আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরো ভালোভাবে তুলে ধরা তো দূরের কথা, তৈরি করেছে একটা মুক্তিযুদ্ধবিমুখ প্রজন্ম। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও বড় করে তুলেছিল। শুধু কি বঙ্গবন্ধু? তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাইকেই একটা প্রোফেটিক ফিগার বানিয়ে রেখেছিল। শেখ রাসেলের জন্মদিনে আপনি স্কুলের বাচ্চাদের রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে স্থানীয় গুন্ডা কমিশনারের বক্তব্য শোনাবেন কেন? কোন যুক্তিতে? ছাত্রলীগকে কেন আপনারা শিবির সন্দেহে পেটানোর অথোরিটি দিয়েছিলেন? তার ফলাফল দেখছেন তো? প্রতিটা ক্যাম্পাসে এখন শিবিরের জয়-জয়কার। ২৪ এর অভ্যুত্থানও শুরু হয়েছে ছাত্রলীগের গুণ্ডামি থেকেই। নাহলে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের চাকুরির কোটা নিয়ে কার কী এসে যায়!
তো সেইসময়ে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক মানুষ অনেকরকম ধান্দাবাজী করেছে। এতটাই, যে 'চেতনা' শব্দটাই গালিতে পরিণত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু বলতে গেলেও "ধান্দাবাজ" আখ্যা পাওয়ার ঝুঁকি ছিল।
কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন বিপরীত মতাদর্শের মানুষজনের পোয়াবারো। আপনাদের ব্যারিস্টার ফুয়াদ, পিনাকি, ইলিয়াস এরা মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এরা প্রকাশ্যেই ইউনিফাইড পাকিস্তানের কথা বলে। এরা প্রকাশ্যেই বলে যে আমাদের প্রতি কোনো অন্যায় হয় নি। এরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়েও তাচ্ছিল্য করে।
দেশে মুক্তিযদ্ধের ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠদের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। অথচ এখনও আপনার কতিপয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে চেতে যান। ধান্দাবাজ, চেতনা ব্যবসায়ী বলেন। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধার অবমাননা নিয়ে আপনাদের কোনো কথা নেই। জামাতের আমীর একাত্তরে "যদি ভুল করে থাকে" তার জন্যে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু আপনাদের ভাব দেখে তো মনে হয় না একাত্তরে তারা কোনো ভুল করেছিল! ডাকসু নির্বাচনের কিছুদিন আগেও শিবিরের এক নেতা বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে অবমাননা করে পোস্ট দিয়েছিল। গোলাম আজমের পুত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতে চায়। শিবিরের নেতারা ডাকসুতে পহেলা বৈশাখ পালন না করে অগ্রাহায়ন পালন করতে চায়। তাদের যুক্তি "১৯৬৭ সালে এই বংলায় প্রথম পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাকিস্তানি শাসকেরা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করায় পাকিস্তানবিরোধী মানসিকতার বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।" এখন তারা সেই পাকিস্তানী মানসিকতায় পহেলা বৈশাখ পালন করা থেকে দূরে থাকবে।
তো, মুক্তিযুদ্ধ যদি পছন্দ না হয়, যদি পাকিস্তানই ভালো লেগে থাকে, সেটা সরাসরি বলেন! মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বললে খামোখা কাউকে চেতনা ব্যবসায়ী বলে ক্ষোভ মেটানোর কারণ দেখি না!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




