somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর বেঁচে থাকা

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নিরন্তর বেঁচে থাকা
সজুফা বেওয়ার গল্প



“কি কতা কমু? কাম করি , বাত খাই। কেডায় আমারে দেকবো...?” হাসতে হাসতে কথাগুলো বললেন সজুফা বেওয়া। তার হাসিতে কতটা বেদনা লুকিয়ে আছে , তিনি ছাড়া আর কে জানেন! বললেন অনেক কথা-

পাঁচ বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় সজুয়া বেওয়া। বেওয়া নামটা যুক্ত হয়েছে বিধবা হওয়ার পর। আগে বাবা আদর করে ডাকতেন সজুফা। ঢাকা বিভাগের আড়াইহাজার থানার বাহাদুরপুর গ্রামে বাবা ছিল প্রচুর সম্পত্তির মালিক। অভাব কাকে বলে ছোটবেলা দেখেননি তিনি। হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে বড় হচ্ছিলেন। পুতুল বিয়ের খেলার মত করেই বিয়ে হয়ে গের সুদূরের কোন ভালো পোলার সাথে। সুখের সংসার। কিন্তু কে জানে উত্থান আর পতনের খেলা! সন্তান তখন গর্ভে। হঠাৎ করেই স্বামীর মুত্যু হলো কি এক কাশি ব্যারামে। সন্তানকেও বড় করতে পারলেন না। শনি যেন সরেই না জীবন থেকে! টাইফয়েড কেড়ে নিয়ে গেছে পাঁচ বছরের সন্তানকেও। তারপর?

তারপর বাপের বাড়িতেই থাকা। বাবার বিশাল সম্পত্তি যেন কি করে হারিয়ে গেল। বলতে পারে না সজুফা বেওয়া। একমাত্র ভাইও ঠুকেঠুকে চায়ের দোকান করে সংসার চালায়। তার সংসারে খাওয়ার আরেক মুখ বাড়ানো বড় লজ্জার মনে হয় সজুফার। বয়সতো কম হলো না! কেটে যাচ্ছে জীবন। মানুষে ডাক দিলে কাম করে দেন। কট চাল ঝাড়া , পেয়াজ কাটা , মশলা বাঁটা। এইতো কিছুণ আগে এক বাড়িতে পেয়াজ কুচিয়ে দিলেন। পাঁচ টকা দিল। এখন চোখেও কম দেখেন। ষাট বোধহয় পেরুলো, চুলেও ধরেছে জটা। তেল কোথায় যতœ নেবার!

প্রশ্ন করা হলো , “বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা পান না?”

পান মুখে একগাল হাসলেন বেওয়া। “সধবারাই আগে পাউক। আর বয়স্ক ভাতা কিয়েরে কয়? হুনছি বুইড়া মাইনসেরে সরকারে ট্যাহা দেয়। জুয়ানরাই আগে পাইয়া লোক, হেরপরেনে আমরা!”

“কেন? আপনাদের জন্যইতো সরকারের এই উদ্যোগ!”

“ বাদ দেন। যহন বোটের(ভোটের) সময় অয় , তহন ভাতা লাগেনা। কত দলেই ট্যাহা দেয়! পাশ কইরা কে কার খবর লয়...।” বলতে বলতেই রাস্তা ধরে ঢালের নিচের দিকে নেমে গেলেন সজুফা বেওয়া। শাক তুলছেন। শাক বেঁচলে টাকা আসবে। টাকা আসলে চাল আসবে। সে চালে ভাত হবে। আর ভাত হলে ভরবে পেট।

আর এভাবেই সজুফা বেওয়াদের বেঁচে থাকা। কে দেবে এদের ভাতা, কেইবা দেবে এদের অধিকার....।
[আজ নারীদের বিশেষ দিন। বেগম রোকেয়ার প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধা। জাগো নারী...]

- মু . বি . ই .
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×