somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেয়ে না পাওয়া

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তামান্না হাটতে ক্যাম্পাসে বসে থাকা বন্ধুদের কাছে গিয়ে বসে পরলো। তামান্নাকে দেখে নাবিল বলল
-কিরে তোকে হতাশ মনে হচ্ছে।
-কিছুটা হতাশ। তুই কি শিহাবকে দেখেছিস?
-না দেখা হয় নি।
-দুইদিন ধরে ফোনে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন পাত্তাই নেই।
-ক্যম্পাসেও আসে না কয়েকদিন।

তামান্না বিষন্ন মনে বলল
-নাকি ওর মেসে খুঁজতে যাবো?
-কালকে ওর মেসে গিয়েছিলাম। ও নাকি মেস বদলে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে।
-তাহলে ওকে পাবো কোথায়?
-জানি না। ও মাঝেমাঝেই তো হাওয়া হয়ে যায়। এবারেও চলে আসবে হয়তো।

তামান্না বিষন্ন মনে একা একা বসে পরলো। নির্জনে বসে একা একা চিন্তা করছে। শিহাব মাঝেমাঝে সবাইকে না জানিয়ে হুটহাট কোথায় যেন চলে যায়। তবে তামান্নার সাথে সবসময় যোগাযোগ থাকে।

কয়েকমাস আগে শিহাবকে যখন সবাই খুঁজে পাচ্ছিল না, তখন সবাই সে হয়তো হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তামান্নার কাছে নিয়মিত ফোনে কথা বলত।

একদিন তামান্না বলল
-কিরে তুই মাঝেমাঝে হাওয়া হয়ে যাস। সবার সাথে যোগাযোগ না রেখে আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস কেন?
-সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে গেলে ঝামেলা। তাই শুধু তোর সাথে যোগাযোগ রাখি।
-শুধু আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস কেন?
-পরে একদিন জানতে পারবি।

তামান্না শিহাবের কথা ভেবে চুপচাপ পুকুরপাড়ে বেঞ্চিতে বসে আছে।



শিহাবকে চুপচাপ পুকুরপাড়ে বসে থাকতে দেখে তামান্ন বলল
-কিরে কিছু বলছিস না যে?
-তুই ই প্রথম বল। মনেহচ্ছে তুই আমাকে কিছু বলতে চাস।
-হ্যা ঠিক ধরেছিস। কালকে আমরা লংড্রাইভ এ যাব।
-তাতে এত হাসিখুশি থাকার কি আছে?
-রিফাত এর সাথে যাচ্ছি। খুশি হবো না?

শিহাব কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল
-তুই রিফাতের সাথে যাবি না।
-তুই কি বলছিস!! যাব না মানে?
-যাবি না মানে যাবি না।
-কেন?
-কারন রিফাত ছেলেটা ভাল না।
-রিফাতের সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বলবি না।
-বাজে কথা না সব সত্য। তোর সাথে লংড্রাইভ এ যাচ্ছে মানে এর পিছনে নিশ্চয় কোন কারন আছে।
-ঘুরতে যাওয়াই কারন।

শিহাব রেগে গিয়ে বলল
-এটাই শুধু কারন না। এর পিছনে কারন আছে। আর সেটা হতে পারে তোর সাথে শারিরিক সম্পর্ক গড়ার কারনেই।
-আমিতো বিয়ের আগে ওর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করব না।
-কিন্তু ও জোড় করে হলেও করেই ছাড়বে।
-রিফাত কখনও আমার সাথে কোন কিছুতে জোড় করবে না।
-রিফাতের সাথে তুই রিলেশন শেষ করে দে।

তামান্না উত্তেজিত হয়ে বলল
-কি বলছিস তুই!! মাথা ঠিক আছে?
-হ্যা।
-কেন এসব আজেবাজে কথা বলছিস?
-কারন ভালবাসি তোকে।
-ও। তাহলে এই কারনেই রিফাতের সম্পর্কে এতক্ষণ বানোয়াট বাজে কথা বলছিলি।
-একটা কথাও বানোয়াট না। সব সত্যি। রিফাতকে আমি ভালভাবেই চিনি।
-তুই ওর সাথে যাবি না। আর তুই ওর সাথে রিলেশন শেষ করে দিবি।

