somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজল রেখা ও তার সন্তান আর একলাম্পসিয়া

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি বাসা থেকে শুধু পা টা বের করব , তখনি একটা কাক কা কা করে ডেকে উঠল । কোন বিপদ আপদ নেই তো সামনে ? ওরে কাক , কা কা করার আর সময় পেলিনা ।

ধ্যাত , এত কুসংস্কারকে এত পাত্তা দিলে চলে ? এই শহর হল ময়লা শহর । এখানে কাক ছাড়া আছে কি ? কাকের কাকা র বদলে ময়ূরের কেকা শুনতে চাইলে তো হবেনা । তাছাড়া কুসংস্কারে বিশ্বাস করা গুনাহ ।
সাহস করে বিসমিল্লাহ বলে বেরিয়ে পড়লাম । যাচ্ছি হাসপাতালে ।
সেখানে গিয়ে দেখি লেবার রুমে পেসেন্ট শোয়ানো । আর সবাই বসে আছে পথ চেয়ে । কখন আমি আসব । B-)
তাদের রোগী কাজল রেখা । প্রথম প্রেগনেন্সী । বাচ্চার নড়াচড়া পাচ্ছেনা ।
কাজল রেখাকে আমার কাছে ফুলা ফুলা ইডিমেটাস লাগল । প্রেশার মাপতে গিয়ে দেখলাম প্রেশার ১৪০/ ৯০ ।
হুম বিপি মার্জিনালি বেশী । এর টেস্ট করানো দরকার । ইঊরিনে এলবুমিন যাচ্ছে কিনা ।

কিন্তু রুগী সে পর্যন্ত অপেক্ষা করল না । আমাকে তাজ্জব করে দিয়ে সাথে সাথে রোগীর প্রচণ্ড কনভালশন শুরু হয়ে গেল । :-/ খিঁচুনি । ও মাই আল্লাহ । :-/

প্রেগনেন্সী ,
সেই সাথে প্রেশার বেশী ,
সেই সাথে গায়ে পানি ,
সেই সাথে খিঁচুনি ,
প্রসাব পরীক্ষা করালে দেখা যেত হয়ত সাথে এলবুমিন নামের প্রোটিন বেরিয়ে যাচ্ছে ...
এটা সেই ভয়ংকর বিপদ । এটা একলাম্পসিয়া । কেড়ে নেয় মা আর শিশুর জীবন । হাসপাতাল এ মাতৃমৃত্যুর এক নাম্বার কজ । :-/


এই প্রেশারেই এই অবস্থা ? হয়ত তার প্রেগনেন্সীর আগে ৯০/৭০ বা এরকম থাকত । ১৪০/৯০ তার জন্য বেশি হয়ে গেছে ।
কবে থেকে তার প্রেশার বেড়ে গেছে ,কী জানি , কোন প্রেশার মাপার কোন রেকর্ড তো নেই ।
প্রেগনেন্সীতে প্রেশারের ব্যাপক আপ ডাউন হয় । ব্লাডপ্রেসার জনিত সমস্যা খুব কমন । প্রেশারের কারণে শরীরের প্রায় প্রতিটি সিস্টেমের রক্তনালী সংকোচন করে , হার্ট কিডনি বিকল হয়ে কাজ বন্ধ করে দিলে , ফুসফুসে পানি এসে বা মাথার রক্তক্ষরণ হয়ে কাজল রেখা মরে যেতে পারে । :((


ওহ ,:| আমি রোবটের মত বললাম কুইক চ্যানেল ওপেন কর , ক্যাথেটার কর , অক্সিজেন লাগাও , লেফট ল্যাটারাল কর , ম্যাগসালফ আন । হাসপাতালের সিস্টাররা ছুটে গেল ।

