আগামী কাল রোববার এবং পরের দিন সোমবার (২০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০) ইতালিতে ভোট হবে। জাতীয় পর্যায়ে জনমত যাচাই ভোট এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রাদেশিক ও সিটি সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ চায় ইতালির সংসদ ছোট করতে। তাদের মতে বিশাল আকারের সংসদ চালাতে গিয়ে জনগণের দেয়া ট্যাক্স থেকে ব্যাপক অর্থ অপচয় হচ্ছে, যা কমিয়ে আনা দরকার। তারা পরিস্কার ভাবেই বলেছেন, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে যদি সংসদ ছোট করা যায় তবে করোনা সংকটের অর্থনৈতিক ধাক্কা অনেকাংশে সামাল দেয়া যাবে।
তারা জানিয়েছেন, জনগণ 'হ্যাঁ' ভোট দিলে শুধু সংসদ ছোট করেই খ্যান্ত হবেন না, এর পরে সাংসদদের বেতন ভাতাও কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। যাতে দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে রক্ষা করা যায়। জনগণের উপর থেকে করের চাপ কমানো যায়।
যারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন তারা জনগণকে 'না' ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, এর দারা ইতালিয় গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়বে। জনগণের প্রতিনিধিত্ব খর্ব হবে। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ইতালিয় সংসদ তার ঐতিহ্য হারাবে এবং সিন্ডিকেট করে জনগণের অর্থ তসরুপ করা হবে।
এদিকে একই সময়ে প্রাদেশিক সরকার এবং সিটি সরকার মিলিয়ে মোট ৭টি আঞ্চলিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সিটি নির্বাচনে ৪ জন বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
পৌর এবং ওয়ার্ড কমিশনার পদে ভেনিসে ৩ জন এবং তরিনো শহরে একজন বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ভেনিসে ৩ জনের মধ্যে ভিন্ন দুটি ওয়ার্ডের কমিশনার পদে দুজন লড়ছেন সরকারী দল পিডি বা ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে। অন্যজন পৌর কমিশনার পদে লড়ছেন খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে। অর্থাৎ তিনজনই বামজোটের মেয়র প্রার্থী সিনোর পাওলো বারেত্তার প্যানেলে ভোট করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে একজন বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত ইতালিয় নাগরিক ভেনিসে প্রথমবারের মতো পৌর কমিশনার পদে পিডি থেকে নির্বাচন করেন। এর আগে রোমসহ আরো একটি শহরের স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশউদ্ভুতদের অনুপ্রবেশ হয়।
ভেনিসের বর্তমান মেয়র সিনোর লুইজি ব্রুনারো ডানজোট থেকে এবারও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তিনি বলেছেন, শহরের ভবিষ্যৎ বিনির্মান চলছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে তাকে ভোট দিতে হবে।
অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে সরকারের শরিক দল পিডির জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। সেই হিসাবে বামজোটের প্রার্থী সিনোর পাওলো বারেত্তা খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন বলে ভোটের মাঠে আলোচিত হচ্ছে না। তবে ভিন্নপথে চিন্তার মানুষরা বলছেন, একই মানুষ বার বার নির্বাচিত হলে উন্নয়ন হয় না, নতুনত্ব আসে না। চিন্তার বিনিময় হয় না। এই বিবেচনায় মানুষ বামজোটের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।
ডানজোটের প্রার্থী এবং বর্তমান মেয়র সিনোর ব্রুনারোর পূণনির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনাকে বেশি গুরুত্বে নেয়ার অন্যতম কারন হলো- ভেনিস অঞ্চলের রাজনীতি ঐতিহাসিক ভাবে ডানপন্থী দলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এ অঞ্চলকে ডান রাজনীতির দূর্গ ভাবা হয়। তাছাড়া বর্তমান প্রাদেশিক সরকার প্রধান, ইতালির কড়া জাতীয়তাবাদী দল লেগা নর্দের প্রার্থী সিনোর লুকা যাইয়া কে এই অঞ্চলের সব থেকে জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী নেতা হিসাবে গোনা হয়। বিশেষ করে করোনা সংকটকালে তার ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে তিনি বার বার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। সুতরাং প্রাদেশিক সরকার প্রধান হিসাবে তার পূণনির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা মোটামুটি নিশ্চিত ধরে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে ডানজোট। যা মেয়র প্রার্থীকেও প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত ৩ প্রার্থীকে কেন্দ্র করে ভেনিসের আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশি কম্যুনিটি বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় মিডিয়ায় তাদের 'বাংলাদেশি প্রার্থী' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের কিছু কিছু প্রচারকার্য নিয়েও মিডিয়ায় বেশ সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত ভোটারদের নিয়ে মিটিং করার নামে ভোটারদের মধ্যে খাবার পরিবেশন করেছে, সোস্যাল মিডিয়ায় সেসব ছবি প্রচার করেছে, যা রাজনীতির বিরোধী পাড়ায় বেশ সমালোচিত হয়েছে।
অনেকে মন্তব্য করেছেন, তারা নির্বাচিত হতে পারলেও লন্ডনের বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত জনপ্রিয় সাবেক মেয়রের মতো এসব ছবি তাদের জন্যও কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া পিডির দুই প্রার্থী ভোটার ছাড়া কম্যুনিটির নেতৃত্বদেয়া বা প্রভাব বিস্তার করা সুশীল মানুষদের মূল্যায়ন না করায় কম্যুনিটিতে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। দলাদলি, ভাগাভাগি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা তাদের ভোটকে প্রভাবিত করত পারে বলে চিন্তাশীলরা মনে করছেন।
ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে বড় অংশ বৃটেনে পাড়ি জমিয়েছেন। সুতরাং তাদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা খানিকটা কঠিন। তাছাড়া ইতালিয়রা এখনো কোনো বংশউদ্ভুত মানুষকে নিজেদের নেতা হিসাবে মেনে নেয়ার মতো মানসিকতায় যেতে পারেনি। তবে ভেনিসের ডানপন্থী রাজনৈতিক পাড়ায় বাংলাদেশি কম্যুনিটির গুরুত্ব বেড়েছে। তারা সমিকরণ করছে ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশি বংশউদ্ভুত ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সাথে সাথে তারা আরো একটা বিষয়ে বোঝার চেষ্টা করছে- ইতালিতে বাংলাদেশিরা কেনো বামরাজনীতির দিকে ঝুকছে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে তো বামরাজনীতি একেবারেই প্রভাবশূণ্য। তবে ইতালিতে কেনো উল্টো ঘটছে? এসব বোঝার জন্য তারা কম্যুনিটিতে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশিদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২১