somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পবিত্র হোসাইন
মাঝে মাঝে নিজেকে আঠেরো শতাব্দীর অঘোষিত সাফল্যহীন কবি মনে হয়। যার কিছু লেখা নামহীন বাজারি পত্রিকায় ছাপা হয়ে ছিল কিন্তু কেউ তা পড়ে দেখিনি।

আজ ইরাবতীর বিয়ে

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রুহিলা বেগমকে আজ সকাল থেকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। তার মুখের ভাব ফ্যাকাসে, ব্লাড প্রেসার লো হয়ে গেছে। এর প্রধান কারন আজ তার একমাত্র মেয়ে ইরার বিয়ে। মেয়ের বিয়েতে মায়েরা বোধ হয় একটু বেশী উদ্বিগ্ন থাকেন। রুহিলার বেলাতেও সেটির ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তার চিন্তার আরেকটি কারন আছে তা হল ফয়সালকে চিলেকোটার রুমে আটকে রাখা হয়েছে। অন্য আট-দশটি বিয়ের মত এই বিয়ে নয়। খুব সাধারন পারিবারিক ভাবে ইরার বিয়ে হচ্ছে। সকাল থেকে রুহিলা বেগম রান্নাঘর থেকে বের হয়নি। এক হাতে তিনি সব সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। তার কাছে আজ যেন সব কিছু নতুন লাগছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন ইরার রুমে গিয়ে একবার দেখে আসা উচিৎ সে কি করছে। ইরার রুমে যাবার সময় রুহিলা বেগম বারান্দায় একবার উকি দিলেন, ইরার বাবা ওসমান সাহেব বারান্দায় বসে এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে খবরের কাগজ ধরে আছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর তিনি সেনাবাহিনীতে চাকুরী করেছেন। এ বাড়ীর সবাই তাকে ভয় পায়। ওসমান সাহেব সব সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পছন্দ করেন। ইরার বিয়েটা তিনি নিজে ঠিক করেছেন কারো সাথে পরামর্শ করেননি। তার ধারনা মেয়ে মানুষের সাথে পরামর্শ করা অহেতুক বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। গত সপ্তাহে রাতের খাবার খেতে খেতে ওসমান সাহেব বললেন, ইরাবতী - আমি তোমাকে এবং তোমার মাকে না জানিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইরা বুঝতে পারছে তার বাবা তাকে কঠিন কিছু বলবেন কারন তিনি ইরা থেকে ইরাবতীতে চলে গেছেন। কঠিন কিছু কথা বলার আগে তিনি মানুষের পুরো নাম ধরে ডাকেন। যেমন-তাদের বাড়ীর কাজের লোক সামাদের উপর রাগ হলে তিনি তাকে ‘আব্দুল সামাদ হাওলাদার’ বলে ডাকেন। ইরা তার বাবাকে বুঝতে পারে। ইরার মনে করে তার বাবা খুব সহজ-সরল কিন্তু সে রাগী রাগী মুখ নিয়ে বসে থাকতে পছন্দ করেন।
ইরা খুব স্বাভাবিক বলল- বাবা তোমার সিদ্ধান্তের কথা আমি জানি। তুমি আমার বিয়ে ঠিক করেছ। তাই তো? এবং এও জানি আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে।
ওসমান সাহেব আর কিছু বললেন না, চোখ-মুখ শক্ত করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

রুহিলা বেগম মেয়ের ঘরে ঢুকে খানিকটা আবাক হলেন। দিনের বেলা পুরো ঘর অন্ধকার। ইরা দরজা-জানলা, লাইট-ফ্যান বন্ধ করে শুয়ে আছে। মাকে দেখে ইরা স্বাভাবিক ভাবে বলল- লাইট জ্বালাবে না মা। যা বলতে চাও, বলে চলে যাও।
রুহিলা বেগমের খানিকটা মন খারাপ হল। এ বাড়ী সবাই তার সাথে কেমন যেন আস্বাভাবিক আচরন করে। বিশেষ করে ইরা দিন দিন কেমন যেন ওর বাবার মত হয়ে যাচ্ছে। রাগী রাগী ভাব নিয়ে কথা বলে। ইরা আবার বলল- মা, তুমি কি কিছু বলতে চাও?
-ইরা, তুই চাস তোর বাবা আবার স্ট্রোক করুক।
-তুমি এই কথা বলার জন্য এসেছ। তার আগে বলো ফয়সাল কি পাগল?
-পাগল হবে কেন? এ কি কথা বলছিস?
-তাহলে বাবা কেন তাকে চিলেকোটার রুমে আটকে রেখেছে? আমিতো তোমাদের সব কথা মেনে নিয়েছি।
-কেন আটকে রেখেছে সেটা তুই ভাল করেই জানিস। তোর বাবা চায় না তোর বিয়েতে কোন ঝামেলা হোক। আমি এত কিছু শুনতে চাইনা তাড়াতাডি উঠে তৈরী হয়ে নে, বর পক্ষ এখনি চলে আসবে।
ইরা আরো কিছু বলতে পারতো কিন্তু রুহিলা বেগম সে সুযোগ তাকে না দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