আবার খিঁচুনী যেন না হয় তার ঔষধ ম্যাগসালফ । প্রফেসর লতিফা শামসুদ্দীন ম্যাডাম সহ আরও চিকিৎসকের একান্ত প্রচেষ্টায় ম্যাগপাই ট্রায়ালের মাধ্যমে ম্যাগসালফ এসেছে , যা মায়ের জীবন রক্ষা কারী ওষুধ । নিজের টাকা খরচ করে ম্যাডাম ঔষধ কোম্পানিকে দিয়ে দূর দেশ থেকে ঔষধগুলো আনিয়েছিলেন । ম্যাডামের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ ।




তাই মুহূর্তেই চালু করলাম ঔষুধ গুলো
প্যাসেন্ট ডীপ স্লিপে । তার অক্সিজেন চলছে । স্যালাইন চলছে ।

কিন্তু বাচ্চার কি অবস্থা ? :-/
বাচ্চাটা তো ফুলের রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে তার জীবন রক্ষা কারী অক্সিজেন পায় । কিন্তু এখন প্রেশারে জরায়ুর রক্তনালীগুলি সংকোচিত হয়ে আছে । যদিও ম্যাগসালফ বাচ্চার ফুলের রক্তপ্রবাহ বাড়াবে

কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত হবে কি ? বাচ্চা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেলে খারাপ হয়ে মারা যেতে পারে ।
ওর হার্টসাউন্ডের কি অবস্থা ? উটেরাস পুরা কনট্রাক্টেড ।পেট শক্ত হয়ে আছে । স্টেথো দিয়ে ফিটাল হার্ট সাঊন্ড বুঝা যাচ্ছেনা । /:)

ডপলার আছে , কিন্তু না থাকার মত । ওটা দিয়ে কাজ হবে না ।
আল্ট্রাসনো মেশিন দিয়ে দেখতে হবে । সেটাই ভরসা । কিন্তু দোতলায় মেশিন । রোগীর অবস্থান ৩ তলায় ।

না, রোগী নেয়ার মতো টাইম নাই । তাড়াতাড়ি আল্ট্রাসনো মেশিনের তারতুর খুলে নিয়ে আস । তাড়াতাড়ি । ব্রাদার ছুটে গেল ।

এখানে আবার সেট করে প্রব মাত্র লাগাবো , তখনি পিছনে রোগীর আত্মীয়া বলল , কি বাচ্চা দেখা যায় আপা ?;);) ( এটার তরজমা হল , বাচ্চা ছেলে না মেয়ে ?)
হায়রে কই যাই এরকম রুগীর অভিভাবক নিয়ে । কোথায় জিজ্ঞেস করবে বাচ্চা কেমন আছে , বেঁচে আছে কিনা । তা না প্রশ্ন হল , কি বাচ্চা দেখা যায় আপা ?


বাচ্চার হার্ট স্বাভাবিক থেকে অনেক দ্রুত গতিতে যাচ্ছে । ফিটাল ট্যাকিকার্ডিয়া । বাচ্চা খারাপ ।ইমেডীয়েটলি প্রেগনেন্সী টারমিনেশন করাতে হবে । বাচ্চাটা ডেলীভারী করাতে হবে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ।

যেহেতু জরায়ু মুখ পর্যাপ্ত খোলা না , বাচ্চার মাথা অনেক উপরে , অপারেশন ছাড়া গতি নেই । দ্রুত সিজার করতে হবে ।




আপা , আপনি সব রিস্ক নিয়ে এখানে ডেলিভারী করাবেন ?

