somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃতবৎসা জোছনার কাল

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জরায়ুতে জলীয় দ্রব্যের ঘাটতি, উচ্চ রক্তচাপ আর হিমোগ্লোবিনের অভাব, সেইসাথে ক্ষতিকর হরমোনের আধিক্য, ভুমিষ্ট হবার আগেই শিশুটিকে চিরনিস্পন্দ করে দেবার জন্যে এর চেয়ে বেশি আয়োজনের দরকার ছিলো না। আর মাত্র এক মাসও যদি সে টিকে থাকতে পারতো তবে প্রি-ম্যাচিওরড বেবি হিসেবে পৃথিবীতে পদার্পন করে টিকে থাকার লড়াইটা চালানোর সুযোগটা অন্তত থাকতো। আর এখন? তার অগ্রজ রক্তস্বজনেরা রিক্ত হৃদয়ে সিক্ত চোখে জল মোছার সুযোগও পাচ্ছে না, প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্যে। শিশুটি শুধুমাত্র কিছু কোষের সমন্বয়ে একটা কিম্ভূত আকৃতি নয় এখন আর, তার স্নায়ুমন্ডলী রীতিমত তাকে শ্রবণসক্ষম করে তুলেছিলো, পৃথিবীতে অবতরণের পরে প্রথম শ্বাস নেবার জন্যে তার ফুসফুস তৈয়ার হচ্ছিলো, প্রায় ফুটখানেক দৈর্ঘ্যের এই আধামনুষ্য অবয়বটাকে শল্যকার্যের মাধ্যমে বের করে তার মায়ের জীবন নিশ্চিত করাটাই জরুরী এখন। তাই শোকের ডেকচি থেকে বলগ ধমকে উঠে ঢাকনা ফেলে দেবার উপক্রম করলেও বুকের ভেতরে জমানো পাথরটা ওর ওপরে রাখতেই হয়। কিন্তু এতে ভার লাঘব হয়না কোনভাবেই। পাথরের পর পাথর জমতে থাকে বক্ষপিঞ্জরে। তারা কেউ পাথরের নামতা জানতো না। খুব অল্প সময়েই শিখে যায় জীবনের এই কঠিন পাঠ।

কবরস্থানে শুয়ে থাকা আত্মাদের মাঝে যোগ হতে যাচ্ছে আরো একজন। যে শিশুটি পৃথিবীকে দেখতে পেলো না, যার অস্থিসংস্থাপনায় এখনও মিশে আছে মাতৃগুহার সৌরভ, যে জীবনকে চিনতে পারার আগেই মরণের কাছে পরাভূত হল, কী করে থাকবে সে এই মাংসখেকো কীটপতঙ্গের দেশে? তার কবরের জন্যে গর্ত খুড়ছে গোরস্থানের কর্মচারী। ছোট আকৃতির কবর খুড়লেই চলবে বলে পরিশ্রম কম হবে এই আনন্দে মশগুল হয়ে তার কর্মস্পৃহা বেড়ে গেছে। পাশে দাঁড়িয়ে শূন্যচোখে তা দেখছে মৃত শিশুর বাবা। কবর খননকারী লোকটি বেশ খোশমেজাজে আছে। সে কিছুটা বাচালও বটে। কথা না বলে থাকা তার জন্যে কষ্টকর। তবে এই পরিস্থিতিতে কথা বলাটা সমীচীন হবেনা অনুধাবন করে সে চুপই ছিলো এতক্ষণ। পরে সে ভেবে দেখলো, প্রাসঙ্গিক আলাপ চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
-কবরে শুধু মাটি দিয়ে পুঁতে রাখবেন, নাকি বাঁশের বেড়া দিবেন?
-বেড়া দেব।
-খুব ভালো। জায়গাটাও ভালো পছন্দ করেছেন। পাশেই নিমগাছ। নিমগাছে খোদার বরকত থাকে। আপনার সাথে আর কে কে আছে?
-আমার বাবা, ভাই,আর দুঃস্বম্পর্কের এক দাদা।
-ও আচ্ছা।
কথা বলার পর্ব আপাতত মূলতবী রেখে খননকারী আবার কাজে মনোনিবেশ করে। কবর খনন করা কঠিন পরিশ্রমের কাজ, আবার জ্যামিতিক আকৃতি ঠিক আছে কী না এই ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হয়। তাই পরিশ্রমের পাশাপাশি মনোযোগও দরকার পড়ে এই কার্যে।
-আমার বাবার বয়স ৬৫, ভাইয়ের বয়স ৩৫, আমার বয়স ২৮ আর আমার দুঃসম্পর্কের দাদার বয়স কত জানেন?
হঠাৎ লোকটার এমন কথাবার্তায় খননকারী বেশ অবাক হলেও তা প্রকাশ করে না। শোকে -দুঃখে মানুষের আচরণে অনেকসময় অসংলগ্নতা প্রকাশ পেতে পারে। সে জানে। তাই সে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিমায়ই কথা চালিয়ে যায়।
-কত বয়স?
-৯৫! এই বয়সেও তার শরীর বেশ মজবুত। খবর শুনে সে নিজেই চলে এসেছে লাঠিতে ভর করে। কারো সাহায্য লাগেনি।
-বাহ! বেশতো।
-আমাদের প্রতি তার খুব নজর। যদিও রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় না, কিন্তু আমাদের যেকোন বিপদে সবসময় পাশে থেকেছেন, দেখভাল করেছেন। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি।

