অনেকেই বলে থাকে যে, আল্লাহ যা কপালে রেখেছে তাই হবে। হ্যা, তা তো অবশ্যই হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত তাকদীর বা ভাগ্য কেউই পরিবর্তন করতে পারিনা। কিন্তু রাসূল (স.) এর সুন্নতের অনুসরণ করা ও তো অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং খোঁজ খবর নিয়েই বিয়ে করা জরুরি। কেননা আপনি শুধু আপনার স্ত্রীই বাছাই করছেন না, আপনি আপনার সন্তানের মা' ও বাছাই করছেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েদের ব্যপারে ৪ টি জিনিস দেখে বিয়ে করতে বলেছেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফের রেওয়াতে আসছেঃ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (স.) বলেছেন নারীদেরকে চারটি জিনিস দেখে বিয়ে করঃ
০১. ধন-সম্পদের জন্যঃ সম্পদের জন্য বিয়ে করা উচিত। যেন সম্পদ দ্বীনের কাজে খরচ করা যায়। তাই সম্পদ দেখে বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আর এটি খারাপ কোন মনোবাসনা ও নয়। হাদিসে মাল দেখে বিয়ে করার ব্যপারে ১ম এ আসছে। কেননা মেয়ের বাবার সম্পদ মানেই মেয়ের সম্পদ। কারণ বাবার সম্পত্তির ভাগ মেয়ে পাবে। আর এটি একটা ভালো সাপোর্ট হয় স্বামীর জন্য। এটি আমাদের সমাজে বা দেশে অনেকে খারাপ চোখে দেখলেও ইসলাম এটিকে খারাপ চোখে দেখেনি। আর এই বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে বিয়ে করার ব্যপারে গোনাহের কিছু নেই। এটি খারাপ কিছু না। এটি একটি ভালো দিক। আর ইসলাম ও এটিকে সমর্থন করে। সুতরাং এই বিষয় নিয়ে কেউ কাউকে কটুকথা বলা বা কুৎসা রটানো উচিত হবেনা।
০২. সৌন্দর্যের জন্যঃ সৌন্দর্য মণ্ডিত নারীদের বিয়ে করার ব্যপারে ইসলাম এই জন্য আগ্রহ প্রদান করে, যাতে অন্য নারীর দিকে নজর না যায়। আর হাদিসের ২য় অংশে ও আসছে সৌন্দর্য। এটি সবাই খোঁজে। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে সৌন্দর্য খোঁজে না। আর এতে দ্বিমত পোষণ ও করেনা। সবাই সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। রাসূল (স.) বলেছেন, তোমরা এমন নারী বিবাহ কর যার দিকে তাকানোর পরে অন্য নারীর দিকে চোক না যায় এবং তুমি তোমার চরিত্রের শতভাগ হেফাজত কর। সুতরাং নিজ চরিত্রের হেফাজতের স্বার্থে সুন্দরী নারী খুঁজে বিয়ে করাটাও একটা সুন্নত। এবং এটি সওয়াবের ও কাজ।
০৩. বংশ বনীয়াদের (স্টাটাস) জন্যঃ হাদিসে এই অংশের (স্টাটাস) ব্যাখ্যা বলতে অনেক কিছু বুঝায়। মেয়ের স্টাটাস, তার এডুকেশনাল স্টাটাস, তার পরিবারের স্টাটাস, তার বংশের স্টাটাস এই সকল কিছুই বুঝায়। সামাজিক ভাবে সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারীদের বিয়ে করার ব্যপারে ইসলাম অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। যে নারী তার পিতামাতার খোঁজ খবর রাখবে, নারী হবে ধৈর্যশীল, যে নারী তার পরিবারের কাছ থেকে ভালো শিক্ষা পেয়েছে এবং যে নারী তার ভবিষ্যতের প্রজম্মকেও ভালো ভাবে শিক্ষা দিক্ষায় এগিয়ে নিতে পারবে এবং যার মধ্যে দ্বীনি শিক্ষা রয়েছে সেসকল নারীকেই বিয়ে করা উচিত এবং যাদের সামাজিক মান মর্যাদা অনেক উপরে। সুতরাং মান মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিবাহ করার ক্ষেত্রে ও মানুষকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। আর এটি ও রাসূল (স.) এর সুন্নতেরই একটি অংশ।
