্ষা যে নিন্দনীয়, আমাদের চাহিবার কেহ নাই, সাহায্য করবারও কেউ নেই।”
-বিনোদিনী নিজের প্রতি নিজে। (বিনোদিনী নাটকে)

“কুলটা ছেনাল মাগী, আইজ তর একদিন কি আমার একদিন। লুল্যার লগে পিরিত? আইজ আমি বাইর করমু তর পিরিতি।”
-ভুতিকে মাতাল পেহ্লাদ বলে। (প্রাগৈতিহাসিক নাটকে)

“আদব কায়দা জানে না। মাথায় ঘোমটা দেয় না। চুল বান্ধে না। সিনা উঁচা করে হাঁটে। নাউজুবিল্লাহ। আম্মাজান, আমার বেয়াদবি নিবেন না। এইবারও যদি বাড়িতে এইসব বেলেল্লাপনা হয় তাহলে আমি বিবি বাচ্চা লয়ে খানকায় গিয়া বাসা বান্দিব।”
-শহর থেকে মেজভাইয়ের স্ত্রী আসবে শুনে মায়ের সাথে এ কথা বলে মেরাজ। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

“তেমন হাউস হলে চার নম্বর বিবি গ্রহণ করেন। অন্যের বউয়ের পেটে হাত দিবার দরকার হবে না।”
-গেদা ফকিরকে লক্ষ্য করে মেরাজ ফকির (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)
“বাজানে বলে, মাইয়া মানুষের খোলাচুলে নাকি শয়তান ভর করে।”
-মেরাজের মেয়ে জবা চাচি সেলিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

“তুমি তো জান, এই বাড়ির সকলেই মেরাজ ফকিরের কেমন তোয়াজ কইরা চলে। ক্যান ওর বউডারে দ্যাখ না? এই নাবা জবার মতন এত বড় বড় পোলাপানের মা হইছে। এখনও স্বামীর সঙ্গে পরিষ্কার গলায় কথা বলতে পারে না। কেবল ম্যাও ম্যাও করে। ঘরের বাইরে বাড়ির উঠানেও পা ফেলে না। মেরাজ পারে তো বউয়েরে রাইতদিন সমানে মশারির নিচে ফেলে না।”
-মেরাজের মা মেজ ছেলের স্ত্রী সেলিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

অসংবেদনশীল শব্দ:
ললনা, হতচ্ছারিনী, বারনারী, পতিতা, কাঙ্গালিনী (বিনোদিনী নাটকে)

কুলটা, ছেনাল, মাগী (প্রাগৈহিাসিক নাটকে)

মাইয়া লোক, বন্ধ্যা, জেনানা, অপরূপা সুন্দরী (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)


নাটক ও বাস্তবতা:
বিনোদিনী নাটকে থিয়েটার ছাড় বললে বিনোদ অর্ধ লক্ষ টাকার প্রলোভন ত্যাগ করে, যা বাস্তবতা বিবর্জিত। পতিতা, বারনারী ছিল বিনোদ, কিন্তু বাস্তবে এদেশের মঞ্চ নাটকে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর নারীরাও অভিনয় করে। (বিনোদিনী নাটকে)

মাধবী চাইলেই তার বাবার কথা অমান্য করতে পারতো। কিন্তু সেও একই ভাবে তার বাবার চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তকে দ্ব্যর্থহীনভাবে মেনে নেয়। তিনজন রাজার কাছে থাকা কিংবা ঋষি বিশ্বামিত্রের কাছে না থেকে মাধবী চাইলে পালাতে পারতো। (মাধবী নাটকে)

মেরাজের স্ত্রীকে মেরাজ ঘরের বাইরে বের হতে দেয় না। আর এটা যেমন মেরাজের বাবা-মা মেনে নেয় তেমনি স্ত্রী নিজেও মেনে নেয়। (মেরাজ ফকিরের মা নাটকে)

