উন্নয়ন করলাম, তবু জনগণ ভোট দিল না। তবে আর উন্নয়ন করে লাভ কি?’- প্রধানমন্ত্রী থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক, এই হতাশা সবার ভেতরে লক্ষ্য করছি।
আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা আর জনগণের ভাবনার ব্যাপক পার্থক্য লক্ষণীয়। আমার বিশ্লেষণে এই পার্থক্যের কয়েকটি কারণ-
১. বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৯০০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৬০০০ বা ৬৬০০ মেগাওয়াট করা হয়েছে। আগের তুলনায় কিছুটা বেশি বিদ্যুৎ পেয়ে মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। সেই স্বস্তি আবার বিল দিতে গিয়ে অস্বস্তিতে পরিণত হয়েছে। ৩০০ টাকার বিল ১৫০০ টাকা হয়েছে। কুইক রেন্টালের দুর্নীতি, পিডিবির কেন্দ্র বন্ধ করে রাখা- এই কারণে সরকারের উপর মানুষ বিরক্ত হয়েছে। ক্ষুব্ধ-ক্ষিপ্ত হয়েছে।
২. বেশ কিছু ফ্লাইওভার দৃশ্যমান হয়েছে, আরও হবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্র, ঢাকা চট্টগ্রাম ৪ লেন না হওয়া মানুষ মেনে নিতে পারেনি। ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক সংস্কার না করে, কথা বলা মানুষ পছন্দ করেনি।
৩. অযোগ্য অদক্ষ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ-নেতাদের কথায় মানুষ বিরক্ত হয়েছে।
৪. শত সমালোচনার মাঝেও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য দৃশ্যমান। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তার অযোগ্য মন্ত্রী, নেতাদের অতিকথনে মানুষ বিরক্ত হয়েছে। বিচার নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া প্রচেষ্টায় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।
৫. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায়, যে ঢঙে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে কথা বলেছেন, বলছেন- তা মানুষ পছন্দ করেনি, করছে না।
৬. ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী, নেতাদের কথায় বড়ভাবে নিজেদের ইমেজ নষ্ট করেছেন। বিদেশে বন্ধু হারিয়েছেন।
৭. ৫টি সিটি কর্পোরেশনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ হতাশ হয়ে যে ভাষায় কথা বলছে, কাজ করছে- তাতে জনমানুষ অস্মানিতবোধ করছেন। যেমন বরিশাল-খুলনার দু’টি উন্নয়ন কাজ আটকে দেয়া খুবই নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।
৮. সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম রাজনৈতিক বক্তৃতায় যে ভাষায় কথা বলেছেন, ‘...আমিই করাই।... আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবেই।’
আমাদের যে প্রচলিত নিম্নরুচির রাজনীতি, মানুষ ভেবে নিতে পারে জয়ও সেই ধারারই একজন। আওয়ামী লীগের নতজানু, দুর্বল নেতৃত্ব জয়ের প্রবাসে থাকার সরলতার সুযোগ নিয়ে, পরাজয়ের সকল দায়দায়িত্ব তার ওপর চাপিয়ে দেবে।
৯. আমি সৎ, আমি খুব ভালো, আমার অনেক সাফল্য, আমি অনেক কিছু করলাম... অথচ জনগণ কিছুই বুঝল না! জনভাবনা যদি এমন হয়, বুদ্ধিমান মানুষ তখন পেছন ফিরে দেখে। জানার চেষ্টা করে জনভাবনা কেন এমন। শুধু অন্যের ওপর দোষ চাপায় না
বি. দ্র. : Mushtuq Hussain ডাকসুর সাবেক ভিপি, অনুসরণীয়-শ্রদ্ধেয় ছাত্রনেতা। জয় সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘জয় যে জোয়ারের সময় সক্রিয় না হয়ে, ভাঁটার সময় রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন, সেটাই সুখের কথা। তবে সম্ভাব্য পরাজয়ের দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগের ঝানু নেতারা না আবার জয়ের ঘাড়ে ফেলে দেয়!