আসলেই আমি কি করতে যাচ্ছি ?
অল্পবয়সে এরা মেয়ে বিয়ে দিয়েছে , কম বয়সে এই গর্ভ ধারণ । জীবনেও একবার ডাক্তার দেখায় নি । প্রাইভেটে না দেখাক , সরকারী হাসপাতালে দেখাতে পারতো । প্রেশার বেড়েছে , গায়ে পানি এসেছে ।
একটা কোন পরীক্ষা করানো নাই । জীবনে একটা আয়রন , ক্যালসিয়াম চোখে দেখে নাই । সব কিছু আজ তাকে এই অবস্থায় এনে দিয়েছে ।
হায়রে এখনো এরকমটাই বেশী । সরকার এতো সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও মাত্র ৫৪ ভাগ গর্ভবতী মাত্র একবার ডাক্তারের কাছে যায় ।
তা হাতের কাছে ডাক্তার থাকতেও দেখান নাই কেন ? এই প্রশ্ন করতে পারতাম , কিন্তু করলাম না । কারণ তারা কি উত্তর দিবে জানি ।
আমাদের হইছে-না ? আমাদের সময় তো এত ডাক্তার কবিরাজ আছিলোনা ।

এখন বেবীর জীবণ বাঁচাতে শুধু সিজার করলেই হবে ? সিজারে ও অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হতে পারে । কাজল রেখা শকে চলে যেতে পারে । পরবর্তীতেও সেপ্সিস হতে পারে ।
কত্ত ঝামেলা ।

এখন পুরুষ মানুষগুলো কেউ নেই , কিছু হলে তারা আসবে মিস ম্যানেজম্যান্টের কথা বলে হাসপাতাল ভাঙ্গতে ।

মানবাধিকার সাহেব পাঁচতারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বলবেন আপনারা অমানুষ , কসাই , আপনাদের আর কত গাড়ি চাই , বাড়ি চাই , কেন টাকার লোভে ক্লিনিকে রোগীটাকে নিয়ে কাটাকুটি খেললেন ,কেন ঢাকা মেডিকেলে একলাম্পসিয়ার আলাদা ওয়ার্ড থাকা স্বর্তেও সেখানে পাঠালেননা । ডাক্তারদের ফাঁসি দিলেও এদের ঠিক করা যাবেনা । X(

এখন প্রথম কালোর সাংঘাতিকরা ছুটে আসবেন । ডাক্তারের হাতে কেউ মারা গেলে সেটা নিউজ এজেন্সীর জন্য খুব শুভ দিন :D মহিলা ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু । শিরোনাম । বাংলাদেশ বলেই এভাবে মারা গেল , ইন্ডিয়ার চিকিৎসা কত্ত ভালো ।



দিয়ে দিবে ফেইস বুক শেয়ার , পাবলিকে হুমড়ি খেয়ে পড়বে ।সারা জীবনের কষ্ট পরিশ্রম এক বাক্যবাণে খান খান , চৌদ্দ গুষ্টি শেষ । কয়েকজন ব্লগার সেটা আবার কপি পেস্ট দিবে ব্লগে । ইচ্ছামত গালাগালি । কেউ কেউ পোস্ট দিবে ডাক্তারদের অন্য নাম কসা ই দেয়া হোক । একজন আরমান বা মনিরা সুলতানা ব্লগার চিঁ চিঁ গলায় বলার চেষ্টা করবেন , উনি আমাদের সামুর ব্লগার । সব ডাক্তার খারাপ না ।
ব্যাস তাদেরও চৌদ্দ গুষ্ঠি শেষ ।



তার চেয়ে রেফার্ড করে দিই ।
যদিও বাচ্চাটা মারা যাবে ।অবশ্য ওরতো মরে যাওয়ারই কথা । এটি একটি অতি সাধারণ হাসপাতাল । আই, সি ইউ নেই , এন , আই সি ইউ নেই , শিশু ডাক্তার উপস্থিত নেই ।
ঢাকা মেডিক্যালে পাঠিয়ে দিলে, সেখানে গিয়ে পৌঁছাতে বনানীর সিগনাল , প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সিগনাল , কাওরণবাজারের সামনের সিগনাল , সব পার করে যেতে দুই আড়াই ঘন্টা লাগবে ততক্ষণে বাচ্চা আরও খারাপ হবে ।

