-হাসান সাহেব।
-জ্বী।
-কালকে সকাল ১০টার সময় মিটিং। সবকিছু রেডি তো?
-জ্বী, অবশ্যই।
-দেইখেন আবার। এমডি সাহেব কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করবে সবকিছু। জবাবদিহি করতে হবে।
-জ্বী, সবকিছুর জবাবদিহি করবো। কোন চিন্তা করবেন না।
- আপনাদের ওপর তো ভরসা করা যায় না। গায়ে ফুঁ লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান।
-জ্বী না। সবকিছু রেডি থাকবে।
-ওকে। কালকে ঠিক দশটায়।
-ঠিক আছে।
কালকে ঠিক দশটায় যা হতে যাচ্ছে তার জন্যে আমি রেডি। চার্ট, গ্রাফ সব তৈরি করে ফেলেছি। সম্ভাব্য যেসব প্রশ্ন করার কথা সেসবের উত্তরও তৈরি। এবার আর আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আজকে অবশ্য আমাকে অফিস থেকে বের হতে হয়েছে সাড়ে নয়টায়। বাসায় পৌঁছুতে পৌঁছুতে সাড়েএগারটা। এরপর গোসল সেরে, খেয়ে ঘুমুতে গিয়ে সাড়ে বারোটা। উঠতে হবে সকাল ছয়টায়। অন্তত ছয় ঘন্টা ঘুম না হলে আমার মাইগ্রেনের ব্যথা ওঠে। কিন্তু আজকে কোনভাবেই ঘুম আসছে না।
একটা বাজে, দেড়টা বাজে, দুইটা বাজে। ঢং ঢং করে বাজে গ্র্যান্ডফাদার ক্লক। ঘুম আসে না। কিন্তু ঠিকই সকাল ছয়টায় এ্যালার্ম বেজে ওঠে নির্লজ্জের মত। আমার চোখে ঘুমের চুম্বক। দশ মিনিট স্নুজ দিয়ে রেখে দেখি যে নয়টা বেজে গেছে। এখন আমাকে ত্রিশ টাকা বাস ভাড়ার বদলে সাড়ে তিনশ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে অফিসে যেতে হবে।
দশটার সময় মিটিং।
দশটা পাঁচ যখন বাজে, তখন আমি অফিস থেকে আধা ঘন্টার দূরত্বে। ফোন এলো।
-হাসান সাহেব, আপনি কোথায়?
-এই তো আর দশ মিনিট। জ্যামে পড়েছিলাম।
অজুহাত দেখালাম আমি।
ওপাশ থেকে স্পষ্ট অসন্তোষ শুনতে পেলাম।
আরো ত্রিশ মিনিট পরে তিনবার কল কাটার পর অবশেষে আমি গন্তব্যে পৌঁছুলাম। নামলাম শ্যামলী বাস কাউন্টারের সামনে। সেখান থেকে আর দুই মিনিটের হাঁটাপথ আমার অফিস।
বাসের লোক প্রতিদিনকার মতই তাগাদা দেয়।
-কই যাইবেন ভাই? চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন?
আমার যাওয়ার কথা আরামবাগ। কিন্তু আমি ভ্যাবলার মত চেয়ে রইলাম তার দিকে।
-এখনই বাস ছাইড়া দিবো। টিকিট কাইটা লন
লোকটা আমাকে তাগাদা দেয়।
ওদিকে ফোন আসছে আবার।
-হাসান সাহেব, আপনি কোথায়? মিটিং কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। সাবধান! আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবার দেরী করলে!
আমি পা চালিয়ে হাঁটতে থাকি। শ্যামলী বাস কাউন্টারে ঢুকে কক্সবাজারের টিকিট কেটে ফেলি। শুনেছি ওখানে বেশ হাওয়া দিচ্ছে আজকাল। অনেক ঢেউ উঠেছে। সপ্তাহের শেষ দিন। অনেক তাড়া অবসরপিয়াসী মানুষের। টিকিটের নাম্বার সি থ্রি।
আমার ফোন বাজছে। মিটিং শুরু হয়ে গেছে। আর আমার জন্যে অপেক্ষা করতে পারবে না। আমি টিকেট নিয়ে বাসে উঠলাম। ফোন ধরে জানিয়ে দিলাম, এটাই দুপুরের আগে কক্সবাজারের শেষ বাস। ধর্মঘটের কারণে আগামী তিনদিন আর বাস ছাড়বে না। ফোনের ওপাশে গজগজানি শুনতে পেলাম।
এদিকে বাতাস ছেড়েছে প্রচন্ড। অফিসের জানালার কাঁচ ভাঙতে শুরু করেছে। আমি সি থ্রি সিটে বসে অপেক্ষা করছি, কখন বাস ছাড়বে। রেডিওতে খবর পাঠ হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দশ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত দেখানো হচ্ছে। এদিকে আমার ফোনে দশমবারের মত উঠেছে মিসকল। কোনটা বেশি বিপদজনক? হিসাব কষে বের করার আগেই বাসটা ছেড়ে দেয়। এক ঝলক হিমেল হাওয়ায় আমি গা এলিয়ে দেই সিটের ফোমে।
"সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ। আপনাদের অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে যে, আমরা কক্সবাজারের অভিমুখে রওনা দিয়েছি..."
চেনাকন্ঠে কেউ বলতে থাকে। আমি জানি, চোখ খুললেই আমার ঊর্ধ্বতনকে দেখতে পাবো। কিন্তু কেন যেন আমার চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না। সপ্তাহের শেষের দিনে কারো যদি অদ্ভুত কোন খেয়াল চেপে বসে, সেটা বিচার করার আমি কে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০১