পেছনে ব্যস্ততম নগরীকে ফেলে সে এগুচ্ছিল একমুঠো সুখের খোঁজে । একটু শান্তির খোঁজে । এই নরক থেকে অনেক দুরে সে যাবে । যেন কেউ তাকে খুজেঁ না পায় । কোনদিনও যেন পরিচিত কারও সাথে তার দেখা না হয় । আজ তার কোন পিছুটান নেই । সে জীবনযুদ্ধে পরাজিত একজন সৈনিক । অথচ এ পরাজয় তো তার প্রাপ্য নয় । আজ সে অপমানিত । কিন্তু সে তো এত অপমানের যোগ্য না । কিন্তু কোন কিছুর উত্তর বা প্রতিবাদ সে করে নি । সত্যিই তো পরাজিত সে । কেউ তাকে বোঝেনি এটা তার ব্যর্থতা । হতাশ সে । সে ক্লান্ত । আজ তার কোন কিছুর প্রতি আর কোন অভিযোগ নেই । সে হেরে গেছে । কিন্তু সত্যিই কি সে হেরে গেছে ?? কে জানে ? সে আজ জানে না হার কাকে বলে ? সে জানে না জয় কাকে বলে । সে ভুলে গেছে . . . সব কিছু । সে আর এই নরকে একটা মিনিটও থাকবে না । সে এগিয়ে যাচ্ছিল । হঠাত্ পেছন থেকে কারও ডাক শুনল । ফিরে তাকাবে না সে । সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । কিন্তু সে তার প্রতিজ্ঞা ভেঙে ঘুরে তাকাল । সে চায়না কিছু । সে চলে যাবেই । কিন্তু এ ডাক যে তাকে থামাল । সবটুকু শক্তি দিয়েও সে নড়তে পারল না । কিন্তু কে তাকে ডাকল ? কেন ডাকল ? জানে না সে । জানতে চায় না । আজ সে কিছুই চায় না । শুধু চায় একটু মুক্তি । সফল হল সে । সে কখোনোই হার মানবে না । সে আবার হাঁটতে শুরু করল । এমনি সময় কেউ যেন তার কানে কানে প্রশ্ন করল " কোথায় যাচ্ছ তুমি ? " সে নির্বাক । কিছুক্ষন পর উত্তর দিল " সুখের খোঁজে , সামান্য শান্তির খোঁজে । " আবার হাঁটতে শুরু করল সে . . . . হ্যাঁ অনেক দুরে আবছা সুখ সে দেখতে পাচ্ছে . . . সে এগুতে থাকল . . . . একটি কন্ঠস্বর তাকে বলল " বাস্তবতাকে অস্বীকার করে , নিজেকে অস্বীকার করে কখোনোই তুমি সুখ পাবে না । " সে হাসলো । যেন কোন ছোট্ট বাচ্চা অবুঝের মত তাকে কিছু বলছে । ভাবল , ওই তো সুখ । আমি পেয়েছি তাকে ।
অনেক বছর পর . . . .
সে দেখতে পেল সুখ আজও তত দুরেই আছে সেদিন যত দুরে ছিল । সে অনেকদুর চলে এসেছে । আর যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই । বৃদ্ধ , জীর্ন শরীর নিয়ে সে বসে পড়ল । নিজেকে প্রশ্ন করল " জীবনের মানে কি ? সুখ কোথায় ? " তার প্রশ্ন প্রতিধ্বনি হয়ে আবার ফিরে এল । কোন উত্তর সে পেল না । হঠাত্ অচেনা সেই কন্ঠস্বর তাকে বলল , " সুখ ! পেলে না তো ! এভাবে সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না । নিজেকে শোধরাও । সুখ পাবে । "
সত্যিই তো ! সে চেষ্টা করল নিজেকে শোধরানোর । কিন্তু পারল কি ?
আরও কিছুদিন পর . . . .
রাস্তার মাঝখানে , যেখানে থেকে তার প্রাপ্ত সুখ অনেক আবছা দেখা যাচ্ছিল , সেখানে তার মৃতদেহ পড়ে থাকল । মুখের কোণে একটু হাসি । যেন ঘুমন্ত এক মানুষ খুব সুন্দর কোন স্বপ্ন দেখছে । কে জানে ? হয়ত মৃত্যুর এক মূহুর্ত আগে সে পেয়েছিল --
সুখের খোঁজ । তার সারাজীবনের কাঙ্খিত সুখের খোঁজ !
পল্লব সাহা