এখন হার্টবিটবেশী ,
তারপরের ধাপ হল এটা কমতে থাকবে ,
তার রক্তে অক্সিজেনের লেভেল কমতে থাকবে ।
ম্যাটাবলিক এসিডোসিস হবে ,
বাচ্চা মারা যাবে ।

কিন্তু আমি বেঁচে যাব । B-) হাসপাতালের কিছু হবেনা ।

কিন্তু বিবেক ? বিবেক তো ছাড়বে না । ধ্যাত , এই বিবেক সাহেবা রে নিয়ে হয়েছে মহা যন্ত্রণা । বিবেক আফা, এত ভ্যাজাল কইরো না তো ।

ওরে মোর খোদা , আমার ম্যাডামের ঐতিহাসিক বাণীও দেখি ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বাজতে লাগল , কানের মধ্যে ।
যেন বসে আছি ঢাকা মেডিক্যালের মর্নিং সেশনে । সারা রাত জেগে চোখ ঢুলু ঢুলু । প্রফেসর ফারহানা দেওয়ান ম্যাডাম যেন তাজা গোলাপ । সুরভী ছড়িয়ে বলছেন ,
খবরদার এক্লাম্পসিয়ার পেসেন্ট রেফার্ড করবিনা । রোগী বাঁচলেও বাচ্চাটা মারা যায় । আমার ডাক্তারদের আমি প্যাসেন্ট ম্যানেজম্যান্টের জন্য ভালভাবেই তৈরী করেছি ।
এনাস্থেসিয়ার ডাক্তার , এসিস্টেন্ট সার্জন ডাক্তার , ওটি ব্রাদার , ওটি সিস্টার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আমি কি বাচ্চাটাকে এখানে ডেলিভারী করাব ?

"হুম । তোমরা আমার পাশে থাক , আমাকে হেল্প কর :|।" এটুকু মুখে বললাম ।
আর যা বললাম না তা হল , " আমি জেনে শুনে বাচ্চাটাকে মরতে দিতে পারিনা ।
বাচ্চার অবস্থা এখুনি ভাল না ।
।আমি অপেক্ষা করবনা নেক্সট চান্সের জন্য । মানে এই আশায় থাকব না এটা মরে গেলে মরে যাক পরে আবার বাচ্চা হবে ।
তার স্বামী রিকশাওয়ালা , এক্সিডেন্টে পা ভেঙ্গেছে । এই শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে আবার সে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে ।
আর কাজল রেখা ?
কাজল রেখার ১০ মাসের কষ্ট ।
আমি চাই সে পেয়েও হারানোর বেদনাটুকু না পাক ।
পেয়ে হারানোটা যথেষ্ট কষ্টের ।
তার সে কষ্ট সে কাউকে বোঝাতে পারবে না ।
আজীবন দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়াবে ।:| "

সো , আই নিড এ ভেরী গুড কাঊন্সেলিং ।
আমাকে রুগীকেও বাঁচাতে হবে , শিশুটিকে বাঁচাতে হবে আবার নিজেকে সেইভ করতে হবে ।
ডাবল রিস্ক বন্ডে সাইন হয়ে গেল বাচ্চা বাঁচানোর সু্যোগ টা নিতে ।
ছুরি ,কাঁচি্‌ নিয়ে আমি আর আমার এসিটেন্ট যোদ্ধার বেশে রেডি ।
বেবি মেনেজমেন্টের জন্য সাকার , অক্সিজেন , আম্বো ব্যাগ নিয়ে রেডী ওটি ব্রাদার । এনাস্থেসিয়ার ডাক্তার তাকে হেল্প করবেন । পিন পতন নিরবতা ওটিতে ।
পেসেন্টকে এনাস্থেসিয়া দিলেন ডাক্তার ,অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ।
লেয়ার বাই লেয়ার কেটে বাচ্চা পর্যন্ত পৌঁছে দেখি বাচ্চা যতটা ভেবেছি তার চেয়ে খারাপ আছে ।
বাচ্চা পুরো পায়খানায় ডুবে আছে । ডিস্ট্রেসে এনাল স্পিংটার ওপেন হয়ে এ অবস্থা ।
যখন সবুজ ঘন মিকোনিয়াম থেকে বাচ্চাটাকে তুলে আনতে হয় । আমার হচ্ছিল হাতটা আমার না , কোন শুভ শক্তির যা আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু অনুভব করতে পারছি ।


