ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডিলমা রুসেফ। ব্রাজিলের নির্বূাচনের দ্বিতীয় দফা ভোট গ্রহণের পর দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক গণতন্ত্রী দলের জোসে সেরার চেয়ে শতকরা ১২ভাগ ভোট বেশী পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মিস্ ডিলমা রুসেফ। মতাশীন ওয়াকার্স পার্টির নেত্রী ডিলমা রুসেফ শতকরা ৫৬ ভাগ ভোট বেশী পেয়ে হতে চলেছেন ব্রাজিলের ইতিহাসের এক সুবর্ণ অংশীদার, প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। জানুয়ারীতেই মিস্ ডিলমা রুসেফ গ্রহণ করবেন প্রেসিডেন্টের অফিস ।
মার্কিন ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় বিশ্বের ১৬-তম মআধর ব্যক্তি হিসেবে উঠে এসছেন ডিলমা রুসেফ। ১৯৪৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাজিলের কফির প্রদেশের বেলো হোরিজন্টে এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় তার। আইনজ্ঞ, কবি ও ব্যবসায়ী বাবা ছিলেন বুলগেরিয়ান ইমিগ্রান্ট। আর ব্রাজিলীয় মা ছিলেন স্কুল শিকিা। ছেলেবেলার ক্যাথলিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ তাকে করেছিল ক্ষুব্ধ; হতে পারে বাবার কমিউনিজম মনোভাবেরও ফল- মাত্র ১৭বছর বয়সেই যোগ দেন মার্কসবাদী গ্রুপে। নেন গরিলা প্রশিক্ষণও। ব্রাজিলের ১৯৬৪-১৯৮৫সালের সামরিক শাসকদের কুনজরে পড়ায় ১৯৬৯ সালে আত্মগোপন করেন তিনি। কিন্তু ১৯৭০ সালে জেলে যেতে হয় তরুণী রুসেফকে। দৃ’বছর পর ১৯৭২ সালে ছাড়া পেয়েই পড়াশোনায় যোগ দেন তিনি। ১৯৭৭ সালে অর্থনীতির উপর ডিগ্রী নিয়েই যোগ দেন তৎকালীন ডেমোক্র্যাটিক ওয়াকার্স পার্টিতে। রাজনীতির পাশাপাশি ৮০ এবং ৯০-এর দশকে রিও গ্রান্ডে ডো সুল প্রদেশে অর্থ, শক্তি, জ্বালানী ও যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে কাজও করেছেন মিস্ রুসেফ। মিস্ রুসেফ ব্রাজিলের ৪০-তম চীফ স্টাফ হিসেবে প্রেসিডেন্ট লুলার অফিসে ৩১ মার্চ ২০১০ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রথম স্বামীর সংগে বিচ্ছেদের পর বিয়ে করেন আইনজ্ঞ সাংবাদিক কার্লোস আরাওজোকে। তাদের একমাত্র সন্তান পাউলা রুসেফ আরাওজো। ২০০০ সালে দ্বিতীয় স্বামীর সংগেও ঘটে বিচ্ছেদ। গতবছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করেছেন মিস্ রুসেফ। অদম্য মনোবল আর চার মাসের কেমোথেরাপি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেন এই ব্রাজিলীয় লৌহমানবী ।
নির্বাচনে ব্রাজিলের জনপ্রিয় সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডা সিলভা পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন মিস্ ডিলমা রুসেফকে। নির্বাচনের কিছুদিন আগে ব্রাজিলীয় মেয়েদের এবোরশন নীতির বিতর্কও জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি এই বাম নারী নেত্রীর। তিনি ব্রাজিলে তিকর ড্রাগের বিরুদ্ধে অবস্থান জানান। তিনি সমকামী বিয়ের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, “বিয়ে একটি ধর্মীয় আচার। আমি ব্যক্তিগতভাবে ধর্ম সম্পর্কে কথা বলতে চাই না। তবে আমার শ্রদ্ধা রয়েছে।” তিনি ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর জোর দেন। বলেন ধনী দেশগুলোর সংরণনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার কথা। তিনি বলেন, “ আমি এমন রাজনৈতিক সংস্কার চাই , যা প্রজাতন্ত্রী মূল্যবোধের উন্নতি ঘটাবে এবং আমাদের তরুণ গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবে।” মিস্ ডিলমা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলাকেও।
আগামী জানুয়ারী মাসের ১ তারিখ থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির হাল ধরতে যাচ্ছেন এই সংগ্রামী নারী, ডিলমা রুসেফ। নির্বাচনের পর ঐতিহাসিক ভাষণে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে। কেবল কতগুলো সংখ্যা আর অবাস্তব কতগুলো বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। ব্রাজিলের প্রতিটি নাগরিককে নিয়ে ভাবতে হবে আমাকে।” তিনি মেয়েদের বাবা-মাদের উদ্দেরশ্য বলেন, “ আমি আজ মেয়েদের বাবা-মার চোখে চোখ রেখে বলতে চাই আজকাল মেয়েরা সবই পারে..।”
- মু. বি. ই.

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


