১০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় আইফোন ৫ এস ও ৫সি মডেলের দুটি আইফোনের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। আইফোনের ৫এস মডেলে নতুন ফিচার হিসেবে যুক্ত হয়েছে ফিঙ্গার প্রিন্ট সেনসর আর ৫সি-এর পেছনে প্লাস্টিকের আবরণ। নতুন মডেলের স্মার্টফোনে নতুন কোনো চমক নেই।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্টিভ জবস নেই, অ্যাপলের সেই সুদিনও নেই। হারিয়ে গেছে অ্যাপলের সেই উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এখন আর অ্যাপলে নেই সেই বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভাবন আর আগের প্রাণশক্তি। এক সময়ের উদ্ভাবনী পণ্য নির্মাতা অ্যাপল আর এখনকার অ্যাপলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য।
অ্যাপল এখন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রযুক্তির বাজারে সংগ্রাম করছে। অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর থেকে কিছুটা হলেও জৌলুস হারিয়েছে একসময়ের উদ্ভাবনী প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর থেকে পরিচিত অ্যাপল অপরিচিত হতে শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, অ্যাপল আর সেই পরিচিত অ্যাপল নেই; অনিশ্চিত অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে অ্যাপল। একসময়ে স্মার্টফোন বাজারে প্রতিনিধিত্ব করা অ্যাপলকে ধরে ফেলেছে বাজারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজার বিশ্লেষকেদের মতে, অ্যাপলের বাজারে আনা পণ্যগুলো এখন আর ‘বৈপ্লবিক’ নয় বরং তা গতানুগতিক। উদ্ভাবনী পণ্য হিসেবে অ্যাপলের কাছে টেলিভিশন ও স্মার্ট ওয়াচে হয়তো চমক দেখানোর সুযোগ আছে তবে, প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয় পণ্য আইফোন ও আইপ্যাডের জৌলুস হারিয়ে গেছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, অ্যাপলের সেই সুদিন আগেই ফুরিয়েছে। গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তার কাছে আইফোন ও আইপ্যাড মার খেয়ে গেছে। গত বছর থেকে অ্যাপলের শেয়ার ৩০ শতাংশ দরপতন ঘটার একটাই কারণ খুঁজে পেয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। কারণটি হচ্ছে, অ্যাপলের ঝুলি থেকে সব উদ্ভাবনী পণ্য বেরিয়ে পড়েছে। এখন শুধু ফাঁকা ঝুলি!
অ্যাপলের নতুন পণ্য দিয়ে কী আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে আসা সম্ভব হবে? এ প্রশ্নটিই আবারও ঘুরে ফিরে আসছে।
সমালোচকেরা অ্যাপলের সমালোচনায় বলেন, প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট সুনাম থাকলেও সম্পূর্ণ নতুন বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রে পিছিয়ে থেকেছে। পিসি, এমপি থ্রি, স্মার্টফোন এমনকি ট্যাবলেট বাজারে আনার ক্ষেত্রেও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে বরাবর পিছিয়ে থেকেছে অ্যাপল। বাজারে অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন নতুন কোনো পণ্য এনে নিজেদের ভরাডুবি ঘটিয়েছে তখনই সেই সুযোগ নিয়েছে অ্যাপল। নতুন পণ্য নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বাজার তৈরি করে ফেলেছে বা আলোচনায় এসেছে অ্যাপল তখন সেই ধরনের নিখুঁত পণ্য তৈরির চেষ্টা করেছে এবং চমক রাখার চেষ্টা করেছে সব সময়।
অ্যাপলের জন্য এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা তাদের অপরীক্ষিত একটি বাজারে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সাল হবে ফ্যাবলেট আর পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের। আগামী বছর অ্যাপল স্মার্ট ওয়াচ বাজারে আনবে। নতুন পণ্যের ক্ষেত্রে অপরীক্ষিত বাজারে অ্যাপলের জন্য ঝুঁকি থাকছে।