কিন্তু বাচ্চাতো কাঁদছেনা । না, কাঁদছে না । ওরা বেবী ম্যানেজ করতে এক পাশে নিয়ে গেল । আমরা অপেক্ষা করছি কিছু কান্নার শব্দ শুনার জন্য । সময়টা যেন অন্তহীন । অন্তহীন অপেক্ষার প্রহর , সেকেন্ডের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশগুলো যেন যুগ যুগ সময়কে ধ্বংস করে দ্রুত গতিতে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ।
ও শিশু , তোমাকে কাঁদতে হবে এবং সময় মত । তুমি দেরী করলে তো হবেনা । তুমি কি জান তোমার কত দায়িত্ব ? যা তুমি করতে পার পৃথিবীর আর কারো হাতে সে ক্ষমতা দেয়া হয়নি ।এ গুরু দায়িত্ব ছেড়ে তুমি কোথায় চলে যাচ্ছ ?

তোমাকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে । তোমার চিৎকারের সাথে তোমার ছোট্ট লাংস দুটি চালু না হলে অক্সিজেন নিয়ে লোহিত কণিকারা ছুটে যাবেনা তোমার নিউরণগুলোতে , আর স্থায়িভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ব্রেইনসেলগুলো ।

ওহ , সব রিসাসসিটেশন মেজার , ওরোফেরিঞ্জিয়াল সাকশন , নেজাল সাকশন , ওক্সিজেন , টেক্টাইল স্টিমুলেশন একে একে ব্যর্থ ।
প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার কোন উপায়ই কাজ করছেনা । মাউথ টু মাঊথ ব্রিদিং , আম্বো ব্যাগ , অক্সিজেন , চেস্ট কম্পেশন ইত্যাদি কতগুলো শব্দ ছাড়িয়ে কিছু কান্না শোনার জন্য আমার দিল সেদিকে পড়ে রইল। অপারেশন শেষ হয়নি তাই আমি মন খারাপ করে শেষ করছি ।

বাচ্চাটা কি মারা যাচ্ছে ? হুম গেলে ও যেতে পারে । ৩০ থেকে ৫০ ভাগ মানে প্রায় অর্ধেক শিশুই মারা যায় । তাহলে কি কোন আশা নেই ? বাচ্চাটাকে কী মরে যেতে দেখব ?

ওহ আল্লাহ , প্লিজ দয়া কর , প্লিজ সেইভ দ্য বেবী , প্লিজ । প্লিজ পারডন মি , এন্ড হেল্প দ্য বেবী । আমার সব পূণ্যগুলো তুমি নিয়ে যাও তবু বাচ্চাটাকে ফিরিয়ে দাও । আজগুবি প্রার্থনা শুনে আল্লাহ হয়ত হাসলেন
"আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারেনা ,যেহেতু প্রত্যেকের মেয়াদ নির্ধারিত । সুরা ইমরান ।"
গগন বিদারী চিৎকার করে কেঁদে উঠল বাচ্চাটা । বুকের মধ্যে আটকে থাকা বাতাস দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এল । সবাই হাসছে।

আমার চোখের কোনা চিকচিক করে উঠল । আমি মানুষ থেকে বেশী কিছু , আমি অমানুষ , আমাকে কাঁদলে চলবে না । ডাক্তার যখন হয়েছো চোখের পানি মুছতে পারো তবে আড়ালে । সবার সামনে না ।

