
উৎসবের ট্রেইলার যখন মুক্তি পেলো, তখন থেকেই আমি অপেক্ষা করতে থাকি সিনেমাটি দেখার। আমি অনেকদিন ধরেই এমন একটা ছবি দেখতে চাইছিলাম, যেখানে থাকবে নির্ভেজাল আনন্দ, যেখানে থাকবে আমার পরিচিত চারপাশ। কোনো গিমিক না, কোনো মাথা ঘুরিয়ে দেয়া টুইস্ট না, ধুন্ধুমার অ্যাকশন অথবা শকিং ভ্যালু থাকবে না যেখানে, থাকবে শুধু চমৎকার একটা গল্প, যা ঈদের দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করা যায়। ট্রেইলার দেখে মনে হয়েছিল যে ঠিক এই ছবিটার জন্যেই আমি অপেক্ষা করছিলাম। তাই প্রথম দিনেই দেখে ফেললাম স্ত্রী আর পুত্র কন্যাকে নিয়ে।
সিনেমার কাহিনীটা নেয়া হয়েছে চার্লস ডিকেন্সের আ ক্রিসমাস ক্যারল থেকে। ক্লাসিক একটা কাহিনী। বইটা না পড়া থাকলেও এরকম কাহিনী সবারই জানা থাকার কথা। এই অনুধাবনের গল্প চিরকালীন। আরো অনেকবার ফিরে ফিরে আসবে বিভিন্ন স্থান-কাল এবং সময়ের প্রেক্ষিতে। কথা হচ্ছে গল্পটা আমাদের মতো করে কীভাবে আত্মীকরণ করতে পেরেছেন উৎসব টিম? এই জায়গাতেই তানিম নূর মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।
এই বিশ্বায়নের যুগে চাইলেই আমি দেখতে পারি লিথুয়ানিয়ার সিনেমা, দেখতে পারি তাইওয়ানের নিউ ওয়েভ। পৃথিবীর কোথায় কী চলছে সব বলতে গেলে তালুবন্দী। তারপরেও নিজেদের একটা গল্প দেখার তৃষ্ণা তো রয়েই যায়! আমি যে স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠেছি, যে খাবার খেয়ে মিটিয়েছি আমার রসনার আকাঙ্ক্ষা, যে সুপারস্টারের পোস্টার লাগিয়েছি, বন্ধুদের সাথে যেসব বিচিং করেছি- এইসব খুঁটিনাটি Nuance সিনেমায় থাকলে অবশ্যই বেশি আপন লাগবে (পরিচালক তানিম নূর আর সংলাপ রচয়িতা স্বাধীন আহমেদের এই রসায়ন আগে দেখেছি কাইজারে)।
“আর্টসেলের গানের লিরিক বোঝা যায় না, কিন্তু একদম বুকের মধ্যে এসে লাগে”- এই সংলাপটিকে সিনেমার একটা ডিফাইনিং মোমেন্ট বলা যায়। দৈনন্দিন বিষয় নিয়ে ড্রাই হিউমার, হেসে গড়িয়ে পড়তে হবে না, একটু হেসে আবার সিনেমার ফ্লোতে মিশে যাবেন। এরকম মোমেন্ট সিনেমাটিতে অনেকবার এসেছে। হাসি, বেদনা, অনুধাবন আর নস্টালজিয়ার একটা আনন্দময় ভ্রমণ হয়েছে আমাদের,ঈদে ঠিক যেমনটা দরকার!
জাহিদ হাসান একটি স্মরণীয় প্রত্যাবর্তন করেছেন। সাথে চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম সবাইকে মনে হয়েছে তারা এনজয় করছেন অভিনয়টা। স্ক্রিনে অল্প টাইম পেলেও আফসানা মিমি, ইন্তেখাব দিনার আর আজাদ আবুল কালামের উপস্থিতি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সাদিয়া আয়মানকে বরাবরই ভালো লাগে, সুনেরাহও দারুণ ছিল। আর প্রথমবারের মতো সৌম্যজ্যোতিকে দেখে মুগ্ধ!
আমরা টিকেট কাটতে গিয়ে একটু ভুল করে ফেলেছিলাম। সবার পেছনের সিটের টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি যে একদম সামনের সিট পড়েছে! সেটাই ভালো হয়েছিল আমাদের জন্যে। কারণ, সিনেমা শেষে আয়মান সাদিয়া আর সৌম্যজিৎ একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল আমাদের। সেই সুযোগে আমরা ছবি তুলে নিলাম।
আবার ফিরে যাব বিশ্বসিনেমার বৈচিত্রময় জগতে, কিন্তু আমাদের এই চেনা গল্পগুলিও বারবার দেখতে চাই স্ক্রিনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




