খোলা যায়গায় মলত্যাগ, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একটি বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা। এটা নিয়ে ভারতকে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই বিব্রতকর অবস্থায় থাকতে হয়। আমাদের বাংলাদেশের সমাজে এই সমস্যা অনেক আগে থেকেই অনুপস্থিত! অর্থাৎ সমাজ এই সমস্যা থেকে বের হয়ে এসেছে, কিন্তু রাষ্ট্র কি বের হতে পেরেছে? উত্তর; না, পারেনি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত অঞ্চলের একেবারেই নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোও এখন মলত্যাগের ক্ষেত্রে শৌচাগার ব্যবহার করে। অথচ রাষ্ট্র নিসংকোচে এখনো সারাদেশব্যাপী দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা খোলা যায়গায় মলত্যাগ করে যাচ্ছে!
ভাবছেন কিভাবে?
আমি এখন ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখী সিল্কসিটি ট্রেনে আছি, যে ট্রেনটি দেশসেরা ট্রেনগুলোর একটি। ট্রেনের যাত্রী হিসেবে সবচেয়ে দরিদ্র সমাজের প্রতিনিধিও যেমন আছে তেমনি আছে সবচেয়ে ধনী পরিবারের সদস্যও। সামাজিক ব্যবস্থায় এদের প্রত্যেকেই সংরক্ষিত শৌচাগার ব্যবহার করলেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ট্রেনের খোলা শৌচাগার ব্যবহার করে/করছে। আমাদের ট্রেনের গঠন অনুযায়ী মলত্যাগের সাথে সাথেই তা পড়ছে রেললাইনে, যা কখনো মেঠোপথে কখনো আবার ক্রসিংয়ের কারণে রাজপথে। ফলে নোংরা হচ্ছে পরিবেশ।
দুই ধারে গাছ কিংবা ফসলের মাঠ থাকায় আমাদের রেললাইনগুলোকে অনেক সুন্দর দেখায়, ফলে রেলপথ ধরে হাঁটতেও ইচ্ছে হয়! কিন্তু শুধুমাত্র এই একটি কারণেই সেই পথ ধরতে আপনার রুচিতে বাধবে।
শুধু পরিবেশ-ই নয়, পাশাপাশি এর ফলে জং ধরে নষ্ট হচ্ছে রেলের স্লিপারগুলোও। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই চলন্ত ট্রেনে ত্যাগ করা মলগুলো সংরক্ষণ করে যাত্রা শেষে ট্রেনের ওয়ার্কশপের সময় তা খালি করার ব্যবস্থা করতে পারে!
রেলক্রসিংয়ের ধারে চা এর দোকানে বসে চা খেতে খেতে এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল এই বিষয়টা নিয়ে। তিনি বললেন; তাদের একটা প্রশিক্ষণ কর্মশালাতে রেলের উর্ধ্বতন এক কর্তাকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন যে, আমাদের ট্রেনগুলোতে এখনো এই নোংরা পদ্ধতি চালু আছে কেন?
সেই কর্তার উত্তর ছিল; আমাদের ট্রেনগুলো ভারত থেকে আনা হয়, আর ভারতের ট্রেনের ধরণ এমনই। তাই পরে আর কিছু করা হয়ে উঠেনা!
শুনে আমি হাফ ছেড়ে বললাম, ভাগ্যিস আমরা বিমানগুলো ভারত থেকে কিনি না!