তবে ধন্যবাদ জানাই আল্লাহ । অনেক ধন্যবাদ ।
তুমি কোথায়, তুমি কোথায় বলে প্রমাণ চাইব না । তুমি এখানে ছিলে , আমার ব্রেইনসেলে একটা সঠিক ডিসিশন নিতে , আমার হাতটা আমার ছিলনা যখন ঘন সবুজ থিক মিকোনিয়াম থেকে আমি তাকে তুলে আনি । তুমি প্রাণবায়ু ফেরত দিলে ।আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারেনা হ্যাঙ্কস আল্লাহ । একটা প্রান রক্ষায় আমাকে বা আমাদেরকে সিলেক্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

বাচ্চাটা কাঁদছে ,তার দুঃখে সবাই ব্যাপক আনন্দ প্রকাশ করছে । চারিদিকে উল্লাস ধ্বনি ।
আপা মেয়ে শিশু বলেই টিকে গেছে । ছেলে হলে কখন মরে যেত । ছেলে বাচ্চাগুলি এত কষ্ট সহ্য করতে পারেনা ।

ওটি খালা বিরস মুখে বললেন , সারা জীবনে আরও কত কষ্টের ভিতর দিয়া যাইতে হইব ।
হুম তা সত্য , বলেই সবাই হাসতে লাগল । আমি সহ । কিসে যে হাসবে আর কিসে বেদনা হত হবে ,বলা মুস্কিল । বিচিত্র ।
ওটি শেষ করে বেবীকে একটা একজামিনেশন করার জন্য নিয়ে আসতে বললাম ।
পাকা বুড়ি একটা , পিট পিট করে দেখছে আমাকে । বাচ্চাটা কপ করে আমার আঙ্গুল ধরে ফেলল , খুব আঁতেল কেউ বলবে এটা বাচ্চাদের গ্রাস্পিং রিফ্লেক্স , আমি যারপর নাই বিমোহিত হয়ে গেলাম ,




বাচ্চাটা একটু হাসল ... ওরে আমার আল্লাহ এই হাসিতে আমিতো একদম কাইত ।

বাচ্চাটাতো আমাকে আডেন্টিফাই করতে পেরেছে , এটা তার বন্ধুতের হাসি , কৃতজ্ঞতার হাসি । যে যা বলুক এটা হচ্ছে প্রাপ্তি যার জন্য আরো রুগীদের বাঁচানোর কাজে, হেল্প করা র জন্য আবার ও ঝাঁপিয়ে পড়া যায় ।

সমাপ্ত ।



সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ তালার । মহানবী মুস্তফা ( সাঃ ) কে অসংখ্য সালাম ।

পোস্ট উৎসর্গ >> ডাঃ সাজিয়া আফরিন ইভা , বারে বারে প্লেস করা পার্ট ২ এফ,সি,পি,এস গাইনীর স্টুডেন্ট , এরকম ই এক মা ও গর্ভস্থ শিশুর জীবণ বাঁচাতে বাসায় না খেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান ,রোগী বাঁচে কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতালে নৃশংস ভাবে খুন হন তিনি । সব ডাক্তার শোকে স্তব্ধ যায় এ ঘটনা মনে হলে । আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুণ ।

অশেষ ধন্যবাদ >> আমার নতুন ব্লগার বন্ধু মনিরা সুলতানা ,
আপা লিখছি আমি , কষ্ট করেছো তুমি । রাত জেগে বসে আছ এখন । অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম ।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা >> একজন আরমান কে । আমার লেখার ইচ্ছে ছিল ,কিন্তু শেষ পর্যন্ত লেখাটার জন্য সে বারে বারে নক করেছে । বুঝার উপযোগী করে লেখার জন্য একলাম্পসিয়া যথেষ্ঠ কঠিন একটা বিষয় । আসলে নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা । আমার কাছে যাই লিখতে চাই তাই কঠিন লাগে ।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০০
৬১টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×