তামান্না উঠে শিহাবের গালে একটা থাপ্পড় মারলো। শিহাব কিছু বলার আগেই বলল
-তুই আর আমার সামনে আসবি না। তোকে বন্ধু হিসেবে ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে। নিজে প্রেম করার জন্য রিফাতের নামে এত বাজে কথা বললি!!
-এই শোন। একটা কথাও বলবি না। তুই আমার জীবনে না থাকলেই আমি খুশি হবো।

কিছু বলার আগেই তামান্না তার মত হেটে চলে গেল। শিহাব তাকিয়ে দেখেই গেল। কিছু করতে পারল না।



ফোন বাজতেই তামান্না ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এল। সেই পুকুরপাড়েই আজ বসে আছে। কিন্তু পাশে শিহাব নেই।

তামান্না কয়েকবার রিফাতের ফোন কেটে দেওয়ার পরে একবার রিসিভ করল। তামান্না কথা বলার আগেই রিফাত বলল
-শোন। তুমি ফোন কাটবে না। আমি তোমার সাথে দেখা করে সব বলতে চাই।
-আর কিছু বলতে হবে না।
-প্লিজ একবার বোঝার চেষ্টা কর। সেদিন আমার মাথা ঠিক ছিল না।
-মাথা ঠিক ছিল না বলে এতকিছু!! মাথা ঠিক না থাকলে কেউ কারো বিশ্বাস নিয়ে খেলে না।
-সরি।
-সরি বললেই সব মিটে যায়!! এতই যদি মেয়ে মানুষের শরিরের প্রতি তোমার লোভ। তাহলে টাকা দিয়ে মেয়ে ভাড়া করেই ভোগ করো। তুমি আমার বিশ্বাস নিয়ে কেন খেলবে।
-আমি মানছি সেদিন লংড্রাইভ এ গিয়ে যা করেছি, সেসব ভুল হয়ে গেছে। আমি তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

তামান্না ঝাঁঝাল কন্ঠে বলল
-কোনটার জন্য তোমাকে ক্ষমা করব। গাড়িতে কোকের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো, তারপরে অচেতন অবস্থায় আমার শরির নিয়ে খেলা, নিজের শরিরের চাহিদা মিটানো, কোনটার জন্য ক্ষমা করবো।
-চলো আমরা আগের মত হয়ে যাই।
-তা আর সম্ভব না। আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।



তামান্না কলেজ গেট দিয়ে ঢুকতেই থমকে দাঁড়াল। শিহাব দেখে তামান্না শিহাবের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল।

তামান্না শিহাবের পথ আটকে দাঁড়াল। তামান্না শিহাবের সামনে দাঁড়িয়ে বলল
-এতদিন কোথায় ছিলি তুই?
-কোথাও ছিলাম।
-আমি তোকে অনেক খুঁজেছি। ফোনে পাইনি, তোর মেসে পাইনি, কলেজেও পাই নি।
-তো!
-তো মানে!! আমি তোকে কিছু বলতে চাই।
-আমাকে ভালবাসিস এটাই বলতে চাস?
-হ্যা।

শিহাব হাটতে হাটতে বলল
-তাতে আমি কি করব?
-তুই ও তো আমাকে ভালবাসিস।
-ভালবাসতাম। কিন্তু এখন ভালবাসি না।
-কেন?
-কারন আমার প্রতি তোর বিশ্বাস নেই। অনেক আগে থেকে আমার সাথে তুই আছিস। আর রিফাতের সাথে তোর প্রেমের সম্পর্ক তো অল্পদিনের। এই অল্পদিনে তুই ওকে বিশ্বাস করে নিলি। কিন্তু আমি!!
-আমি তোকে বিশ্বাস করি এখন।
-বিশ্বাস!!যেটা আমি তোর প্রতি হারিয়ে ফেলেছি।
-কোথায় যাচ্ছিস?
-সেটা তোকে জানতে হবে না। ভাল থাকিস। আমার ভালবাসার আশা করিস না। আমার ভালবাসা হারিয়ে গিয়েছে।

তামান্না অনেক চেষ্টা করেও শিহাবকে আটকাতে পারল না। শিহাব চলে যাওয়াকেই শুধু দেখছে।

আজ শিহাবের জন্য তামান্নার দুই চোখ ভিজে যাচ্ছে। শিহাবকে তামান্না সত্যিই ভালবাসে। কিন্তু তামান্না শিহাবের আস্থা আর বিশ্বাস নষ্ট করার শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তামান্না ভালবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×