somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বিড়াল এবং...

২২ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্মের কথা আমার মনে নেই। তবে দুই তিন মাস বয়স থেকে সব কথা আমি মনে করতে পারি। আমার বাবা কে আমি জানি না। তবে মায়ের কথা আমার বেশ ভালই মনে আছে। আমি যখন প্রথম বুঝতে শিখেছি তখন মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। আমার বয়স তখন মাত্র তিন মাস। আমাদের কলোনীর সবার মধ্যে আমিই প্রথম স্কুলে যাই। যখন আমার বয়সী বাচ্চারা আরামে খেলাধুলা করে তখন আমি আমার এই ক্ষুদ্র মাথায় অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান দিয়ে পূর্ণ করেছি। আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন আমার প্রথম ক্লাশ এ আমাদেরকে পড়িয়েছে মহাজগতের সবচাইতে বুদ্ধিমান প্রাণীর গল্প। তাদের নাম মানুষ। বৈজ্ঞানিক নাম Homo sapiens। যদিও আমি বিশ্বাস করি না এরা সবচাইতে বুদ্ধিমান প্রাণী। আর সেইজন্যেই আমার এই গল্প লিখতে বসা। এরা দেখতে কিছুটা বানরের মত। এরা সামাজিকভাবে বসবাস করে। অবশ্য আমি এই কথা বিশ্বাস করি না। কারণটা আপনাদের একটু বুঝিয়ে বলি। পাঁচ মাস বয়সে আমি যে বাসায় থাকতাম সেই বাসাটা ছিল তিনতলা। সেখানে মাত্র দশজন মানুষ থাকত। তারা যে কি পরিমাণ খাবার নষ্ট করত আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না। অবশ্য খাবার নষ্ট করত জন্যেই আমি আরমে এই বাড়িতে থাকতে পেরেছি। আপনি আবার ভেবে বসবেন না আমি শুধু ভাল খাবার এর জন্যই ওই বাড়িতে ছিলাম। আমি বিড়াল সমাজে খুব বিখ্যাত একজন। কারণটা বুঝিয়ে বলি। বিড়ালদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক বিড়ালকেই লেখাপড়া করার সুযোগ দেয়া হয়। আমি তাদের মাঝে একজন। কোন প্রসঙ্গ থেকে কোন প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। আপনারা আবার রাগ করবেন না। আমি এখনও ছোট আছি তো তাই ঠিক সাজিয়ে লিখতে পারছি না। ও যেটা বলছিলাম। আমি ওই বাসায় ছিলাম কারণ ওই বাসাটা আামাকে স্কুল থেকে ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। মানুষের জীবনযাপন। তো সারাদিন তো আর বাসায় বসে থাকা যায় না। আমি মাঝে মাঝে ঘুরে বেড়াতাম। তো একদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাচ্ছিল। অবশ্য রাত হয়ে না গেলে আমি একটা ঘটনা জানতেই পারতাম না। যদিও আমি যেই বাসায় থাকতাম সেই এত্ত বড় বাসায় মাত্র দশ জন থাকে ঠিক তেমনি শত শত মানুষের রাতে ঘুমানোর জায়গা নেই। আমি একটু ভ্রমনপ্রিয়। তাই সেদিন ঘুরতে একটু স্টেডিয়াম এ গেছিলাম। সেখানে কত দোকান। স্টেডিয়ামটা গুলিস্তানের কাছাকছি। গুলিস্তান যায়গাটা বড় সুন্দর। কত্ত কিছু আছে দেখার মত। সেদিন রাতে আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম রাতে স্টেডিয়ামে অনেক মানুষ ঘুমায়। যাদের আসলে থাকার যায়গা নেই। আমি সেদিক দিয়ে হাঁটছিলাম হঠাৎ শুনতে পেলাম একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে কাঁদছে। তার বাবা মায়ের কথায় ভাসা ভাসা ভাবে বুঝতে পারলাম মেয়েটি সারাদিনে কিছুই খায় নি। আমি মনে মনে ভাবলাম যে কিছু কিনে এনে খাইয়ে দিলেই হয়। কিন্তু বাবা মায়ের কথাই যেটা বুঝতে পারলাম সেটা হল তাদের খাবার কেনার মত টাকা নেই। প্রথমবারের মত আমার এতদিনের শেখা পড়াশুনা ব্যর্থ বলে মনে হল। আমাদের শুরু থেকে এই দুই মাস শুধু একটা জিনিসই পড়িয়েছে। সেটা হল মানুষ। আমাদের শেখানো হয়েছে মানুষ অনেক বুদ্ধিমান। মানুষ এই , মানুষ ওই। আমি আবিস্কার করলাম সব কথা সত্য নয়। একটা বড় বাসায় মাত্র ১০ জন থাকবে আর শত শত মানুষ রাস্তায় ঘুমাবে এই সমাজকে যাই বলা যাক না কেন সামাজিক বলা যায় না। আশা করি আপনি এখন বুঝতে পেরেছেন মানুষ সামাজিক জীব এই কথাটা আমি কেন বিশ্বাস করি না। এই যে আপনি যত সহজে বুঝলেন সবাইকে আমি এত সহজে বুঝাতে পারি নি। যেমন আমাদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট এর পরে যে পরীক্ষা হল সেটাতে আমি কত পেয়েছি জানেন? শূন্য । মাত্র একটি প্রশ্ন ছিল “মানুষ সামাজিক জীব ব্যখ্যা কর।