somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই!

০১ লা নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাস। ক্যান্টনমেন্ট জুড়ে উত্তাল হাওয়া বইছে। সিপাহীরা বিদ্রোহ করছে। তবে তাদের দাবী স্পষ্ট নয়। একটু পর পর আকাশে গুলি ছোরা হচ্ছে। পরিস্থিতি কোন যাচ্ছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে মেজর জিয়াকে বন্দি করা হয়েছে। বেগম জিয়া ব্যাকুল হয়ে বার বার জেনারেল ওসমানিকে ফোন করতে লাগলেন। তার একটি কথা স্পষ্ট-স্যার, আমার স্বামীকে নিরাপত্তা দিন! তাকে ছাড়াবার ব্যবস্থা করুন। আমি কথা দিচ্ছি, আমার স্বামী, ছেলেদের নিয়ে গ্রামে চলে যাব। আপনি কিছু একটা করুন। জেনারেল ওসমানি কর্নেল তাহেরকে ফোন করে মেজর জিয়াকে ছড়াবার ব্যবস্থা করতে বললেন। কর্নেল তাহের ছিলেন মেজর জিয়ার ঘনিষ্ট বন্ধু। শুধু বন্ধু নন তারা ছিলেন সহযোদ্ধা। কর্নেল তাহের গাড়ী নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে রওনা হলেন। তার গাড়ী ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে যেতেই সকল সৈনিক তার সাথে যুক্ত হল। সৈনিকরা ছিল কর্নেল তাহেরের পক্ষে। তারা কর্নেল তাহেরকে দেখে অতি উৎসাহী হয়ে পড়লো। কর্নেল তাহের সিপাহীদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত ভাষান দিতে গিয়ে বললেন- প্রিয় ভাইয়েরা আমার, আপনারা জানেন, দেশ আজ স্বৈরাচারীদের দখলে, অফিসাররা সৈনিকদের লাশের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। আমরা কখনো তা হতে দিব না। মেজর জিয়াকে অন্যায় ভাবে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে বেআইনি ভাবে রিটার্য়েড করানো হয়েছে। আমরা তাকে মুক্ত করে আমাদের অধিকার আদায় করবো। মেজর খালেদ মোশারফ দেশে ফের ভারতীয় সেনাদের প্রতিষ্ঠা করতে চায় আমরা কখনো তা হতে দিব না।
কর্নেল তাহেরের এ বক্তব্যে সৈনিকরা রোশে ফেটে পড়লেন। তারা আকাশ ফাঁটিয়ে স্লোগান দিতে লাগলেন-
"সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই!... সেপাই সেপাই ভাই ভাই
সুবেদাররের ওপরে অফিসার নাই"।
সেদিন কর্নেল তাহেরের নির্দেশে সৈনিকরা অফিসাদের খুন করতে লাগলেন। সেনাবাহীনীর শৃঙ্খলা সম্পূর্ন রুপে ভেঙে গেল। সিপাহীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য অফিসাররা পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। জাতি চুপচাপ দেখতে লাগলো এক নারকীয় অধ্যায়।

মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ (বীর উত্তম) অফিসার মেসে বসে আছেন। তার চোখে কালো চশমা, হাতে জলন্ত সিগারেট। মেজর খালেদকে খুব একটা বিচলিত মনে হচ্ছে না। এমন সময় মেজর হুদা এবং মেজর হায়দার এলেন। কিছু সময় মেজর খালেদের দিকে তাকিয়ে বললেন-স্যার কিছু একটা করুন। পরিস্থতি ভয়াবহ পর্যায়ে খারাপ। আপনি মেজর জিয়াকে ছেড়ে দেবার নির্দেশ দিন।
খালেদ মোশারফ সিগারেট টানতে টানতে বললেন-তোমরা কি জানো? বঙ্গবন্ধুর খুনি কে?
- জ্বি স্যার! জানি।
- তোমরা কি জানো দেশে কারা অশান্তি সৃষ্টি করছে?
- জ্বি স্যার! জানি।
- তাহলে তোমরা কেন আমাকে খুনিদের সামনে মাথা নত করতে বলছো? একজন সৈনিক কখনোই খুনিদের সামনে মাথানত করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক, ডালিম, ফারুক এবং রশিদকে আমি দেশ ছাড়া করেছি। এখন জিয়ার পালা। জিয়াকে আমি হাতির আট পা দেখাবো।
এমন সময় স্টেনগান হাতে নিয়ে দুজন ব্যক্তি অফিসার মেসে ঢুকলেন। তারা হলেন ক্যাপ্টেন আসাদ, ক্যাপ্টেন জলিল। তারা স্টেনগান খালেদ মোশারফের দিকে তাক করলেন। খালেদ মোশারফ ক্যাপ্টেনদের দিকে তাকিয়ে বললেন-তোরা আমাকে খুন করতে চাস? আমি যুদ্ধের মাঠে নিজের জীবনকে বাজি রেখে তোদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছি। তোরা কি ভুলে গেছিস? ক্যাপ্টেনরা একে অপরের মুখে দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলেন। তাদের মুখ শুকিয়ে গেল। হঠাৎ এমন সময় বাইরের থেকে কেউ একজন এসে বললেন-শ্যুট দেম! তার কমান্ড শুনে ক্যাপ্টন আসাদ এবং ক্যাপ্টন জলিল স্টেনগান চালাতে লাগলেন। সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন দেশের তিন সূর্য্য সন্তান। কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল চারিদিক।

মেজর খালেদ মোশারফের হত্যার মাধ্যমে দেশের জঘন্যতম সিপাহী বিদ্রোহ শেষ হলো। কর্নেল তাহের মেজর জিয়াকে মুক্ত করে আনলেন। মুক্ত হবার পর মেজর জিয়া কর্নেল তাহেরকে জঁড়িয়ে ধরলেন, আবেগের সাথে বললেন, আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু নও তুমি আমার আপন ভাই। তোমার এ উপকার আমি কখনো ভুলবো না।
ছাড়া পাবার পর মেজর জিয়া ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন। সে সময় সিপাহী বিদ্রোহীদের বিচারের দ্বায়ীত্ব নেন। মেজর জিয়া এই বিচারের নামে প্রথমেই তিনি কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করেন। নির্বাচিত সরকার উৎখাত, সেনাবাহিনীতে উস্কানিমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত কারার দায়ে কর্নেল তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্রে মেজর জিয়া সাক্ষর করেন। বিচারে ২১ জুলাই, ১৯৭৬ মেজর জিয়ার আদেশে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×