somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোহাগী জাহান তনু ও কিছু গতানুগতিক কথা

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মন বলছে, সোহাগী জাহান তনুকে নিয়ে লিখতে হবে। যদি না জেনে থাকেন এই সোহাগী জাহান তনু কে, তবে বলি- এই মেয়েটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। ছিল কেন? এখন নেই? না। মেয়েটিকে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নির্মন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটিকে পেছন থেকে আক্রমন করা হয়েছিল। টান দিয়ে মাথার চুল ছিড়ে ফেলা হয়েছিল, নাক বরাবর সজোরে ঘুষি মারা হয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক নির্যাতন করা হয়েছিল...।

আমার পরিচিত বান্ধবী বা ছোটবোন বা অন্য কোন নারী- যাকেই সামনে পাই, তাকেই গুরুজনের মত উপদেশ দেই সব কাজকর্ম যেন তারা সন্ধ্যের আগেই সেড়ে বাসায় চলে যায়। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে। মানুষের বদলে মানুষের পেট থেকে জন্ম নিচ্ছে জানোয়ার! নারী স্বাধীনতার সব বার্তা এখানে আটকে যায়। কেন ধর্ষকদের ভয়ে মেয়েদেরকে আমরা ঘরে লুকিয়ে রাখব? দেশে কি আইন-আদালত কিছুই নাই? এই সব ঘটনা দিনের পর দিন কেন বাড়ছে? বিচার না থাকলে কোন অপরাধীটা ভয় পায়?

খবর পেয়ে বাবা মেয়ের লাশ খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই খুঁজে পান মেয়ের ছেড়া চুল, তারপর জুতা, আরেকটু দূরে মোবাইল… তারপর তনুর লাশ, বাবা চিৎকার করে ওঠেন- ‘মা, মা, মা, মা আমার…’।

বর্ণনাটা ভয়ানক। আরও ভয়ানক ব্যাপার হল, এমনটা আমাদের খুব কাছের মানুষের সাথেও হতে পারে। রাষ্ট্রযন্ত্র একেবারে বিকল হবার আগেই কিছু তেল মাখিয়ে সচল রাখা আমাদের দায়িত্ব। রাস্তায় মানববন্ধন করে বা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ করে আমরা সেই তেলের যোগান দেই। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের চালক যদি নিশ্চুপ থাকে, তবে কতদিন আর তেল মেখে য্ন্ত্র ভালো রাখা যায়?

সেনানিবাসে কি করে এত বড় একটি অপরাধ ঘটল সে নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যায়। তনুর বিভৎস মৃতদেহের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। তাহলে ততোধিক বিভৎস ধর্ষক ও হত্যাকারীদের কি করে ধারণ করে এই সমাজ।



আপডেট (২৪/০৩/২০১৬)

মানুষের দাম কত? দাসপ্রথার যুগ আমরা বহু আগে পেছনে ফেলে এসেছি। তখন টাকা-কড়ি দিয়ে মানুষ কেনা-বেচা হত। এই খবর চোখে পড়ার পর মনে হল, সত্যিই কি দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে? (খবরটি এইখানে)

খুনের পর অনেকগুলো ঘন্টা,মিনিট,সেকন্ড চলে গেছে। অপরাধী ধরা পড়েনি। এদেশে অপরাধ করে খুনীরা পালিয়ে যাবে, কখনও ধরা পড়বে না, কিছুদিন পর সবাই সবকিছু ভুলে যাবে- এই স্বাভাবিক।

তবে মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটে। ইয়াসমিন নামের এক দরিদ্র ঘরের মেয়েকে ১৯৯৫ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করে কিছু পুলিশ। দিনাজপুরের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। পুলিশের উদ্দাম গুলিতে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। তবুও দমে না তারা। পরাজিত হয় কথিত ক্ষমতাবান দুর্বৃত্তরূপী পুলিশেরা। তিনজনের ফাঁসি হয়।

এমন আরও একটি ঘটনা ঘটে গাইবান্ধায়। ২০০২ সালের কথা। তৃষা নামের এক কিশোরী বখাটেদের ভয়ে পালাতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যায়। গাইবান্ধার মানুষ এক হয়ে ফেটে পড়ে প্রতিবাদে, ঠিক যেমন দেখিয়েছিল দিনাজপুরের জনগণ। মাত্র ৭৫ দিনের মাথায় তিন বখাটের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। পরে অবশ্য সাজা কমিয়ে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল।

অর্থাৎ, দৃষ্টান্ত আছে। আমরা এক অভাগা সমাজব্যবস্থায় বাস করি, যেখানে অপরাধীদের বিচারের জন্য প্রবল আন্দোলনের প্রয়োজন হয়, পুলিশের গুলি খাওয়ার প্রয়োজন হয়। অপরাধী ধরার দায়িত্ব যেন প্রশাসনের না, সব দায়িত্ব যেন জনগণের।

২০ হাজার টাকা, একখন্ড খাস জমি- এগুলো দিয়ে কি এই নিরাপত্তাটুকু আসবে যে দুদিন পরে আবারও ধর্ষণ হবে না? ধর্ষণর প্রতিরোধের অস্ত্র কি অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড নয়? বারবার করে কেন মুখ লূকায় প্রশাসন, কেন বারবার ২০ হাজার টাকায় ভোলাতে চায় আমাদের?

সুখের কথা, মানুষ রাস্তায় আছে, প্রতিবাদের ভাষাটুকু মানুষের আজও বেঁচে আছে। প্রশাসন যদি আবারও পালাতে চায়, তবে হোক না আরেকবার ১৯৯৫ বা ২০০২ এর পুনরাবৃত্তি, ক্ষতি আছে কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২১
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×