-স্নিফ শব্দটির ভালো বাংলা প্রতিশব্দ হয় না।
-বলেছে তোমাকে? ডিকশনারি ঘেঁটে দেখো, সশব্দে শ্বাস নেয়া অথবা কোন কিছু শোঁকা, আবার নাক সিঁটকানো অর্থেও প্রয়োগ হতে পারে।
-ঠিক আছে মানলাম। এখন আমাকে স্নিফ করার জন্যে কিছু দাও। নাক দিয়ে টেনে তলপেটে নিয়ে যাবো তীব্র নিঃশ্বাসে।
-এ আবার কেমনধারা কথা? আমি ওসব কোথায় পাবো? আমি কী ড্রাগ ডিলার? শুনেছি কোকেইন স্নিফ করে ওভাবে, অনেকে নেইলপলিশ রিমুভারও...
-হাহাহা! দেখো তুমিও কিন্তু স্নিফের কোন উপযুক্ত সমার্থক শব্দ খুঁজে পাও নি।
-তো কী হয়েছে? পেলেই বা কী না পেলেই বা কী!
-কিন্তু আমাকে স্নিফ করতে হবে। গভীরভাবে। তোমার আভিধানিক ভাষায়ই বলি, সশব্দে শ্বাস নিয়ে শরীরে টেনে নেব কূহকধোঁয়া, সাইকোডেলিক গন্ধ।
-আচ্ছা! কোথায় পাচ্ছো ওসব?
-তোমাতে!
-ওহ হ্যাঁ, আমি নেইলপলিশ দিয়েছি নখে কিছুক্ষণ আগে। এখনও কাঁচাই আছে। ওটার গন্ধ নিতে পারো।
সন্দিগ্ধ চোখে সন্ধানপ্রাপ্ত বস্তুর দিকে তাকিয়ে আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিই।
-ওতে চলবে না। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, শুধুমাত্র ওতে চলবে না। প্রসাধন আর জৈবিক সংমিশ্রণের ভাঁপটা খারাপ না। তুমি জানো আমি সাবস্ট্যান্স এ্যাবিউজার না। নেইলপলিশ রিমুভারের বোতল হাতে নিয়ে শুঁকে অসীম উচ্চতায় ওঠার কোন সাধ নেই আমার। তোমার দেহকোণে যা আছে, যা যা আছে সবকিছু স্নিফ করতে চাই আমি। এতে নেইলপলিশ, স্নো, রুপটান, ক্রিম যুক্ত হলে মন্দ হয় না। তবে সেসব অত্যাবশ্যকীয় না।
-ওহ জান! তুমি আমাকে এত্ত ভালোবাসো! আমি না কিচ্ছু বুঝি নি এতক্ষণ! কাছে আসো, আমাকে নাও! আমিও তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি...
সে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করে। স্বাদহীন, গন্ধহীন চুম্বন। যে চুম্বনটা হতে পারতো ভালোবাসার আত্তীকরণের ঊর্ধে উঠে পারপ্রেমাণবিক বিস্ফোরণ, তা পড়ে থাকলো বাসী লিপস্যান্ডউইচের মত। আমি চুম্বনপর্ব শেষে দু টুকরো ঠোঁট হাতে নিয়ে পকেটে ভরি। একাকী সাফোকেটেড রাত্রিগুলোতে কাজে লাগতে পারে। ঠিকমত পরিচর্যা করলে ভালো স্নিফিং এলিমেন্ট হয়ে উঠবে হয়তো।
