সজুফা বেওয়ার গল্প
“কি কতা কমু? কাম করি , বাত খাই। কেডায় আমারে দেকবো...?” হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন সজুফা বেওয়া। তার হাসিতে কতটা বেদনা লুকিয়ে আছে , তিনি ছাড়া আর কে জানেন! বললেন অনেক কথা-
পাঁচ বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় সজুয়া বেওয়া। বেওয়া নামটা যুক্ত হয়েছে বিধবা হওয়ার পর। আগে বাবা আদর করে ডাকতেন সজুফা। ঢাকা বিভাগের আড়াইহাজার থানার বাহাদুরপুর গ্রামে বাবা ছিল প্রচুর সম্পত্তির মালিক। অভাব কাকে বলে ছোটবেলা দেখেননি তিনি। হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে বড় হচ্ছিলেন। পুতুল বিয়ের খেলার মত করেই বিয়ে হয়ে গের সুদূরের কোন ভালো পোলার সাথে। সুখের সংসার। কিন্তু কে জানে উত্থান আর পতনের খেলা! সন্তান তখন গর্ভে। হঠাৎ করেই স্বামীর মুত্যু হলো কি এক কাশি ব্যারামে। সন্তানকেও বড় করতে পারলেন না। শনি যেন সরেই না জীবন থেকে! টাইফয়েড কেড়ে নিয়ে গেছে পাঁচ বছরের সন্তানকেও। তারপর?
তারপর বাপের বাড়িতেই থাকা। বাবার বিশাল সম্পত্তি যেন কি করে হারিয়ে গেল। বলতে পারে না সজুফা বেওয়া। একমাত্র ভাইও ঠুকেঠুকে চায়ের দোকান করে সংসার চালায়। তার সংসারে খাওয়ার আরেক মুখ বাড়ানো বড় লজ্জার মনে হয় সজুফার। বয়সতো কম হলো না! কেটে যাচ্ছে জীবন। মানুষে ডাক দিলে কাম করে দেন। কট চাল ঝাড়া , পেয়াজ কাটা , মশলা বাঁটা। এইতো কিছুণ আগে এক বাড়িতে পেয়াজ কুচিয়ে দিলেন। পাঁচ টকা দিল। এখন চোখেও কম দেখেন। ষাট বোধহয় পেরুলো, চুলেও ধরেছে জটা। তেল কোথায় যতœ নেবার!
প্রশ্ন করা হলো , “বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা পান না?”
পান মুখে একগাল হাসলেন বেওয়া। “সধবারাই আগে পাউক। আর বয়স্ক ভাতা কিয়েরে কয়? হুনছি বুইড়া মাইনসেরে সরকারে ট্যাহা দেয়। জুয়ানরাই আগে পাইয়া লোক, হেরপরেনে আমরা!”
“কেন? আপনাদের জন্যইতো সরকারের এই উদ্যোগ!”
“ বাদ দেন। যহন বোটের(ভোটের) সময় অয় , তহন ভাতা লাগেনা। কত দলেই ট্যাহা দেয়! পাশ কইরা কে কার খবর লয়...।” বলতে বলতেই রাস্তা ধরে ঢালের নিচের দিকে নেমে গেলেন সজুফা বেওয়া। শাক তুলছেন। শাক বেঁচলে টাকা আসবে। টাকা আসলে চাল আসবে। সে চালে ভাত হবে। আর ভাত হলে ভরবে পেট।
আর এভাবেই সজুফা বেওয়াদের বেঁচে থাকা। কে দেবে এদের ভাতা, কেইবা দেবে এদের অধিকার....।
[আজ নারীদের বিশেষ দিন। বেগম রোকেয়ার প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা। জাগো নারী...]
- মু . বি . ই .
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