নেপথ্য যারা:
নেপথ্যে নাট্যকার, নির্দেশক, আলোক প্রক্ষেপক, এরা প্রত্যেকেই নাটক রচনা, নির্দেশনা ও আলোক প্রক্ষেপণে লিঙ্গ পক্ষপাতদুষ্টে দুষ্ট হয়েছেন। নাট্যকার নাটকের যে প্রেক্ষাপট তৈরী করেছেন তাতে নারীকে দেখানো হয়েছে পুরুষের নিয়ন্ত্রণাধীন। নাট্যকারের লেখা নাটকের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকে পরিচালকও ঠিক ঠিক ভাবে জিইয়ে রেখেছেন।

ফলাফল:
গবেষণার প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকগুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বজায় থাকছে কী-না। নাটক চারটির আধেয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, বাংলাদেশের মঞ্চ নাটগুলো জেন্ডার সংবেদনশীল নয় এবং খুব বেশী মাত্রায় জেন্ডার অসংবেদনশীল বিষয় প্রচার করছে। এছাড়া নিম্নোক্ত বিষয়গুলো চোখে পড়েছে:

 নাটকে কোন কোন সময় নারীর উপর আলোকে এমনভাবে ফেলা হয়েছে যেন নারীর সৌন্দর্য, তার রূপকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। নারীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে উদ্ভাসিত করা হচ্ছে।
 নারীর ক্ষমতায়ন, তার চিন্তা ও বুদ্ধি বৃত্তিক চর্চার স্বাধীনতা, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ, নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করতে মঞ্চ নাটকগুলো সক্ষম হয়নি।
 নারী শুধু বিবাহীতা, সংসারী, মা, গৃহিণী হবে সমাজে প্রচলিত এমন গঁৎবাধা, প্রথাগত ধ্যান ধারণাকেই নাটক ফুটিয়ে তুলেছে।
 নাটকের দৃষ্টিভঙ্গি, উপস্থাপন, চরিত্র সম্পূর্ণ লিঙ্গ পক্ষপাতদুষ্ট।
 আট-সাঁট এবং কিছুটা খোলা মেলা পোশাকের মাধ্যমে নারীর, রূপ, সৌন্দর্য এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে নারীকে এভাবে বিকৃত ও বৃত্তাবদ্ধভাবে রূপায়িত হলে সমাজের অর্ধেকটা পঙ্গুই থেকে যাবে। সৃষ্টি হবে সামাজিক ক্ষতের। অপরিপূর্ণ থেকে যাবে সামাজিক বিকাশ। তাই বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকে নারীকে, অধঃস্তন, যৌনবস্তু, পরনির্ভরশীল সত্তা হিসেবে রূপায়নের যে কাঠামো টিকে রয়েছে তা বদলের সময় এসেছে এবং সমাজ বিকাশের তা বদলাতে হবে।

সুপারিশমালা:

মঞ্চ নাটকে জেন্ডার সংবেদনশীলতা বজায় রাখার জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা জরুরী-
১. সবার আগে এ বদ্ধমূল ধারণা দূর করতে হবে যে, জন্মগত কিছু পার্থক্য ছাড়া নারী পুরুষ অন্য সকল দিক থেকে সব বিষয়ে সমান ও সমক্ষমতাবান।
২. যারা অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন তাদের সে সব অভিনয় বয়কট করা উচিত যেখানে নারী বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়।
৩. নাট্যকার, প্রযোজক, নির্দেশক ও কলাকুশলীদের জেন্ডার সংবেদনশীল হবার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৪. দর্শক শ্রোতাদের জেন্ডার অসংবেদনশীল নাটক দূর করতে হবে।
৫. নাটকের সংলাপে লিঙ্গ পক্ষপাতদুষ্টতা দূর করতে হবে।
৬. নাটকের লিঙ্গীয় বিভাজন দূর করতে হবে।
৭. আমাদের সমাজ সংস্কৃতির আবহে মঞ্চ নাটক নির্মাণ করতে হবে।
৮. নাটক সমাজের নারী নির্যাতন, নারী সমস্যাকেন্দ্রিক কোন ঘটনাকে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করা থেকে উত্তরণের উপায় দেখিয়ে দিতে হবে।
৯. প্রচলিত ধারার বাইরে এসে আধুনিক ও মননশীল ভাবনা নিয়ে নাটক তৈরী করতে হবে।


উপসংহার:

চেতনার সুখের জন্য আমাদের আছে গণিকা
ইন্দ্রিয় সুখের রক্ষিতা এবং পুত্র লাভের জন্য স্ত্রী।
(আজাদ, ১৯৯৫)
কবি ডধষঃবৎ ডযরঃসধহ এর “ঝড়হম ড়ভ গুংবষভ”এর মতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর “বিদ্রোহী” কবিতায় আমিত্ব শক্তির জয়গানের মধ্য দিয়ে যুব সমাজের মাঝে সংগ্রাম-বিক্ষুব্ধ চেতনার বীজ বপণ করেছিলেন যা মহীরূহ আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। কিন্তু একটা আশ্চর্য বিষয় হলো এমন চিরাচরিত পুরুষসুলভ দৃষ্টি বিদ্যমান।

“আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা; তাঁর কাঁকন-চুড়ির কন-কন
আমি চির-শিশু, চির কিশোর
আমি যৌবন ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচলি নিচোল।”

আলোচ্য এই গবেষণার পূর্বানুমান সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। নারী পুরুষের সামাজিক লিঙ্গ চরমভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে নাটকটিতে। নারীকে উপস্থাপন করা হয়েছে পুরুষ নির্ভর, গরের কাজে পারদর্শী, গৃহিণী ইত্যাদি চরিত্রের মধ্য দিয়ে যা নারী পুরুষের সামাজিক বৈষম্যের পরিচয় বহন করছে। নারীদের ব্যাপারে সামাজিক বৈষম্য ও অসংবেদনশীল দূরীকরণে গণমাধ্যমেই সবার আগে আসতে হবে। প্রদত্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার মাজে সচেতনতা সৃষ্টি করে জেন্ডার অসংবেদনশীল সমাজ ও গণমাধ্যম গড়ে তুলতে হবে। দিন বদলের আজকের পৃথিবীতে যখন পরিবর্তনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, সেখানে বিনোদনের এই সরাসরি মাধ্যম কখন কীভাবে নারী বান্ধব হবে তা দেখার বিষয়।


তথ্যসূত্র:

১. চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম; “রাষ্ট্র ও নাটক: পারস্পরিক অবিশ্বাসের কী ও কেন,” নাট্যপত্র, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, ১৯৯৫,।
২. আজাদ, হুমায়ুন (১৯৯৫); “নারী”; আগামী প্রকাশন; ঢাকা।
৩. আউয়াল, সাজেদুল; “বাংলা নাটকে নারী, পুরুষ ও সমাজ”; অনন্ত প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ, অক্টোবর ১৯৯৯, ঢাকা।
৪. মুহাম্মদ, আনু; “নারী, পুরুষ ও সমাজ”, সন্দেশ প্রকাশনী, ঢাকা-১৯৯৭।
৫. হোসেন,সেলিনা ও মাসুদ্দুজ্জামান(সম্পাদিত); “বাংলাদেশের নারী ও সমাজ”।
৬. হোসেন, সেলিনা ও মাসুদুজ্জামান (সম্পাদিত), (১ম খণ্ড), “জেন্ডার বিশ্বকোষ”, মাওলা
ব্রাদার্স, ২০০৬, ঢাকা।
৭. পারভিন, সিতারা; “গণমাধ্যমে যে নারীকে দেখি”; জেন্ডার মিডিয়া এন্ড জার্নালিজম; ডিসেম্বর ২০০২; বিসিডিজেসি; ঢাকা।
৮. রীয়াজ, আলী; “বাংলাদেশের নারী”; চারদিক; ১৯৯৫, ঢাকা।
৯. রহমান, শাহীন; “জেন্ডার প্রসঙ্গ; স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট; ১৯৯৮, ঢাকা।
১০. আজাদ, হুমায়ুন; “দ্বিতীয় লিঙ্গ”; আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৮, ঢাকা।
১১. নারী সংহতি; গণমাধ্যম ও নারী; নারী সংহতি প্রকাশনি; ১৯৯৯, ঢাকা।
১২. হুমায়ুন, রাজিব; “নাটক রচনা রূপ ও গীতি”, বাংলা একাডেমি; ১৯৯২, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:১২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×