আমার কাছে তার এরকম অনেক দেহ খন্ডাংশ জমা আছে। চৌর্যবৃত্তিতে আমার পারদর্শীতা ছিলো না কখনই, আমি কখনও চুরি করতে চাইও নি। তীব্র চুম্বন, আলিঙ্গন অথবা সঙ্গমের পরে যখন সে আমাকে জড়িয়ে ধরে তৃপ্তিতে চোখ বোঁজে, আমার শরীরের ভেতর শরীর তখন আরও কামনার্ত হয়, মনের ভেতর মন বেদনার্ত হয় কিছু একটা না পাওয়ার হতাশায়। শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না, ভালো লাগে না তার উষ্ণ এবং আশ্রয়াকূল আলিঙ্গন। বিবশ অবস্থায় পড়ে থাকি, খুঁজতে থাকি, এবং পেয়েও যাই! স্নো, ক্রিম, নেইলপলিশ থেকে বিযুক্ত হয়ে তার নখ, চোখ, চুল উড়তে থাকে, উড়তে থাকে আমার আশেপাশেই, হাতছোঁয়া দূরত্বে। স্রেফ ছোঁ মেরে কেড়ে নেয়া! কখনও কখনও সে ঘুমচোখে, অথবা তন্দ্রায় অথবা জাগরণে তাকায়, আমার নড়াচড়াতে বিরক্ত হয়ে হয়তো! আহ... কী এসে যায় তাতে! তখন আমি অলীক উড্ডয়নে বিভোর! উড়তে থাকি, উড়তে থাকি আর গন্ধ নেই, জমা করি তাদের আমার স্নিফ একাউন্টে। মাদকের চেয়েও স্নায়ুবিনাশী, মাফিয়া প্রভাবিত রাজত্বের চেয়েও ক্ষমতাগ্রাসী, নিজেকে ক্ষয়ে যেতে দিই আমি সাচ্ছ্যন্দে, জানি, পরবর্তী দিনটা ক্লান্তিকর হবে, তবে এটা জানি, কেউ আমাকে বিকারগ্রস্থ ভাববে না, কারণ, আমার আদুরে বেড়ালের( তাকে এই নামেই ডাকি) গ্রহাবর্তে কোটি বছর ঘুর্নায়মান থাকলেও কেউ বুঝতে পারবে না ভালোবাসার চর্বিস্তর ঘুঁচে দেয়া ভালোবাসা, অনুভূতির ক্লেদাক্ত মেদ কেটে দেয়া অনুভূতি, যেখানে কারো প্রবেশাধিকার নেই, চশমা বাগিয়ে তেড়ে আসা বিশিষ্ট মনস্তত্ববিদ ফ্রয়েড, পাভলভ অথবা প্লেটোনিক ভালোবাসার তাৎপর্যপূর্ণ মতবাদগুলোকে বাসের গ্লাসে ছুঁড়ে দেয়া হকারদের আয়ুর্বেদিক অভাবনীয় যৌন মিমাংসার সমার্থক মনে হয়।
আমি যা দেখেছি তুমি তা দেখেছো কী? অথবা, আভিধানিক অর্থে বলতে গেলে, "আমি যা শ্বাসের সাথে জোরে টেনেছি, অথবা শুঁকেছি (আমার সাফ কথা, স্নিফিং!) তুমি তার স্নিফোচ্ছাশ্বে উড়ে যাও নি কী? যদি তাই হয়, তবে জুড়ে বসেছো কেন? তোমার জোড়াকে খুঁজে নিয়ে দিনলিপি, কবিতা, অথবা গল্প লেখোগে যাও!
যেসব দিন, যেসব দিনে সে পাশে থাকে না, তার বিড়ালকন্ঠী (তাকে আমি আদুরে বিড়াল বলেই ডাকি) "গুডনাইট" শোনা হয় না, সেসব দিনে আমার নিঃসঙ্গ লাগে, কিন্তু কখনই দমবন্ধ না। সাফোকেটেড লাগে না। দমবন্ধ শব্দটি সাফোকেটেড এর একটা সুন্দর সুগারকোটেড অনুবাদ হতে পারে, কিন্তু স্নিফিং...?
