somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরান শিল্পীদের প্রতি এত বৈষম্য কেনো?

২১ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তুরস্কে ৪র্থ আন্তর্জাতিক কোরান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫৫ টি দেশের কোরান শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে হিফজ বিভাগে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশের হাফেজ আবদুল আখির।
গত ১০ জুন থেকে শুরু হওয়া ওই প্রতিযোগিতার শেষে ১৭ জুন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এর আগেও একাধিকবার বাংলাদেশের হাফেজরা সৌদি আরব, ইরান, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের কোরান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শীর্ষ সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা লাল সবুজের পতাকায় মোড়া কোরান তুলে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে।
বাংলাদেশেও কোরান প্রতিযোগিতা হয়। গত ক'বছর যাবত কোরানের আলো ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতি রমজানের প্রথম দিন থেকে 'পিএইচপি কোরানের আলো' শিরনামে শিশু কিশোর হাফেজদের মধ্যে কোরান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গোটা বাংলাদেশের কোরান শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি এনটিভিতে প্রচার করা হয়।
চ্যানেল নাইনে প্রচারিত হয় 'আলোকিত জ্ঞানী' শিরনামে একটি সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা। ইসলামি বিষয় ভিত্তিক এ প্রতিযোগিতাটাও খুবই মানসম্পন্ন। অথচ আমাদের দেশের মিডিয়ায় এগুলো নিয়ে কোনো প্রচার নেই, আলোচনা নেই। যেনো কেউ জানেই না।
বিশ্বের অনেক মুসলিম প্রধান দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ জাতীয় অনেক অনুষ্ঠান হয়। রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিরা ওইসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু আমাদের মুসলিম প্রধান দেশে এগুলো হয় না। বেসরকারী অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে কিছু কিছু হলেও আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো এসব খবর প্রকাশ করে না। রাষ্ট্রীয় কর্ণধরদের কোনো অংশগ্রহণ দেখা যায় না। স্পন্সর পাওয়া যায় না। কিন্তু কেনো? কেনো আমাদের মিডিয়ায় এসব খবর স্থান পায় না? কেনো এদের নিয়ে মিডিয়ায় কোনো মাতামাতি দেখা যায় না? কেনো আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্তারা এসব থেকে নিজেদের দুরে রাখেন? কেনো ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন না?
কেউ একজন বরফ ডিঙ্গিয়ে পাহাড়ে উঠলে যদি সংবাদ শিরনাম হতে পারে, সেরাকন্ঠরা যদি মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আইটেম হতে পারে, কোরান শিল্পীরা নয় কেনো? কোরানের প্রতিযোগিরা নয় কেনো? ইসলামি অনুষ্ঠান নয় কেনো?
যারা কোরানকে বুকে ধরে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ছিনিয়ে আনেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করেন তারা 'তারকা' নয় কেনো? তাদের প্রতি এত অবহেলা অবজ্ঞা কেনো? তারা কি বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ বিশ্ব দরবারে তুরে ধরে না? তারা কি মেধাবী নয়?
বাংলাদেশের যেসব প্রতেযোগিতায় মিডিয়াগুলো বিশেষ ট্রিটমেন্ট দেয় সে সব প্রতিযোগিতার ক'জন প্রতিযোগি এ পর্যন্ত ক'টা আন্তর্জাতিক পুরস্কার আনতে পেরেছে? তারা ক'টা বিশ্ব আয়োজনে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করেছে?