তার কথার সার্থকতা প্রমাণ করতেই যেন বৃদ্ধ লাঠিতে ভর করে চলে এল খননস্থলের কাছে।
-কবরের কাজ কতটুকু হলো?
মৃতশিশুর বাবা স্নেহময় বৃদ্ধের স্পর্শ পেয়ে চোখের অশ্রূগ্রন্থিতে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন অনুভব করে। তার ব্যাকুল কান্নায় বিঘ্নিত হয় কবর খননের অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা। খননকারী বাচাল লোকটি মাথা নিচু করে কবর খুড়তে থাকে কোন কথা না বলে।
-দাদা, আমি কী করব বলেন তো? এত স্বপ্ন, এত পরিকল্পনা, সব ধূলিস্মাৎ হয়ে গেলো। আর ওকেই বা কীভাবে বলি? বেচারী এখনও জানে না। জানলে সহ্য করতে পারবে? এ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব কাটেনি এখনও। আর যদি কখনও না কাটে? ও যদি আর কখনও সুস্থ হয়ে না ওঠে? যেখানে ওর জীবন নিয়েই সংশয়, কীভাবে এই মৃত্যুর খবর জানাবো, আমাকে বলেন! বলেন দাদা! আপনি তো আমাদের সবসময় সাহস যুগিয়েছেন, সহায় হয়েছেন, এখন কেন চুপ করে আছেন? কিছু বলেন!

শোক থেকে উদগত কঠোর আলিঙ্গনের চাপে পড়ে বৃদ্ধ হাঁশফাঁস করছিলেন। আরো কথা বলতে গিয়ে মৃতশিশুটির বাবা খেয়াল করে ব্যাপারটি। সে খেয়াল করে, বৃদ্ধ আর আগের মত মজবুত নেই। অশক্ত শরীরে ঝড়-জলে কুঁচকানো মাদুরের মত লেপটে আছে কুশ্রী চামড়া। সে ছেড়ে দেয় তাকে। বৃদ্ধ প্রকৃতস্থ হবার জন্যে কিছুটা সময় নেন। বড় বড় করে শ্বাস ছাড়তে থাকেন। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসার পরে তার সহজাত প্রবৃত্তিবশে খোঁজখবর নিতে থাকেন মৃত্যুপূর্ববর্তী ঘটনাপুঞ্জির। বয়সের কারণে সেখানে থাকতে না পারার জন্যে খেদ প্রকাশ করেন। তবে মৃত্যুপরবর্তী আচার অনুষ্ঠানে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারার কারণে সে খেদ দূরীভূত হয় অনেকটাই। তিনি আবারও নিজেকে বর্তমান পরিস্থিতির একজন সক্রিয় উপযাচক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় রত হন।
-কবর কতটুকু খোড়া হয়েছে?
-এইতো হয়ে এসেছে প্রায়। আর বেশিক্ষণ লাগবে না। আপনারা লাশ রেডি করেন। হাসপাতাল থেকে এসে যাওয়ার কথা এতক্ষণে।
গোরখোদক অনেকক্ষণ পরে মুখ খোলে। আজকে কবরটা খুড়তে এত বেশি সময় লাগছে কেন সে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে কে যেন তাকে খাটিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছেমত মওকা পেয়ে।