আমার জমাকৃত চুল, চুম্বন, গালের খন্ডাবশেষ লতিয়ে বেড়ে উঠে বিষ্ফোরনের অপেক্ষায় থাকে। আমার আছে ডাইনামাইট সুইচ, ক্লিক করলেই তারা সদর্পে গর্জে ওঠে। সেই ভস্মগন্ধী অশরীরী ভালোবাসার মধ্যে আমি আশরীর ডুবে যাই, কামমানবিক সমস্বত্ব দ্রবণে ভ্রমণ করি অকৃপন, দ্রবীভূত হই। অপূর্ব সুবাসে ভরে যায় চারিদিক, স্নিফিং উপাদানগুলোকে তার ত্বককাগজে রেখে নাক গুঁজে শ্বাসশক্তিকে সাবাশি দিতে হয় না। আমার লাস্ট স্টেশন অফ ড্রাগে যাওয়া বাকি থাকে শুধু। এটুকু আমি ইচ্ছে করেই বাকি রেখে দিই। লাস্ট স্টেশন অফ ড্রাগ মানে কিন্তু এলএসডি না! আমি কোন সাবস্ট্যান্স এ্যাবিউজার না আগেই বলেছি! অবশ্য আপনারা আমাকে তা বলতে পারেন, ইন আ বায়োলজ্যিকাল ওয়ে, নট ইন আ কেমিল্যাল ওয়ে!
লেট মি স্নিফ নাউ!
-ছাড়ো আমাকে! আমার অফিসের বাস এলো বলে!
এখন! আই ওয়াজ নট হোল্ডিং হার! হাউ কুড শি নোউ?
-ছাড়ো না...আর কত ডাকাতিপনা করবে!
তবে কি সেও আমাকে স্নিফ করে তামাকের মত? আমি স্বপ্নাদিষ্ট বিহবলবস্থা থেকে কৌশলে সরে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিয়ে বলি,
-ছাড়লাম, এখন যাও!
-সত্যি যাবো?
তার চতুর প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে অনুধাবন হয় যে সে এতক্ষণকার সব কিছুই জানে, তবে আমার অভিনয় করার কোন অভিপ্রায় হয় না।
-হ্যাঁ, যাও।
-তুমি কিন্তু আমাকে এতক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিলে না! কেন অভিনয় করছ আমার সাথে? আমাকে কী ভাবো? জড়জৈবযৌনউদ্দীপনা?
প্রশ্নের জবাব দেয়ার ইচ্ছে আমার ছিলো না, তার অনুভূতিকে হীনহিমমেয়েলিপনা ভাবার ভুল আমাকে তাড়িত করছিলো বারেবার। এই যাত্রা আমাকে বাঁচিয়ে দেয় সেলফোনের এ্যলার্ম এবং বাসের হর্ন। অবশ্য বাঁচিয়ে দেয়া বলাটা ভুল নিশ্চিত, কর্মক্লান্ত দিনের শেষে আবার যখন আমরা মিলিত হব, তখন পরস্পরের স্নিফানুভূতি বিনিময়-সেটা রাগত অথবা স্বাগত যাই হোক না কেন, আমাদের মধ্যেই তো থাকবে!
এবং এখন আমি জানি আমি একা না। আমাদের বয়স ত্রিশনূর্ধ, সুতরাং, আকস্মিক দুর্ঘটনা অথবা স্বাস্থ্য অবনতির কথা মাথায় রেখেও দুজনেই একে অপরের ইমিডিয়েট বস, সিইও, অথবা প্রেসিডেন্টকে বলতে পারি,
-ফাক অফ!
এই রূঢ় শব্দবন্ধের জবাবে তারা কী বলবে তাতে কিছুই এসে যায় না, আমরা আবারও স্পষ্ট উচ্চারণে স্বদেশী ভাষায় বলতে পারি... নাহ, কোন সুন্দর প্রতিশব্দ নেই, সুতরাঙ, স্যরি টু সে উই হ্যাভ টু টেল এগেইন, টু ইউ, টু ইউ অল হু হ্যাভ ইন্ট্যার্যাপ্টেড আস,
-ফাক অফ!