আমাদের দেশের মিডিয়া কর্তারা, শাসক গোষ্ঠিরা হয়তো ভাবেন- ওরা মোল্লা মৌলভি মানুষ, মিলাদ পড়াবে, ইমামতি করবে, আজান দিবে, ওদের এসব দরকার কি? ওরা কেনো মিডিয়ার আইটেম হবে? ওরা কেনো আধুনিক চাকচিক্যময় অনুষ্ঠান করবে? ওরা এসবের কি বোঝে? ওদের কাজ ঈদের নামাজে জানাযায় (!) ইমামতি করা আর সুর করে লম্বা মোনাজাত করা। অথবা ভাবেন- ওদের সামনে নিয়ে এলে দেশের ইজ্জত পাংচার হয়ে যাবে, ধর্মনীরপেক্ষতা মাটি হয়ে যাবে।
যেমন বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলো কোনো সামাজিক বিষয়ে, প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ে, শিক্ষার বিষয়ে, সাংবিধানিক বিষয়ে কথা বললে কোনো মিডিয়া কাভার করে না। হয় মিডিয়াগুলো নেতিবাচক কথা লেখে, না হয় 'ইসলামি শাসন কায়েম করলে দেশে শান্তি আসবে' এ জাতীয় চার লাইনে কাভারেজ শেষ করে। তারা মনে করে ধর্মের রাজনীতি ঠিক না। ধর্মের রাজনীতিতে বিষ। কিন্তু তারা হয়তো জানে না, ইসলাম কোনো তথাকথিত ধর্ম নয়, ইসলাম একটি আদর্শের নাম। বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনীরপেক্ষ আদর্শের কথা থাকলেও বড় জনগোষ্ঠির পছন্দের আদর্শ 'ইসলাম' নেই। কেউ সে কথা বলেও না।
এমন বৈষম্য মূলক আচারণ করে কি দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে? দেশের একটি শ্রেণীকে ইচ্ছা করে মূলধারা থেকে সরিয়ে রেখে কি দেশের সার্বিক সাফল্য অর্জন করা যাবে? শ্রেণী বৈষম্য দুর করা যাবে? যারা আন্তর্জাতিক কোরান প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ইসলামি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করে তাদের স্বীকৃতি না দিয়ে ইচ্ছাকৃত অবহেলা অবজ্ঞা কি তাদের উপর মানষিক নির্যাতন নয়? তাদেরকে আলাদা করে দেয়া নয়? হতাশার পথে ঠেলে দেয়া নয়? মানষিক চাপ, হতাশা, অবজ্ঞা থেকে যদি এরা কেউ বিপথগামী হয় সে দায়িত্ব কে নেবে? তখন তো চার দিকে হুক্কাহু শুরু হয়ে যাবে। সুস্থ সমাজ, শৃংক্ষল প্রজন্ম গঠন করার জন্য যে ধারাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এরা সেই ধারায় কাজ করছে, করতে চাইছে অথচ তাদের প্রতি কারো কোনো দায়িত্ব নেই, পৃষ্ঠপোষকতা নেই, উল্টো অবজ্ঞা অবহেলা আছে। এর ফল কি ভালো হয়? পৃথিবীর কোথাও হয়েছে?
আমাদের দেশে বর্তমান প্রজন্মের একজন কবি আছেন, দাড়ি টুপি ওয়ালা কবি, যাকে সবাই জাগ্রত কবি বলে চেনেন- কবি মুহিব খান। আমি মনে করি তিনি বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় নজরুল। অথচ তার নাম অনেকেই জানেন না। আমাদের মিডিয়াগুলো, রাষ্ট্র তাকে কবি বলেই স্বীকৃতি দেয় না। কারন কি? কারন হলো তিনি ইসলামি ধারায় কবিতা লেখেন। তিনি কাব্য আমপারা লিখেছেন। তার মুখে সুন্নতি দাড়ি আছে, মাথায় টুপি আছে। তিনি মাদরাসায় পড়েছেন। আরে বাবা 'হুজুর' মানুষ আবার কবি হয় নাকি? কবি হতে হলে বহুগামি হতে হয়। সরাবি হতে হয়। নারীর নগ্ন শরীর নিয়ে কবিতা লিখতে হয়। নইলে তুমি আবার কিসের কবি? কিসের তোমার দেশপ্রেম! কিসের ইন্চি ইন্চি মাটি.....!
বাংলাদেশে যারা ইসলামি ধারায় সঠিক কাজ করেন, যারা সত্যিকারের মেধাবী, যারা সুদ্ধ চিন্তা করেন তাদের দাবিয়ে রাখা হয়। যার ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই অমেধাবী, গবাজ, ফুলো মাথার ধূর্ত মানুষগুলো সামনে চলে আসে। তারা মাথায় টুপি পরে ইসলামের ধারক বাহক সাজে। যেমন বাংলাদেশের টেলিভিশন মিডিয়ার বিভিন্ন টকশোয় দেখি একজন সাপুড়িয়া নেতাকে টুপি পরিয়ে আনা হয় আলোচক হিসাবে। তাকে পরিচয় করানো হয় ইসলামি ঐক্য জোটের নেতা। তিনি ইসলামি বিষয়ে জাতীকে সবক দেন। অথচ 'ইসলামি ঐক্য জোট' মানে কি তাই তিনি জানেন না।
এসব করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয় না, হবে না। সকল প্রকারের রাষ্ট্রীয় এবং মিডিয়া বৈষম্য দুর করতে হবে। চালকের আসন থেকে মাতালদের সরিয়ে সুস্থ মানুষ বসাতে হবে, তবেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×