লাশ। ছোট্ট একটা লাশ। কাপড়ে মোড়ানো একটা পুঁটলি। যে হতে পারতো জীবন্ত পুতুল, সে আজ মৃত পুঁটলি। আর তাই হয়তো আজ শরতের ঝকঝকে নীল আকাশ থেকে নেমে এসেছে সহমর্মী গোধূলি। চারিদিকে আঁধার হয়ে আসছে এই অবেলায়, কিন্ত মেঘের দেখামাত্র নেই। অপরিমেয় শুষ্কতায় সবার চোখে যেন চর জেগে উঠেছে। একটু আর্দ্রতা পেলে কবরের খননকার্যটা তরান্বিত হত। কিন্তু জল সব কলরব করছে গোরখোদকের সারা শরীরে ঘামের ক্যামোফ্লেজে। গোরস্থানের কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মচারীরা দুপুরের খাবার খেতে চলে গিয়ে এলাকাটাকে অস্বস্তিকর এবং শুনশান বানিয়ে ফেলেছে। মৃদু বাতাসে মৃতপাতাদের পায়চারির খসখস শব্দের সাথ সঙ্গত করছে শুধু বেলচার থ্যাপথ্যাপ শব্দ। কবর খোড়া বড্ড পরিশ্রমের কাজ।
-আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? ঘেমে নেয়ে একেবারে স্নান করে ফেলেছেন। দিন আমাকে দিন বেলচাটা, আমি খুড়ি।
-আরে না, কী যে বলেন! আমার কাজ আমাকে করতে দিন।
সন্তানের মৃত্যুতে এমন অস্বাভাবিক আচরণ মোটেও অস্বাভাবিক নয়, সে ভাবে। তবে এটাও ঠিক, শরীরটা বিশেষ সুবিধের লাগছে না তার। বড্ড ক্লান্ত বোধ করছে। কিন্তু তাই বলে এমন অদ্ভুত প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও নিশ্চয়ই সাজেনা তার!
-কী হলো, বললাম না আমাকে দিতে?
কন্ঠস্বরে আচমকা কঠোরতা এবং রূঢ়তা তাকে কিছুটা বিচলিত করে তোলে। লোকটি এমন করছে কেন? চোখেমুখে খুনে দৃষ্টি। হাতদুটো মুঠো পাকিয়ে আছে আক্রমণের ভঙ্গিতে। অকালগোধূলির আলো তার চোখের মণিতে আশ্চর্য নিস্প্রভ এক মৃত্যুরঙ এঁকে দিয়েছে যা সে আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। অনেকটা সম্মোহিতের মত সে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, হাত থেকে পড়ে যায় বেলচাটা। খপ করে কেড়ে নিয়ে অমানুষিক শক্তিতে মাটিতে কোপ দেয়া শুরু করে লোকটা।
-সব কাজ সবাইকে দিয়ে হয়না। পরিস্থিতির সাপেক্ষে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়। হতে পারে আপনি অভিজ্ঞ একজন, কিন্তু অভিজ্ঞতাই সব না। এখন এই কবরটার আমাকে প্রয়োজন।
তার খননশক্তির প্রাবল্য দেখে গাছের পাতারাও যেন বাতাসের সাথে মিতালী করতে ভুলে গেছে। গোরস্থানজুড়ে শুধু মাটি কোপানোর থ্যাপথ্যাপ শব্দ। ইতিমধ্যে তার সাথে উপস্থিত স্বজনেরাও ঘটনাস্থলে এসে গেছেন। প্রাথমিক বিহবলতা কাটিয়ে উঠে সবাই বেশ আগ্রহের সাথেই ঘটনা অবলোকন করতে লাগলেন। বাবা এবং ভাই তার প্রাণশক্তি এবং কর্মতৎপরতার প্রশংসা করলেও তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিষয়বুদ্ধিজ্ঞানসম্পন্ন নব্বইঊর্ধ বৃদ্ধ ব্যাপারটির অসুবিধার দিকটি নজরে আনলেন সবার,
-এত বড় কবর খুড়ছে কেন? ছোট্ট একটা দেহ, এত জায়গার কি কোন দরকার আছে?
-কখন কি দরকার পড়ে যায় বলা যায় না দাদা। আপনার ওপর অনেক হ্যাপা যাচ্ছে এই বয়সে। আপনি বরঙ বসে থেকে বিশ্রাম নিন। এই উনাকে একটা চেয়ার এনে দাও তো।
গোরখোদককে আদেশ করেন খননরত ব্যক্তির ভাই। তার বাবাও মাথা নেড়ে এ বক্তব্য অনুমোদন করেন।
-আপনার শরীরটা সত্যিই অনেক খারাপ হয়ে গেছে চাচা, কখন যে কী হয় বলা যায়না। আপনি এতদিন আমাদের খেয়াল রেখেছেন, কতদিন আর রাখতে পারবেন কে জানে!
-পারবো রে পারবো! কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, এমন কী কবরে শোয়ার মুহূর্তেও তোদের কথা ভাববো আমি। এই, কবরটা এত বড় করে খুড়ো না তো! থামো এবার, থামো!