এখন বরঙ স্নিফ, অথবা তার থেকে উদ্ভুত সকল শব্দসমষ্টির সরলীকৃত অনুবাদে মন দেয়া যেতে পারে।
সে হাসছে। আমার আদুরে বেড়াল হাসছে! কর্মক্লান্ত দিনের পরেও তার হাসি এতটুকু অমলিন নয়।
-তোমার গেঞ্জিটা দাওতো, ধুঁয়ে দেবো।
আমি জানি, ঘর্মাক্ততা তার বিরক্তি অথবা কর্তব্যপরায়ণতার কারণ নয়। সেও বুঝতে পারে।
-কী ভাবো আমাকে বলোতো? মেয়েলী? ন্যাকা?
-কিপ টকিং!
-ওক্কেই! আমার মেয়েলীপনা না থাকলে তোমার ঘোরাচ্ছন্ন বেপরোয়া রোমান্টিকতা এতদিনে গোরাচ্ছন্ন হয়ে কীটপতঙ্গের খাদ্য হতো না!
-স্টপ টকিং!
-হাহাহা! তোমার ঘামে ভেজা গেঞ্জিটা দাও, আমি শুকবো, ওহ স্যরি, স্নিফ করব!
-নাও! আর কী বা দিতে পারি!
-এখন কেন শুকনো মুখ তোমার?
হিসহিসিয়ে সুধোয় সে।
-নিজেকে কী ভাবো, মহান প্রেমিক পুরুষ?
এবার তার ভুল লেঙথের বলে আমি সপাটে কভার ড্রাইভ করি,
-না, নিজেকে একজন অভিযাত্রী ভাবি শুধু। তোমাকে বুকপকেটে নিয়ে খুঁজে বেড়াই
-তোমার এমন অভিযান অযৌক্তিক হলেও অপ্রাসঙ্গিক না। কারণ, আমিও কি খুঁজছি না তোমাকে? তোমার সুপিরিয়র রোমান্টিক কমপ্লেক্সকে বরাবর অবজ্ঞা করে এসেছি, জানো তা?
তার এহেন সন্দেহবাদী প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে আনকোরা স্নিফদৃশ্য বস্তগুলো বের করে দিয়ে বিজয়ের উল্লাসে হাসি।
সে আমাকে পাল্টা হাসি দিয়ে তার স্নিফোজ্জিত স্নোফলগুলো বের করে দেখায়।
আমার ঘর্মাক্ত গেঞ্জি, অশোধিত অন্তর্বাস, টুকরো টুকরো মাংস।
শীতল।
-ওভেনে দিয়ে গরম করব?
-তুমি জানো সেটার কোন প্রয়োজন নেই।
-তুমি এখন জেনেছো, অথচ আমি আগেই জানতাম!
নীরব্তা স্নিফময়!
আমরা একে অপরের গন্ধ শুঁকতে থাকি, অথবা সজোরে শ্বাস নিই, আভিধানিক অর্থেই!
-আগামী একুশদিন আমাকে ট্রেইনিংয়ের কাজে বাইরে থাকতে হবে। দয়া করে কোন আদেখেলাপনা করবে না!
কে কাকে বলে তাতে কী এসে যায়! আদেখেলাপনার হাড়মাংসকে চুম্বাগ্নিতে পুড়িয়ে ভস্মীভূত অংশের গন্ধকে প্রাণ ভরে টেনে নিই, অথবা স্নিফ করি!
-আমার অবর্তমানে তোমার খারাপ লাগবে না?
-দ্যাটজ আ সিলি কোশ্চেন!
আগ্নেয়গিরি মৃত হলেও তা অগ্নিউপাসকদের আসক্তির শক্তি কমাতে পারে না কখনও।
কাঁটা ঠোট, প্লাবিত যৌনাঞ্চল, উড়ু উড়ু চুল, সবকিছুকে ভালোবাসাতীত দিশলাই আগুনে পুড়িয়ে আমরা স্নিফ করি...
স্নিফ শব্দটির যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ জানার কোন প্রয়োজন আদৌ নেই, আর যদি প্রয়োজন হয়ও, অন্তত বোকাভিধানের দ্বারস্থ হব না আমরা কখনও...
**লেখাটিকে স্নাফ গল্পটির কোমল এবং ভারসাম্যপূর্ণ সিকুয়্যেল বলা যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৫৯