“ মানুষ তো সামাজিক জীবই না আমি সেটা ব্যখ্যা করব কি করে। তো আমি ভাবলাম এটা একটা tricky question । তাই আমি ঝামেলায় না গিয়ে মানুষ কেন অসামাজিক জীব সেটা ব্যখ্যা করলাম। আপনি যেটা এত সহজে বুঝতে পারলেন সেটা আমি আমার কোন শিক্ষককে বুঝাতে পারলাম না। তারা আমাকে শূন্য তো দিলই। আবার এত্তগুলা বিড়ালের সামনে অপমান করল। একজন শিক্ষক বলল “আমি আমার তিন বছরের শিক্ষকতা জীবনে এমন গাধা আর দেখি নাই” । গাধা কেমনে অপমানসূচক গালি হয় আমি এখনও বুঝতে পারি নাই। আমি একদিন চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গেছিলাম। সেদিন একটা গাধার সাথে কথা বলে আমার গাধাকে বেশ বুদ্ধিমান বলেই মনে হয়েছে। চিড়িয়াখানায় অনেক প্রাণী আছে। কিন্তু বিড়াল নেই বলে প্রথমে আমার একটু মন খারাপ হলেও যখন দেখেছি মানুষও নাই তখন একটু হলেও মনের দুঃখ দুর হয়েছে। তো আমাকে শুধু গাধা বলেই তারা খান্ত হয় নি। তারা বলেছে আমাকে স্কুলে ভর্তি করানোই ভুল হয়েছে। আমি মনের দুঃখে পড়াশুনা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। শুধু মায়ের জন্য পারলাম না। তার অনেক পড়ার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সে স্কুলে ভর্তি হতে পারে নাই। তাই সে চায় আমি পড়াশুনা করি। বিড়ালের মত বিড়াল হই। আমি আরেকটা জিনিস লক্ষ করেছি, মানুষের ক্ষমতা খুব সীমাবদ্ধ। তাদের মস্তিস্কের সাইজ অনেক বড় হলেও তারা অনেক কিছুতেই ব্যর্থ। যেমন আমরা মানুষের কথা বুঝতে পারলেও তারা আমাদের কথা বুঝতে পারে না। এমনকি বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, গাধা কারও কথাই তারা বুঝতে পারে না। মানুষের স্কুলও বড় রসকসহীন বলেই আমার মনে হয়েছে। অবশ্য আমি স্কুল খুব বেশী দেখতে পারি নাই। আমাদের পড়ার সবচেয়ে খারাপ দিকটিও হয়েছে মানুষের জন্য। তারা অনেক ধরনের ভাষা ব্যবহার করে। সেগুলো আমাদের শিখতেও অনেক বেশী সময় লাগছে। আমি মাত্র কয়েকটা ভাষা পড়তে পারি। তাদের সব ভাষাই সহজ। কিন্তু বর্ণমালাগুলো একটু কঠিন। আমি যেগুলো পড়তে পারি, তার মধ্যে একটি বাংলা। বাংলা ভাষার বইগুলো সুন্দর। লেখকরা গড়পরতা মানুষদের চাইতে একটু বুদ্ধিমান। যেমন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে বিড়ালরাও মানুষের কথা বুঝতে পারে। তিনি আমাদের নিয়ে একটি বইও লিখেছেন। নাম পুফি । আমি অনেক চেষ্টা করে প্রতি সোমবার সাহিত্যসন্ধা চালু করেছি। সেখানে প্রতি সপ্তাহে আমি বিভিন্ন লেখকদের বিভিন্ন বই পড়ে শুনাই। হুমায়ূন আহমেদের একটা চরিত্র হিমু আমাদের সবারই প্রিয়। আমাদের বিড়ালদের অনেকেই হিমু হতে চায়। কিন্তু সমস্যা হল আমরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ব কিভাবে ঠিক বুঝতে পারছি না। তারপর রবীন্দ্রনাথের কবিতা আমার অনেক ভাল লাগে। যাই হোক এরা তো exceptional । আর exceptional can’t be an example । বাকিরা বোকাই। আর একদিক থেকে চালাক হলেই তো আর সবদিক থেকে চালাক হওয়া যায় না। যেমন প্রতেকটা প্রজাতিই চেষ্টা করবে নিজেকে রক্ষা করতে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম । কিন্তু সবচেয়ে বুদ্ধিমান বলে খ্যাত মানুষ এটা বোঝে না। তাদের সব আছে তারপরও তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে। হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। লেখকরা লেখালেখি করে। কিন্তু সেগুলো কেউ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলে মনে হয় না। আরেকটা মজার বিষয় আছে মানুষের মাঝে। তারা জ্ঞানী মানুষদের সবকিছুই ব্যবহার করে। কিন্তু তাদের কাছে সবচেয়ে দাম বেশী টাকার। টাকা মানে হল কাগজ। ঠিক কাগজও না। মানে ওই আরকি। সেটার জন্য তাদের মধ্যে যে ব্যস্ততা সেটা হাস্যকর। টাকার জন্য অনেক মানুষ খুন পর্যন্ত করে ফেলে। যে প্রজাতি নিজেদের রক্ষার চিন্তা না করে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে ধ্বংস ডেকে আনে তারা কেমনে বুদ্ধিমান হয় আমি ঠিক বুঝতে পারি না। ঠিক এই জন্যেই আমি বিশ্বাস করতে পারি না মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। বিরাট ভুল। যাই হোক আমি এখন বিভিন্ন মহাপুরুষদের জীবনী পড়ছি। তাদেরকে যঠেষ্ট বুদ্ধিমান বলেই মনে হচ্ছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত মানুষ ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি কি না.....
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×