তার আতঙ্কমিশ্রিত কন্ঠস্বর শুনে শোকাক্রান্ত দিবসের প্রথম হাস্য পরিস্থিতির সূচনা করে মৃত শিশুর বাবা, চাচা এবং দাদা। গত কয়েকদিন যাবৎ তারা হাসেনি। গত কয়েকদিন তারা মৃত্যুদূতের সাথে সমস্ত জীবনিশক্তি নিঙড়ে লড়াই করে ক্লান্ত হয়েছে। হাসবার অবসর বা অবকাশ কোনটাই পায়নি। কত হাসি জমা ছিলো তাদের! না হাসতে পারলে কি মানুষ বাঁচে? হয়তোবা সুস্থভাবে বেঁচে থাকার তাগিদেই তারা হাস্যপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে থাকে। বেলচার থ্যাপথ্যাপ শব্দের সাথে তাদের হাসির শব্দের অনুরণনে গোরস্থানটা যেন জ্যান্ত হয়ে ওঠে। প্রতিটা কবরের হাড়মাশবিহীন প্রতিকৃতি থেকে প্রতিধ্বণিত হতে থাকে হাহাকার এবং হাসি। রুহের অলিন্দে ফুৎকার দিয়ে জাগিয়ে তোলে কেউ জীবনের স্মৃতি। জীবন এবং স্মৃতি চক্রোবদ্ধভাবে এগুতে থাকে হাস্যরত দলটির দিকে। ঘিরে ধরে তাদের। তাদেরকে আরো হেসে চলার শক্তি যোগায়। আর প্রবীণতম অশক্ত এবং কুঞ্চিত চামড়ার লোকটি আরো ন্যুব্জ হয়ে যেতে থাকে, কোনঠাসা হতে থাকে। সে কোনভাবেই এই হাস্যউৎসবে যোগ দিতে পারে না।
-ঠিক আছে, বড় করেই বানাও। বড় করে খোড়ো। এটার দরকার রয়েছে।
ভবিতব্য মেনে নিয়ে কম্পমান কিন্তু প্রশান্ত স্বরে বলে সে।
-এই তো এতক্ষণে বুঝলেন দাদা। আমার প্রায় হয়ে এসেছে কাজ। আর একটু অপেক্ষা করুন।
-আরে তাড়াতাড়ি কর না! তোমাদের দিয়ে আসলে কোন কাজই হবে না ঠিকমত। কোনদিন একটা কাজ সময়মত করতে পারোনি।
তার ভর্ৎসনা শুনে স্বস্তির শ্বাস ফেলে সবাই। সবকিছু ঠিকঠাক মতই চলছে। আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আগের মত। কারো জন্যে কোনকিছু থেমে থাকে না।
-কই, হলো?
এবার মেঘগর্জন করে ওঠেন তিনি। শরীরটা আবার চনমনে বোধ করতে থাকেন।
-শেষ! নেমে পড়ুন দাদা। এই ভাইয়া, বাবা; দাদাকে কবরে নামিয়ে দাও না। কী যে কর তোমরা! সবকিছু বলে দিতে হয়। উনি কি একা একা নামতে পারবেন? পড়ে গিয়ে হোঁচট খান যদি?
বাবা এবং ভাই নিজেদের অপ্রতিভতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বৃদ্ধকে তুলে নেন কাঁধে। গোরখোদকের সাহায্য নিয়ে তাকে নিয়ম অনুযায়ী শুইয়ে দেন কবরে।
-এখন কী কী ধর্মীয় আচার-আরাধনা আছে বলেন, আমরা তো এতশত জানি না!
গোরখোদককে নতুন কাজের সন্ধান দেয়া হয়।
-কিছু করতে হবে না। তাকে মাটি দেন সবাই। মুরুব্বী, আপনি ঠিকমত শুয়ে থাকেন। কোন অসুবিধা হলে আমাদের জানাবেন।
-আমার অসুবিধা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমি নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারি।
তার মুখমন্ডলে গুড়িগুড়ি, মিহিমিহি মাটি এসে পড়ে।
-কাপড়ের পুঁটলিটা ঠিকমত রেখ। ওটা কোথায় সাজিয়ে রাখতে হবে বলছি আমি...
একদলা কাঁদামাটি তার মাথার ওপর ছুড়ে দেয় কেউ। তিনি সন্তুষ্ট হন মাটির সাহচর্যে।
-হ্যাঁ তারপর যা করবে তা হল...
তার উপদেশ সবাই নীরবে মন দিয়ে শুনতে থাকে। আর মাটি ছুড়ে দেয় দলা দলা, মিহিমিহি, গুড়িগুড়ি। মাটি দিয়ে তার শরীর ঢেকে যায়। এবার বসে বসে একঘেয়েমীতে ভুগতে থাকা গোরখোদক নতুন কার্যের সন্ধান পেয়ে সবার ওপর খবরদারী করতে থাকে।
-সরেন সরেন! মাটিগুলো লেভেল করে দিতে হবে। ঐ কাজ আপনারে পারবেন না। আমাকে করতে দেন।
সবাই সরে এসে মৃতপুঁটলিটাকে স্মৃতিস্মারক হিসেবে স্থায়ীভাবে রক্ষা করার তৃপ্তিতে গোল হয়ে বসে।
-বেশিক্ষণ বিশ্রাম নেবার সময় নেই। চাচাকে যথাযথ সম্মানপ্রদর্শন পূর্বক সমাহিত করা হয়েছে। মৃতপুঁটুলিতে স্মৃতিদল এসে প্রাণের সঞ্চার করেছে। এখন এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে, আরো একটা কাজ করে যেতে হবে বিরামহীনভাবে।
-ভালো হয়েছে। উপদেশগুরু জরাজীর্ণ। তারেই কবর দেয়া উচিত।নতুন আগন্তক যে আসতে আসতেও পারলো না ,সে আবার আসবে অন্য প্রচেষ্টায়।পুরাতনকে কবর দিতেই হবে।
- এইভাবে বলতে হয় না। তাকে ভালোবেসে কবর দাও। তার অবদান তুমি অস্বীকার করতে পারবা না। সবকিছু স্বীকার করে নিয়েই আমাদের কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়।