বিকেল ৫টা। ওসমান সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। তার সামনের বর পক্ষ বসা। ওসমান সাহেব হাসি হাসি মুখ রাখার চেষ্টা করছেন কিন্তু তা সহজ হচ্ছে না কারন তিনি তরতর করে ঘামাচ্ছেন। ইতিমধ্যে কাজী সাহেব চলে এসেছেন। ওসমান সাহেব হাক ছেড়ে ডাকলেন- আব্দুল সামাদ হাওলাদার ! সামাদ ছুটে এসে বলল- জে স্যার ,আমারে বুলাইছেন ?
-তোর চাচী আম্মারে বল ইরাবতীকে জলদি নিয়ে আসতে।
সামাদ যাওয়ার আগেই রুহিলা বেগম ইরাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকলেন। ওসমান সাহেব ইরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, তার মেয়ে যে এত সুন্দর তা আগে কখনো লক্ষ্য করেনি, লাল শাড়ীতে ইরাকে দেখতে পরীর মত লাগছে। ওসমান সাহেবর বুকের মধ্যে ধরফর করে উঠলো তিনি কোন ভাবে ভাবতেই পারেন না এত সুন্দর মেয়েকে কোন এক জানোয়ার কষ্ট দিয়েছে না হলে আজ এই দিন দেখতে হত না, চুপচাপ এভাবে বিয়ে দিতে হত না।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেছেন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে সম্পূর্ন হয়ে গেল। বিদায় বেলায় ইরা কারো সাথে কোন কথা বলল না স্বাভাবিক ভাবে গাড়ীতে উঠে গেল। ওসমান সাহেব রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়ের চলে যাওয়া দেখতে লাগলেন, তার কাছে সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে, তবে তার ঘোর কাটল রুহিলার চিৎকার শুনে! ইরা চলে যাবার পর রুহিলা আকাশ ফাঁটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল- আমার মেয়ে কোন অপরাধ করেনি, আপনি কেন তাকে এভাবে বিয়ে দিলেন? সে যাবার সময় কারো সাথে একটি কথাও বলল না, আপনার কি একটু খারাপ লাগলো না? আপনি এত পাষান বাবা? ওসমান সাহেব কোন কথা বলতে পারলেন না। চুপচাপ বাড়ীর ভেতরে চলে এসে ডাক দিলেন- সামাদ ! চিলেকোঠা রুমের চাবিটা নিয়ে আয়। সামাদ দৌড়ে চাবি নিয়ে এল। সামাদের হাত থেকে চাবি নিয়ে ওসমান সাহেব তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন।
ওসমান সাহেব চিলেকোঠা রুমের সামনে দাড়িয়ে আছেন তার হাত কাঁপছে, মনে হচ্ছে তিনি তালা খুললে পারবেন না। অনেকক্ষন যাবত চেষ্টা করার পর ঘট ঘট শব্দে তালা খুলে গেল, শব্দ শুনে ভেতর থাকা ৪ বছর বয়সী ফয়সালের ঘুম ভেঙে গেল, গুটি গুটি পায়ে সে দরজার কাছে এগিয়ে এল, কাছে যেতে ওসমান সাহেব তাকে তাকে কোলে তুলে নিলেন।
ফয়সাল কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞাসা করে- মা কোথায়, নানাজান? আমাকে মার কাছে নিয়ে চল। আমি মার কাছে যাব।
-তোমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন বলতেই ওসমান সাহেবের গলা জড়িয়ে আসে। হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠে ।
ফয়সাল কিছুতেই বুঝতে পারে না শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নানাজানের চোখের দিকে।

লেখাটি উৎসর্গ করলাম -
তাহসিন বিনতে উমর।
খুব কাছের অপরিচিত একজন মানুষ।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৫৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×