somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরাবতী (একজন হত্যাকারীর গল্প) {রিপোস্ট}

১৫ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ঐ যে বিল্ডিংটা দেখছেন, ওখানে একটি ছেলে থাকে। আমি প্রতিদিন বিকালে ছাদে যাই ওকে দেখার জন্য। ওর সাথে আমার প্রেম নয়, আমার ভাল লাগা। এ ভাল লাগার কথা ছেলেটি জানেও না, হয়তো কোনদিন জানবেও না। ও যখন জানালার পাশে এসে দাড়ায়, আমি দেখি, ওর চোখ, ওর চুল, ওর মুখ।
ওর মুখ দেখলে মনে পরে রবিঠাকুরের কবিতা-

যদি প্রেম দিল না প্রাণে
কেন ভোরের আকাশ ভরে দিলে এমন গানে গানে?কেন তারার মালা গাঁথা,কেন ফুলের শয়ন পাতা,কেন দখিন হাওয়া গোপন কথা জানায় কানে কানে?।
যদি প্রেম দিলে না প্রাণে
কেন আকাশ তবে এমন চাওয়া চায় এ মুখের পানে?তবে ক্ষণে ক্ষণে কেন
আমার হৃদয় পাগল হেন,তরী সেই সাগরে ভাসায় যাহার কূল সে নাহি জানে?।


আরে! আমার নামই তো বলা হল না।
আমি ইরা। আমার বাবার ইরাবতী। প্রতিটি বাবার কাছে তাদের মেয়ের একটি নিজস্ব নাম থাকে। ইরা নামটি সম্ভবত আমার মায়ের দেয়া। এ নামের কারন আমার জানা নেই তবে ইরাবতী নামের অর্থ আমি জানি। ইরা অর্থ -দক্ষের কন্যা, কশ্যপের স্ত্রী, এবং ইরাবতী - উত্তরের কন্যা, পরীক্ষিতের স্ত্রী ।
হুম...পরীক্ষিতের স্ত্রী!!
আমিও স্ত্রী, তবে পরীক্ষিত কিনা তা জানি না। আমার বর জামান চৌধুরী। এক সময় আমার মায়ের বন্ধু ছিলেন। আমার মায়ের বন্ধু শুনে অবাক হচ্ছেন?
ঠিক, মায়ের বন্ধু না বলে আমার বাবার পত্নীর বন্ধু বললে যথার্থ হবে। কারন আমার মা মারা যাবার পরে বাবা যাকে বিয়ে করেন তাকে আমাদের সামাজিক ভাষায় সৎ মা বলে। তাহলে বলা যেতে পারে জামান চৌধুরী আমার সৎ মায়ের বন্ধু ছিলেন ।
জামান চৌধুরী আর আমার বয়সের ব্যবধান বছর ত্রিশেক হবে, ধরুন আমার বয়স ২২ হলে তার ৫২। তাতে কি? আমার সৎ মায়ের ভাষ্য মতে, আমার ভাগ্যটা অনেক ভাল। কারন অনেক ধনাঢ্য প্রানীর সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। এত বড় ব্যবসা! আচ্ছা প্রানী বললাম রাগ করেননি তো? পুরুষ কি প্রানী হতে পারে? মেয়েদের পুরুষকে দেখে সর্বদা সামলে চলতে হয়। পুরুষ বলে কথা!! না হলে রক্তাক্ত হতে হবে। হোক সেটা শারীরিক অথবা মানসিক।
আর রক্ত? ওতো প্রতি মাসেই ঝরে। সে যাই ঝরুক পুরুষের জৈবিক চাহিদা মেটাতেই হবে, ওসব রক্ত-ফক্ত কিছু না।

তাহলে কিছুটা পুরনো কথা দিয়ে শুরু করি-
আমার মা মারা যাওয়ার বছর খানেক পরে আমার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। তার কিছুদিন পরে জামান চৌধুরীর আগমন ঘটে। উদ্দেশ্য ছিল বাবা ডুবে যাওয়া ব্যবসাকে সফল করা। এ নিয়ে আমার সৎ মায়ের হট্টগোলের শেষ ছিল না। অনেকবার বাবাকে শুনতে হয়েছে -“আজ আমার বন্ধু না থাকলে তোমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হত “
দিন দিন জামান চৌধুরীর আসা যাওয়া বাড়তে থাকে। বাবা বাসায় না থাকা অবস্থায়ও দেখতাম তিনি বাসায় আসতো কিন্তু কিছু বলার সাহস ছিল না আমার।