কথাগুলো বলে তিনি মৃতপুঁটুলিকে তার ছেলের কাছে হস্তান্তর করে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন।
-আমি আমার করণীয় জেনে গেছি বাবা। জানি সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। এক্ষুণি যাচ্ছি।
পুঁটুলিটাকে বুকে চেপে ধরে দৌড় দেয় সে।

*
-তোমার এ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব কেটেছে?
পুঁটুলিটাকে তাদের শোবার ঘরের বিছানার পাশে টাঙাতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে সে তার স্ত্রীকে।
-না।

*
-তোমার সেলাইয়ের ক্ষত সেরেছে?
জানলার পাশে টাঙানো পুঁটুলিটাকে ঝাড়ামোছা করতে করতে জিজ্ঞাসা করে সে।
-না।

*
-ডাক্তারের নিষেধের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে?
পুঁটুলিটার ওপরে রাতের একখন্ড আঁধার এসে খেলা করে।
-হ্যাঁ, তবে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা উচিত।

*
-আমাদের আবার শুরু করা উচিত।
-হ্যাঁ!
জোছনাপ্লাবিত রাতের আলো এসে ছায়া দেয় রঙচটা পুঁটলি আর সঙ্গমরত দুই নর-নারীর ওপর।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২
৬৪টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×