০৪. দ্বীন দারিত্বের (ধার্মিকতা) জন্যঃ উপরিউক্ত ৩ টা বিষয় উপেক্ষা করেও সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রধান পয়েন্ট হলো নারীর দ্বীন-দারীত্ব। অর্থাৎ নারীর মধ্যে আল্লাহর প্রতি ভয় ও মহব্বত আছে কিনা। যদি কোন নারীর মাঝে শুধুমাত্র দ্বীনি বুঝ পাওয়া যায় তবে সেই নারীই বিয়ের জন্য সর্বোত্তম। তাতে যদি তার মধ্যে বাকি ৩ টা বিষয় না ও থাকে। অর্থাৎ সকল কিছু বাদ দিয়ে শুধু এই একটি বিষয়ের উপরে ফোকাস করেও বিয়ে করা যায়। সেক্ষেত্রে রাসূল (স.) বলেছেন আপনিই সবচেয়ে লাভবান হবেন। যে নারীর মধ্যে অধিক পরিমাণে ধার্মিকতা পাওয়া যাবে, আল্লাহ ভীতি, রাসূল পাক (স.) এর মোহাব্বত এবং ধর্মে কর্মে নামাজ কালাম, পর্দাশীলতা দ্বীন দারিত্বে, ভালো আচারনে, সততা ন্যায় নিষ্ঠায়, সোজা কথা পরিপূর্ণ ইসলামের উপরে সু-প্রতিষ্ঠিত নারী দেখে রাসূল (স.) বিয়ের ব্যপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
-----------------------------------------------------
★★ এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক কম বয়সে বিয়ে করার সুফল। কম বয়সে বিয়ে করার অনেক ধরনের সুফল ও উপকার আছে। তারমধ্য থেকে বিশেষ ৬ টা সুফল উল্লেখ করা হলোঃ
♦ যেনা ব্যবিচার থেকে ফিরে থাকা যায়, যুবক বয়সেই আল্লাহর খুব প্রিয় হওয়া যায়, শরীর সুস্থ ও রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়, আজেবাজে চিন্তা ও থাকেনা। যার ফলে আল্লাহর ইবাদতে স্বাদ ও পাওয়া যায়।
♦ সাধারণত বয়স ৩০ পার করে ফেললে নিজের মধ্যে একটা গাম্ভীর্যতা চলে আসে। কিন্তু অল্প বয়সে গাম্ভীর্যতা কম থাকে বলে আবেগ বেশি থাকে। তাই সম্পর্ক ও ভালো থাকে এবং খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হয়।
♦ দেরিতে বিয়ে হলে সন্তান নেয়ার ভবিষ্যৎ চিন্তা করায় সময় প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে করলে সঙ্গির সাথে কাটানোর মতো অনেক সময় পাওয়া যায়। যার ফলে সম্পর্ক ও মধুর থাকে।
♦ অল্প বয়সে বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে জীবনের সবটুকু ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না ভাগাভাগি করে নেয়া যায়। যার ফলে বন্ধত্ব থাকে অটুট।
♦আগের তুলনায় মানুষের গড় আয়ু অনেক কমতেছে আর দেরিতে বিয়ে করলে সন্তান মানুষ করার ব্যাপারটা ও পিছিয়ে যাবে। তাই অপ্ল বয়সে বিয়ে হলে সন্তানের জন্য ভালো পিতা হওয়ার জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে এবং সন্তানের ভবিষ্যত ও ভালো হবে।
♦সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ঃ আমরা বিভিন্ন কারনেই অনেকে সঠিক সময়ে বিয়ের ব্যপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। তাই আগের তুলনায় বর্তমান পৃথিবীতে ডিভোর্স এর সংখ্যা ও বেরে গেছে। আর অল্প বয়সে বিয়ে করে যদি অল্পতেই কোন কারণে ভেঙে যায়। তাহলে ২য় বার নতুন করে জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে।
*** এখন ভাবতে পারেন যে, সরকারের দেয়া আইনে মেয়ের বয়স ১৮ ও ছেলের বয়স ২১ বছর হওয়ার আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবেনা। কিন্তু ধর্মীয় ভাবে আল্লাহ প্রদত্ত নীতি রাসূল (স.) এর পদ্ধতিকে উপেক্ষা করে অন্য কারো হুকুম মানা যাবেনা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, "বান্দা যখন বিয়ে করলো নিশ্চয়ই সে তখন তার দ্বীনের অর্ধেককে পূর্ণ করল এবং বাকি অর্ধেক সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করবে।" (মেশকাত শরীফ) কিন্তু অনেকেই চিন্তা করি যে, নিজের পায়ে না দারিয়ে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে করা ঠিক হবেনা। কিন্তু রিযিকের মালিক তো সয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। এই চিন্তা করা যাবেনা যে চাকরি আমাকে খাওয়াবে, টাকা আমার জীবনকে পরিবর্তন করবে। বরং কোনরকম একটু আয়ের উৎস থাকলেই বিয়ে করে নেওয়া উচিত। রিযিকের মালিক যে সেই রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। তাই দুঃচিন্তা না করে আল্লাহর উপরে তাওয়াককুল করে এগিয়ে যাবেন। অবশেষে সকলের কাছে আমি অধমের জন্য দোয়া চেয়ে আজ এখানেই শেষ করলাম। ফি আমানিল্লাহ্।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৩৭