একদিন বাবা এবং সৎ মা কোন এক অনুষ্ঠানে যায়, আমাকে এসব যায়গায় নেয়া যায় না বলে একা বাসায় থাকতে হয়। এমন সময় বাসায় আসে জামান চৌধুরী। আমি তাকে ড্রইং রুমে বসতে দিয়ে আমার রুমে চলে যাই। হঠাৎ জামান চৌধুরী আমার রুমে আসে, চেপে ধরে হিংস্র বাঘের মত, তার ক্ষিপ্ত বাসনা পূরণ করে, বিশ্বাস করুন সেদিন আমার অসহায় মুখ যদি আপনাকে দেখাতে পারতাম! আমার মর্ম, আত্মা, আমার চিত্ত, চেত সেদিনই মারা গিয়েছিল। আমার মায়ের মুখটা অনেক মনে পড়ে, মা থাকলে এমন হত?
চলে যায় জামান চৌধুরী, শুধু বলে যায়- কাউকে কিছু বললে বাবাকে হারিয়ে ফেলবো!
পড়ে থাকি আমি, পরে থাকে আমার দেহ, আর কিছু রক্ত ...
মাস ছয়েক পরে একদিন জানতে পারলাম, জামান চৌধুরীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার বাবার সম্মতি না থাকলেও তার কিছু করার ছিল না, কারন বাবার ব্যবসার অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবার ব্যবসা বাঁচাতে আমাকে বলির পাঠা হতে হয়।
এক বৃষ্টি বিকেলে আমার বিয়ে হয়। সেদিন প্রথম বাবার চোখে পানি দেখেছিলাম। আমার মায়ের মৃত্যুর দিনও বাবা কাদেঁনি। তবে আজ কি হল বাবার?

বিয়ের রাত। মানে বাসর রাত। জামান মদ খেয়ে এসেছিল সেদিন, ঘরে ঢুকে তার প্রথম কথা ছিল- “তারাতারি কাপড় খুলে বিছানায় আয় মাগী, এত ঢং করার কি আছে? সবতো দেখে নিয়েছি “
জানেন, ঐদিন থেকে আর কখনো কাঁদিনি, কারন প্রতিটিদিন ছিল একই রকম নরক যন্ত্রণার। আমাকে সব সময় তৈরী থাকতে হত নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। কে বলে, মেয়েদের সৌন্দর্য তার চুলে, চোয়ালে, ঠোঁটে? সেটাতো আমার আঘাতের স্থান। এ ঘরের প্রতিটি দেয়াল জানে আমার আর্তনাদ, আমার চিৎকার!
কিন্তু আজ থেকে আর শুনতে হবে না সেগুলো। ঐ যে দেখেন জামানের নিথর দেহ পড়ে আছে!
হ্যাঁ আমি!!! আমি একটু আগে জামানকে খুন করেছি! আজ আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল। আমি জানি এসব জামানের মনে থাকার কথা নয়। আজও জামান মদ খেয়ে এসেছিল। এখনো তার গন্ধ আমার শরীরে লেগে আছে। রান্না ঘরের বড় ছুড়িটা এনে রেখেছিলাম। জামান যখন ঘুমালো, আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। একবার শুধু ওর মুখটা দেখেছিলাম তারপর নিজেকে থামাতে পারিনি, চোখ খুলে দেখি শুধু রক্ত, অনেক রক্ত!
এ রক্ত আমার নয়! এ রক্ত একজন পুরুষের! এ রক্ত একজন মানুষের!

অনেক কথা বললাম, ঐ সিলিং ফ্যানের দড়িটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি মায়ের কাছে যাব। যেতে আমাকে হবেই, ঐ যে মা আমাকে ডাকছে .....


প্রিয় ব্লগারবৃন্দ ,
আপনাদের ভালবাসায় আমার ব্লগটি আজ ২ বছর অতিক্রম করলো। আমি সত্যি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। মন থেকে প্রার্থনা করি সকল ব্লগারের জীবন সুখময় হয়ে উঠুক। ২ বছর উপলক্ষ্যে আমার প্রিয় গল্পটি আবার পোষ্ট করছি। এই গল্পটি প্রথম যখন পোষ্ট করি তখন আমার লেখা প্রথম পাতায় আসতো না তাই গল্পটি আবার পোষ্ট করলাম।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×